প্রদর্শনী-পুরনো গাড়িতে ইতিহাস

কেকটি গাড়ি যেন একেকটি সময়ের স্মৃতিময় ইতিহাস বুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। যেন ইতিহাস কথা বলছে। হিলম্যান, রোভান, মরিস, ফিয়াট, সানবিম টেলবোট, আলফা রোমিওসহ মিষ্টি সব নাম। স্মৃতিবিজড়িত এসব গাড়িকে হাতে ছুঁয়ে আদর করতে ইচ্ছে করে।অস্টিন-৭-১৯২৩, ঢাকা-ক-৫৫২৪ নম্বরের গাড়িটির দিকে আঙুল উঁচিয়ে বিস্ময়ভরা চোখে ঢাকা ক্লাবের সদস্য মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান সানি বললেন, 'এই গাড়িটাতে নাটোরের রানি
চড়তেন। ৪৭-এর দেশ ভাগের সময় রানি কলকাতা চলে গেলে বগুড়ার এক ব্যক্তি গাড়িটি কেনেন। এরপর ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি আর্মি তাঁর কাছ থেকে গাড়িটি কেড়ে নেয়। স্বাধীনতার পর গাড়িটি খুঁজে পাওয়া যায়। ১৯৮৪ সালে সেটি মেরামত করা হয়। আমি এক ব্যক্তির কাছ থেকে ওটা কিনে নিই। এ ছাড়া ধোলাইখাল থেকেও অনেক গাড়ি সংগ্রহ করা হয়েছে।'
কালো একটি গাড়ির দিকে আঙুল তুলে তিনি আরো বললেন, 'আর ওই যে চট্টগ্রাম-ক ২১২৩, শেভরোলেট ১৯৫৬ সালের কালো গাড়িটা দেখছেন, সেটি ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান যখন ক্ষমতা নেন তখন তিনি ব্যবহার করতেন। এরপর মুক্তিবাহিনী হাইজ্যাক করে, পরে গাড়িটি বন বিভাগের কাছে আসে। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর চট্টগ্রাম গেলে গাড়িটি ব্যবহার করতেন। এরপর জিয়াউর রহমান প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর চট্টগ্রাম এলে তিনিও গাড়িটি ব্যবহার করতেন। পাকিস্তানি আর্মির গুলির আঘাতে গাড়িটির বাঁ পাশের কাচ ভেঙে যায়।'
আরেক গাড়িসংগ্রাহক ঢাকা ক্লাবের সদস্য মাহমুদ ফারুক বলেন, ফিয়াট-কুমিল্লা-ক-১১৩ গাড়িটি কুমিল্লার ক্ষিতি জমিদার পরিবারের গাড়ি। প্রদর্শনীর দুটি মোটরবাইকের একটি (হার্লি ডেভিটসন-ঢাকা এ-১০৮) ব্রিটিশ আর্মিদের। ব্রিটিশ শাসনের অবসান হওয়ার পর গাড়িটি চলে আসে পাকিস্তানি আর্মির দখলে। তারা বিতাড়িত হওয়ার পর গাড়িটি চলে আসে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কাছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা ক্লাবের শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে 'দি ওল্ড কার ক্লাব অব বাংলাদেশ' শীর্ষক তিন দিনব্যাপী পুরনো গাড়ির প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয় ঢাকা ক্লাব প্রাঙ্গণে।
প্রদর্শনীতে ২৫টি গাড়ি স্থান পায়। যেখানে ১৯২৩ সাল থেকে ২০১১ সালের গাড়ি আছে।
আয়োজকরা জানান, প্রদর্শনীর গাড়িগুলো ছাড়াও ক্লাবের ভেতরে আরো ২০০ গাড়ি রয়েছে। এর মধ্যে ৫৪টি গাড়ি মাহমুদ ফারুকের এবং ৭৫টি সানির। মার্চ মাসে শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে এসব গাড়ির প্রদর্শনী হবে।
আয়োজকরা জানান, এ পর্যন্ত তাঁরা ১০টি প্রদর্শনী করেছেন। বিক্রির জন্য নয়। নতুন প্রজন্মকে ইতিহাস সম্পর্কে জানানোর জন্যই এ আয়োজন। ভবিষ্যতে এসব গাড়ি নিয়ে জাদুঘর করা হবে। ব্রিটেন-আমেরিকা থেকে প্রচুর অফার আসে গাড়িগুলো কেনার জন্য। পৃথিবীর কোনো দেশে এসব গাড়ির ট্যাঙ্ নেওয়া হয় না। কিন্তু এখানে মোটা অঙ্কের ট্যাঙ্ গুনতে হচ্ছে। সরকারের কাছে এসব গাড়ির জন্য ট্যাঙ্ ফ্রি রাখার দাবি জানানো হয়েছে।
১৯৮৪ সালে দি ওল্ড কার অব বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়। সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত প্রদর্শনী খোলা থাকবে। প্রদর্শনী চলবে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

No comments

Powered by Blogger.