মামলা প্রত্যাহার সাপেক্ষে সাবিনকোর অর্থ ফেরত দেবে সরকার by আবুল কাশেম

স্টার্ন ব্যাংকে (অবলুপ্ত বিসিসিআই) স্থায়ী আমানত হিসেবে সৌদি বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল ইনভেস্টমেন্ট কম্পানির (সাবিনকো) ৭৬ লাখ ৩২ হাজার ৪৯৭ ডলার ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। দীর্ঘদিন ধরে বিষয়টি অনিষ্পন্ন থাকায় সৌদি আরবে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় সম্প্রতি সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আদালতে বিচারাধীন থাকা সাবিনকোর মামলা প্রত্যাহার সাপেক্ষে ওই অর্থ পরিশোধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে


ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল)। সাবিনকো মামলা প্রত্যাহার করলে ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড ওই অর্থ পরিশোধ করবে। তবে সাবিনকো এখনো মামলা প্রত্যাহার করেনি।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, গত জুলাই মাসে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সৌদি আরব সফরে যান। ওই সময় সৌদি সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে দেশটির পক্ষ থেকে সাবিনকোর অর্থ ফেরত দেওয়ার বিষয়টি উত্থাপন করেন। এ ছাড়া সাবিনকোর চেয়ারম্যান ড. আবদুল্লাজিজ এম আল-তুকরিও ওই টাকা ফেরত দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে অর্থমন্ত্রীকে চিঠি পাঠিয়েছিলেন।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. শফিকুর রহমান পাটোয়ারীর সভাপতিত্বে বাংলাদেশ ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, সাবিনকো ও বিডিবিএলের প্রতিনিধিরা এক বৈঠকে বিষয়টি পর্যালোচনা করেন। বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন থাকায় উভয়পক্ষের সমঝোতার ভিত্তিতে তা নিষ্পত্তির পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে ওই সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বাংলাদেশি টাকায় সাবিনকোর স্থায়ী আমানতের পরিমাণ প্রায় ৫৮ কোটি টাকা।
সভায় সিদ্ধান্ত হয়, 'ব্যাংক অব ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ইন্টারন্যাশনাল (ওভারসিজ) লিমিটেড (পুনর্গঠন) স্কিম, ১৯৯২ অনুযায়ী প্রাক্তন শিল্প ব্যাংক (বর্তমানে বিডিবিএল)-এর পাওনা টাকা পরিশোধ করেছে। বর্তমান ক্ষেত্রে সাবিনকো কর্তৃক মামলা প্রত্যাহার করা হলে বিডিবিএল অনুসৃত স্কিম অনুসরণক্রমে ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড সাবিনকো পাওনা টাকা পরিশোধ করবে মর্মে আলোচনাকালে ইস্টার্ন ব্যাংক ও সাবিনকো একমত পোষণ করেছে।'
ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আলী রেজা ইফতেখার গতকাল কালের কণ্ঠকে জানান, সাবিনকো এখনো মামলা প্রত্যাহার করেনি। তারা আগে মামলা প্রত্যাহার করুক। তারপর অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন থাকায় এ বিষয়ে এর বেশি কিছু বলতে চাননি ইস্টার্ন ব্যাংকের এই শীর্ষ নির্বাহী।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, মন্ত্রী সৌদি আরব সফর শেষে দেশে ফিরে এসে এক মাসের মধ্যে সাবিনকোর পাওনা অর্থ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসনের নির্দেশ দেন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে। বাংলাদেশ ব্যাংকও জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ক আরো জোরদার করতে সাবিনকোর অর্থ পরিশোধ করা জরুরি।
বাংলাদেশের ব্যাংক অব ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ইন্টারন্যাশনাল (ওভারসিজ) লিমিটেড (বিসিসিআই) ব্যাংকটি ১৯৯১ সালের জুলাই মাসে দেউলিয়া হয়ে যায়। তখন ওই ব্যাংকের আমানতকারীদের অর্থ পরিশোধে একটি পুনর্গঠন স্কিম গঠন করে সরকার। তারই অংশ হিসেবে জন্ম নেয় ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড। তখন থেকেই অবলুপ্ত বিসিসিআইয়ের সব আমানত ও ঋণের দায়িত্ব নেয় ইস্টার্ন ব্যাংক। ফলে বিসিসিআইতে সাবিনকোর স্থায়ী আমানতটিও ইস্টার্ন ব্যাংকে স্থানান্তরিত হয়।
সাবিনকো উন্নয়নমূলক আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এফডিআই) ও বিনিয়োগকারী কম্পানি। সৌদি আরব ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ মালিকানায় কম্পানিটি গড়ে ওঠে। দুই দেশের সরকারের মধ্যে স্বাক্ষরিত এক প্রটোকলের আওতায় ও বাংলাদেশ কম্পানি আইন ১৯১৩-এর অধীন ১৯৮৪ সালের ২৪ জুন কম্পানিটি গড়ে ওঠে। দেশের শিল্প ও কৃষিভিত্তিক শিল্পে বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে গড়ে ওঠা সাবিনকোর সদর দপ্তর ঢাকায়। ১৯৮৬ সালে কম্পানিটি কার্যক্রম শুরু করে। পরে আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন ১৯৯৩-এর অধীন ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের লাইসেন্স নেয় কম্পানিটি। সাবিনকোর পরিশোধিত মূলধন ছয় কোটি ডলার। সৌদি সরকার ও বাংলাদেশ সরকারের সমান অংশীদারত্ব রয়েছে এতে।

No comments

Powered by Blogger.