দেশপ্রেম ও দেশাত্মবোধ by জহির উদ্দিন বাবর

'স্বদেশকে ভালোবাসা ইমানের অঙ্গ'_ এই বাণী থেকেই অনুধাবন করা যায় দেশের প্রতি আত্মিক প্রেরণা ও ভালোবাসাকে ইসলাম কতটা ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখে। দেশপ্রেম একটি বহুমাত্রিক অনুভূতির বাহ্যিক প্রকাশ। দেশের প্রতি যার অন্তরে ভালোবাসা রয়েছে দেশের মঙ্গল কামনা ও মঙ্গল সাধন তার সহজাত বিষয়। প্রকৃত দেশপ্রেমিক দেশের জন্য সর্বস্ব বিলিয়ে হলেও নিজের দেশপ্রেমের প্রমাণ পেশ করে। দেশ তার একজন সন্তান এবং নাগরিকের


কাছে এ ধরনের ত্যাগ ও নিবেদনই প্রত্যাশা করে।অনুকূল পরিবেশে দেশের জন্য দরদ দেখাতে পারেন সবাই। কিন্তু প্রতিকূল পরিবেশে দেশের জন্য সামান্য কিছু করতে পারাও অনেক বড় বিষয়। চরম প্রতিকূল পরিবেশে হজরত নবী করিম (সা.) যখন মদিনায় হিজরত করে যাচ্ছিলেন, তখন তিনি বারবার ঘুরে মক্কার প্রান্তর, পাহাড়, বৃক্ষের দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন, 'হে মক্কা! আমি তোমাকে ভালোবাসি।' এই আবেগময় বেদনাকাতর অভিব্যক্তি ছিল আমাদের প্রিয় নবীর। দশ বছর পর যখন প্রায় বিনাযুদ্ধে তিনি বিজয়ীর বেশে মক্কায় প্রবেশ করেন, তখনও তার মহানুভব হৃদয়ে ছিল স্বদেশে ফিরে আসার কোমল ও পবিত্রতাপূর্ণ এক আকুতি। নিজের দেশের মাটিতে বিজয়ীর বেশে ফিরে এসে প্রতিশোধহীনতার এক আকাশ-উঁচু চেতনার ফরমান তিনি উচ্চারণ করেন। তিনি বলেছিলেন, 'তোমাদের প্রতি আজ কোনো প্রতিশোধ নেই।' দীর্ঘ তের বছর শত জুলুমে, উৎপীড়নে বিদ্ধ হওয়ার পরও দেশটি ফিরে পাওয়ার পর স্বদেশবাসীর প্রতি এই অভিব্যক্তি ও সর্বোচ্চ সদাচার ছিল একজন মহান দেশপ্রেমিকের। দেশ ফিরে পাওয়ার আনন্দে তিনি নিজের ব্যক্তিগত সব আবেগ-ক্ষোভ ঝেড়ে ফেলেছিলেন।
ইসলামে দেশপ্রেম ও দেশাত্মবোধকে সবকিছুর ঊধর্ে্ব স্থান দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। নববী আদর্শে গড়া সাহাবায়ে কেরামও স্বদেশকে খুব ভালোবাসতেন। হিজরতের পর মদিনায় হজরত আবু বকর (রা.) ও হজরত বেলাল (রা.) জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন। অসুস্থ অবস্থায় তাদের মনে-প্রাণে স্বদেশ মক্কার স্মৃতিচিহ্ন জেগে উঠেছিল। তারা জন্মভূমি মক্কার দৃশ্যাবলি স্মরণ করে কবিতা আবৃত্তি করতে লাগলেন। এমতাবস্থায় নবী করিম (সা.) সাহাবিদের মনের এ দুরবস্থা দেখে প্রাণভরে দোয়া করলেন, 'হে আল্লাহ! আমরা মক্কাকে যেমন ভালোবাসি, তেমনি তার চেয়েও বেশি মদিনার ভালোবাসা আমাদের অন্তরে দান করুন।' (বুখারী)
ইসলামের আলোকে দেশপ্রেম ও দেশাত্মবোধ মানুষকে স্বদেশ রক্ষায় উদ্বুদ্ধ করে। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌম রক্ষায় দেশপ্রেমিক নাগরিক নিজের প্রাণ বিসর্জন দিতেও কুণ্ঠাবোধ করে না। যুগে যুগে দেশপ্রেমিক নাগরিকরা নিজের সর্বস্ব দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন ও সুরক্ষার আন্দোলন করে গেছেন। বিশেষত যাদের ধর্ম ইসলাম, বিশ্বাসে যারা শেষ নবীর অনুসারী তাদের কাছে দেশ ও জাতির জন্য আত্মত্যাগ এবং বিসর্জনের দৃষ্টান্তে ইতিহাসের পাতা ভরপুর। নিজ দেশের ওপর আঘাত এলে আদর্শ ও বিশ্বাসের ধারকরাই সর্বপ্রথম প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন। ইসলামের প্রেরণা যাদের ভেতরে কাজ করে তারা দেশ ও জাতির যে কোনো দুর্দিনে সর্বাত্মক বিসর্জনের মানসিকতা পোষণ করেন।
দীর্ঘ সংগ্রাম ও চড়ামূল্যে অর্জিত আমাদের প্রিয় বাংলাদেশের স্বাধীনতার বয়স চার দশক পূর্ণ হয়েছে। একটি ভূখণ্ডের অধিকার লাভ করা অনেক গৌরবের বিষয়। শুধু পরাধীনতাই বলে দেয় স্বাধীনতা যে কত মূল্যবান সম্পদ। স্বাধীনতা আল্লাহর বিশেষ নেয়ামতও বটে। আল্লাহর দেওয়া এই নেয়ামত আমাদের প্রিয় স্বাধীনতাকে টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব আমাদের।
zahirbabor@yahoo.com

No comments

Powered by Blogger.