শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অব্যাহত-শিক্ষক সমিতির সভায় ধাক্কাধাক্কি, বিতণ্ডা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কর্মীদের মারধরে ইংরেজি বিভাগের ছাত্র জুবায়ের আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় করণীয় নিয়ে শিক্ষক সমিতির জরুরি সাধারণ সভা কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়েছে। গতকাল জহির রায়হান মিলনায়তনের সেমিনার কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রশাসনপন্থী শিক্ষকদের সঙ্গে প্রশাসনবিরোধী আওয়ামীপন্থী, বিএনপিপন্থী ও নির্দলীয় শিক্ষকদের বাগিবতণ্ডা, ধাক্কাধাক্কি এবং পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের পর আজ সকাল ১০টা পর্যন্ত সভা মুলতবি ঘোষণা করা হয়।


জুবায়েরের মৃত্যুর ঘটনার পেছনের ব্যর্থতার বিষয়ে প্রশাসনবিরোধী আওয়ামীপন্থী একাধিক শিক্ষক বর্তমানে প্রশাসনিক বিভিন্ন পদে অযোগ্য শিক্ষকদের দায়িত্ব দেওয়া, দূরদর্শিতার অভাব এবং প্রশাসনের নানা ক্ষেত্রে বিতর্কিত পদক্ষেপ গ্রহণ করাকে দায়ী করেছেন। তাঁরা বলেন, এসব কারণে অসুস্থ ছাত্ররাজনীতির শিকার হয়ে নির্মমভাবে ছাত্রলীগের কর্মীদের হাতে শুধু জুবায়েরকেই প্রাণ দিতে হয়নি, দলীয় শিক্ষকদের কাছেও বিতর্কিত হয়ে বর্তমান প্রশাসন গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে।
এদিকে গতকাল ক্যাম্পাসে শোক র‌্যালি ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া জুবায়েরের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আজ ‘বিশ্ববিদ্যালয় দিবস’-এর সব কর্মসূচি স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
শিক্ষক সমিতির একাধিক সদস্য সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষক সমিতির সভাপতি এ এ মামুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিভিন্ন বিভাগের শতাধিক শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। সভায় প্রথম বক্তা বামঘেঁষা শিক্ষক মঞ্চের নাসিম আকতার হোসাইন ছাত্রদের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা স্বীকার করে প্রক্টরের পদত্যাগের দাবি জানান। এর পরই প্রশাসনপন্থী শিক্ষক নূরুল আলম প্রশাসনের গৃহীত পদক্ষেপে সন্তোষ প্রকাশ করে সমিতির সভাপতির পক্ষ থেকে উপাচার্যকে সাধুবাদ না দেওয়ায় সমালোচনা করে বক্তব্য দেন। সভাপতি এরপর নির্দলীয় শিক্ষক এ কে এম শাহনেওয়াজকে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দিয়ে নূরুল আলমের বক্তব্যের বিরোধিতা করেন। এ সময় নূরুল আলম ও সমিতির সহসভাপতি প্রশাসনপন্থী আবুল খায়ের বক্তব্য দিতে চাইলেও সভাপতি এ কে এম শাহনেওয়াজকে বক্তব্য শুরু করতে বলেন। এতে অধ্যাপক নূরুল আলম, মো. খবির উদ্দিন ও আবদুল মান্নান চৌধুরী ক্ষুব্ধ হয়ে সভাপতির মঞ্চে উঠে পড়েন। প্রশাসনপন্থী অন্য শিক্ষকেরা এ সময় মঞ্চের দিকে এগিয়ে এলে প্রশাসনবিরোধী আওয়ামীপন্থী, বিএনপিপন্থী ও নির্দলীয় শিক্ষকদের মধ্যে বাগিবতণ্ডা ও ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মো. শরীফ উদ্দিনসহ বয়োজ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এরপর আবার প্রক্টর আরজু মিয়াসহ ১২ জন শিক্ষক প্রশাসনের নেওয়া পদক্ষেপের পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি দিয়ে বক্তব্য দেন। বেলা একটার দিকে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত সভা মুলতবি ঘোষণা করা হয়।
সমিতির সম্পাদক মো. শরীফ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষকদের এ ধরনের আচরণ অনাকাঙ্ক্ষিত হলেও বিচ্ছিন্ন ঘটনা। সময়স্বল্পতার কারণে সব শিক্ষক বক্তব্য দিতে না পারায় সভা মুলতবি করা হয়েছে।
এদিকে, গতকাল দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশের পাদদেশ থেকে শোক র‌্যালি বের করেন শিক্ষার্থীরা। শোক র‌্যালিতে বিভিন্ন বিভাগের ছয় শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন। বেলা একটার দিকে শিক্ষার্থীরা শহীদ মিনার চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করেন। সমাবেশে বক্তব্য দেন সৌমিত জয়দীপ, মাহি মাহফুজ, মৈত্রী বর্মণ, অনাবিল সুইন, আবিদ আজাদ প্রমুখ। বক্তারা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছাত্রদের দেশের প্রচলিত আইন অনুসারে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের আধুনিকায়ন, প্রক্টর ও নিরাপত্তা কর্মকর্তার পদত্যাগের দাবি জানান। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ারও ঘোষণা দেওয়া হয় সভায়।

No comments

Powered by Blogger.