রশীদপুর ক্ষেত্রে নতুন গ্যাস-দেশি কম্পানিকে শক্তিশালী করতে হবে

সম্ভাবনার আরেকটি দরজা উন্মোচিত হলো। দেশের ভূগর্ভস্থ সম্পদের ব্যাপারে নতুন আশার আলো জ্বালিয়েছে দেশের কম্পানি বাপেঙ্। রশীদপুর গ্যাসক্ষেত্রে বাপেঙ্রে ত্রিমাত্রিক জরিপ থেকে জানা গেছে এই ক্ষেত্রেরগ্যাসেরমজুদ।বাংলাদেশের জন্য এটা সর্বোচ্চ মজুদ। উত্তোলনযোগ্য ও সম্ভাব্য মিলিয়ে এই মজুদের পরিমাণ ৫.২ টিসিএফ।
প্রথমবারের মতো ত্রিমাত্রিক জরিপ পরিচালনা করে দেশের কম্পানি বাপেঙ্ আবার প্রমাণ করতে পেরেছে সক্ষমতা। এটাও বাংলাদেশের জন্য একটা বড় প্রাপ্তি।
রশীদপুর গ্যাসক্ষেত্রে গ্যাসের উত্তোলনযোগ্য ও সম্ভাব্য মজুদ দেশের জন্য একটা বড় প্রাপ্তি। দেশের ভূগর্ভস্থ সম্পদ, বিশেষ করে গ্যাসের পরিমাণ নিয়ে একটি নিশ্চিত অবস্থা তুলে ধরেছে বাপেঙ্। এর আগে ত্রিমাত্রিক জরিপের কাজ করানো হতো বিদেশি কম্পানিকে দিয়ে। কিন্তু বিদেশি কম্পানি এই কাজ করলে খরচ অনেক বেশি পড়ে। বাপেঙ্রে প্রকৌশলীরা এবার ত্রিমাত্রিক জরিপ করে নিজেদের সক্ষমতা প্রমাণ করেছেন। পাশাপাশি দেশের অর্থও বাঁচিয়ে দিয়েছেন। এর আগেও বাপেঙ্ জরিপকাজে সাফল্যের পরিচয় দিয়েছে। ১৯৬০ সালে আবিষ্কৃত রশীদপুর গ্যাসক্ষেত্রের এখন পর্যন্ত সাতটি কূপ খনন করা আছে। এর মধ্যে পাঁচটি থেকে গ্যাস তোলা হচ্ছে। বাপেঙ্রে এই জরিপের ফলে আগামী এক বছরের মধ্যে এই ক্ষেত্রটি থেকে প্রতিদিন ১০ কোটি ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা যেতে পারে। গ্যাসের মজুদ নির্ধারণে বাপেঙ্রে এই সাফল্য অনেক গুরুত্ব বহন করে। এর আগে এ জাতীয় জরিপে বিদেশি কম্পানির খরচ ছিল অনেক বেশি। সেদিক থেকে বাপেঙ্রে জরিপ অনেকটাই সাশ্রয়ী। অতীতে অনেক বিদেশি কম্পানির জরিপকাজে যে ব্যয় হয়েছে, সেদিক থেকে বাপেঙ্রে ব্যয় প্রায় অর্ধেক। এ ছাড়া জরিপে বিদেশি কম্পানি যেসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করত, কাজের শেষে সেগুলো তারা ফিরিয়ে নিয়ে যেত। কিন্তু বাপেঙ্রে জরিপে যে যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়েছে, তা দেশেই থেকে যাবে। ভবিষ্যতে এ জাতীয় কাজে ওই যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা যাবে। বিদেশি কম্পানি এ জাতীয় কাজে যে প্রযুক্তি ব্যবহার করে, বাংলাদেশের কম্পানি বাপেঙ্ও সেই একই প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে। ব্যবহার করা হয়েছে উপগ্রহভিত্তিক 'ট্র্যাকিং সিস্টেম'।
বাপেঙ্রে এই সাফল্য যে দেশেরই সাফল্য, সেটা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু এর পরও আমাদের দেশে গ্যাস খাতে নির্ভরতা বাড়ছে। দেশের মোট গ্যাসের অর্ধেকেরও বেশি এখন কিনতে হয় বিদেশি কম্পানির কাছ থেকে। অথচ কয়েক বছর আগেও উৎপাদনের ৬৮ ভাগ উৎপাদন করত দেশের কম্পানি। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, এখন দেশের মোট গ্যাসের ৫২ ভাগ বিদেশি কম্পানির হাতে। দেশি কম্পানিগুলো নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানোর পরও এই ক্ষেত্রে উন্নয়নের কোনো সুযোগ পায়নি। বাপেঙ্রে একের পর এক সফলতা থেকে এখন দেশি কম্পানিগুলোর দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। দেশের মাটির নিচে অনেক সম্পদই লুকিয়ে আছে। সেই সম্পদ দেশের কাজে লাগাতে হবে। তার আগে সম্পদ খুঁজে বের করতে হবে। দেশের প্রতিষ্ঠান যেহেতু নিজেদের সক্ষমতা প্রমাণ করতে পেরছে, তাই এখন এই প্রতিষ্ঠানকে প্রযুক্তিগত দিক থেকে ও অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করতে হবে। এটা করতে পারলে দেশের সম্পদ আহরণে বিদেশ-নির্ভরতা কমবে। পাশাপাশি সাশ্রয় হবে দেশের অর্থ। তবে সবার আগে দেশের প্রতিষ্ঠানকেই গ্যাসসহ বিভিন্ন খনিজ সম্পদ উত্তোলনের দায়িত্বে নিয়োজিত করার রাজনৈতিক ও সর্বোচ্চ পর্যায়ে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের নিশ্চয়তা থাকতে হবে। দেশবাসী সেই নিশ্চয়তারই অপেক্ষায় রয়েছে।


No comments

Powered by Blogger.