এমপি বদি সমাচার-অবিলম্বে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এমপি আবদুর রহমান বদির অপকর্মের যেন শেষ নেই। মাস্তানি, চাঁদাবাজি, চোরাচালান, মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণসহ প্রায় সব ধরনের অপকর্মের অভিযোগই রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, এমপি হওয়ার আগেই তাঁর বিরুদ্ধে ২৩টি মামলা ছিল। আর এমপি হওয়ার পর সন্ত্রাসের দু-তিনটি মামলা ছাড়া বাকি সব মামলা থেকেই তিনি অব্যাহতি পেয়ে গেছেন! গত আড়াই বছরে তিনি সরকারি কর্মকর্তাসহ গণ্যমান্য অনেককেই স্বহস্তে পিটিয়েছেন।

উখিয়ার সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলামুর রহমান, কঙ্বাজার সদরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবদুর রহমান, কঙ্বাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল হাকিম, টেকনাফের মুক্তিযোদ্ধা হাজি মোস্তফা, কঙ্বাজার আইনজীবী সমিতির সদস্য ও বিশিষ্ট সংস্কৃতিকর্মী রাখাল মিত্র, বন বিট কর্মকর্তা মুজিবুর রহমান প্রমুখ তাঁর হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন। তাঁর হাত থেকে দলীয় কর্মীরাও রক্ষা পাননি। হোয়াইক্যংয়ের ছাত্রলীগ নেতা জসিমউদ্দিনকেও পিটিয়েছিলেন তিনি। সর্বশেষ পিটিয়েছেন সাবরাং হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মুফিজউদ্দিনকে। এক কথায়, তাঁর বিরুদ্ধাচরণ করলে কিংবা অপকর্মের প্রতিবাদ করলেই তাঁর হাতে কিংবা তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গদের হাতে লাঞ্ছিত হতে হয়। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারাও তাঁর স্বেচ্ছাচারিতায় ক্ষুব্ধ, কিন্তু মুখে কিছু বলার সাহস পান না। তার পরও টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শফিক মিয়া এবং উখিয়া আওয়ামী লীগের সভাপতি আদিলউদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলতে বাধ্য হয়েছেন, বদি শুধু দলের জন্য নয়, দেশের জন্যও এক ভয়ংকর ব্যক্তি। শুধু সন্ত্রাস-লুটপাট নয়, জঙ্গিবাদে মদদদানের গুরুতর অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। সেখানে তাঁর ছত্রচ্ছায়ায় 'মুসলিম এইড' নামের একটি এনজিও রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করছে। এনজিওটির বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের জঙ্গি তৎপরতায় মদদদানের অভিযোগ রয়েছে। সংস্থাটি ইন্দোনেশিয়া ও বসনিয়ায়ও জঙ্গি তৎপরতায় সহযোগিতা করছে বলে আন্তর্জাতিক প্রচারমাধ্যমে বহু খবর প্রকাশিত হয়েছে। যত দূর জানা যায়, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তথ্যও একই কথা বলে। আমরা জানি, আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বারবার জঙ্গি হামলা মোকাবিলা করতে হয়েছে। মৃত্যুর মুখ থেকেও তিনি আল্লাহর অশেষ রহমতে ফিরে এসেছেন। সেই আওয়ামী লীগের একজন এমপি কী করে জঙ্গিবাদে সহযোগিতাকারী একটি এনজিওকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেন! আওয়ামী লীগ কিংবা বর্তমান সরকারই বা কিভাবে তা মেনে নেয়!
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট যে জনপ্রিয়তা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল, সেই জনপ্রিয়তায় এখন অনেকটাই ভাটা পড়েছে। জনপ্রিয়তা হ্রাসের অনেক কারণের মধ্যে কয়েকটি হচ্ছে এমপিদের স্বেচ্ছাচারিতা, দখলবাজি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও লুটপাট। বিশেষ করে বদির মতো কয়েকজন এমপির অপকর্মের কারণে আওয়ামী লীগের প্রথম সারির অনেক নেতাও আজ লজ্জা বোধ করছেন। পত্রপত্রিকায় বিভিন্ন সময়ে এ নিয়ে বিস্তর লেখালেখি হয়েছে। কিন্তু অবাক ব্যাপার, বদি কিংবা এ ধরনের কোনো এমপির বিরুদ্ধে বর্তমান সরকার বা সংসদ এ পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি। কেন? তার কারণ আমাদের জানা নেই।
আমরা জানি, ইতিমধ্যে মহাজোট সরকারের পৌনে তিন বছর পেরিয়ে গেছে। তার অর্থ, আর সোয়া দুই বছর পর তাদের জনগণের আদালতে দাঁড়াতে হবে। জনগণের চোখ বন্ধ নয়; তারা দেখছে, শুনছে, জানছে। তারা তখন ঠিকই বুঝেশুনেই তাদের রায়টি দেবে। সেই রায়ে আওয়ামী লীগ হতাশ হলেও আশ্চর্যের কিছু থাকবে না।

No comments

Powered by Blogger.