ই-এশিয়া সম্মেলন উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী-তথ্যপ্রযুক্তির বিভিন্ন ক্ষেত্রে তরুণদের দক্ষ করা হবে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর সরকার দেশের তরুণ প্রজন্মকে তথ্যপ্রযুক্তির বিভিন্ন শাখায় দক্ষ করে প্রযুক্তিভিত্তিক মানবসম্পদে পরিণত করতে চায়। দেশে-বিদেশে এ ধরনের জনশক্তির প্রচুর চাহিদা রয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার কম্পিউটার মাউসে ক্লিক করে পঞ্চম ই-এশিয়া আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির আওতায় ২০১২ সালের


মধ্যে দেশে ২০ হাজার মাল্টিমিডিয়া শ্রেণীকক্ষ প্রতিষ্ঠা করা হবে। এরই মধ্যে এক হাজার ৬০০ মাল্টিমিডিয়া শ্রেণীকক্ষ চালু করা হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান।'ডিজিটাল দেশ বিনির্মাণ' প্রতিপাদ্য নিয়ে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় তথ্যপ্রযুক্তি প্রদর্শনীর পঞ্চম এ আসর। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল, বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং ভারতের সেন্টার ফর সায়েন্স ও ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ যৌথভাবে তিন দিনের এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে। ইউএনডিপির অর্থায়নে পরিচালিত অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রাম এতে সহায়তা দিচ্ছে।
বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে আন্তর্জাতিক আইসিটি বিশেষজ্ঞ সজীব ওয়াজেদ জয়, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব শেখ ওয়াহিদুজ্জামান, ভারতের ন্যাশনাল ই-গভর্ন্যান্স অ্যান্ড আইসিটি ডিপার্টমেন্টের প্রেসিডেন্ট অজয় সনি ও ভারতের সেন্টার ফর সায়েন্সের প্রধান এন কে নারায়ণন, জিপিআইটির প্রধান নির্বাহী পিটার ডিনডিয়াল বক্তব্য দেন।
২০১২ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার 'রূপকল্প'র কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার মানবসম্পদ উন্নয়ন, জনসম্পৃক্ততা বৃদ্ধি, জনসেবা ও বাণিজ্যে তথ্যপ্রযুক্তি প্রয়োগ_এ চারটি বিষয় অগ্রাধিকার দিচ্ছে। 'কম্পিউটার সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে এনে দিতে কম্পিউটার সামগ্রীর ওপর আমদানি শুল্ক ও কর প্রত্যাহার করা হয়েছে' উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আমরা নতুন প্রজন্মকে তথ্যপ্রযুক্তিতে অভ্যস্ত করে তুলছি। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্য পুস্তকগুলো নিয়ে ই-বুক তৈরি করেছি, যা পরবর্তী সময়ে গবেষকদেরও কাজে লাগবে।'
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক এবং দেশের বিভিন্ন স্কুল-কলেজে তিন হাজার আইসিটি ল্যাব স্থাপন করেছে। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের কম দামে 'দোয়েল' ল্যাপটপ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং এতে তৃণমূলের জনগণেরও তথ্য প্রাপ্তি সহজ হবে। শেখ হাসিনা আরো বলেন, 'আমরা আইসিটি অ্যাক্ট-২০০৯ ও আইসিটি নীতি প্রণয়ন করেছি এবং একটি হাইটেক পার্ক (প্রযুক্তি পার্ক) স্থাপনের কাজ শুরু করেছি।'
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মোট সাড়ে চার হাজার ইউনিয়ন পরিষদে ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্র চালু হয়েছে। এসব তথ্যকেন্দ্র বিপুলসংখ্যক কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি জনগণের তথ্য পাওয়ার অধিকারকে সহজলভ্য করেছে।
বাংলাদেশ হবে ভবিষ্যতের আইসিটি ও আউটসোর্সিং হাব উল্লেখ করে সজীব ওয়াজেদ জয় তাঁর বক্তব্যে বলেন, 'বাংলাদেশ এখন আউটসোর্সিং ব্যবসায় আন্তর্জাতিকভাবে সুপরিচিত। তিন বছর আগেও বাংলাদেশকে এ খাতে কোনো দেশই চিনত না। এ খাতে বাংলাদেশ দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। তাই ডিজিটাল বাংলাদেশ কোনো অর্থেই অসম্ভব নয় বরং এটা হবে বাস্তব অর্জন।' সজীব ওয়াজেদ জয় প্রধানমন্ত্রীর ছেলে।
বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বলেন, 'বাংলাদেশের কৃষকরা এখন মোবাইল ফোনে কৃষিতথ্য সেবার সুফল ভোগ করছেন। এখন আর চাইলেও আইসিটির এ জোয়ার বাধা মানবে না। স্বাধীনতার ৪০ বছরে ই-এশিয়ার এ জয়গান দিয়েই বাংলাদেশের ডিজিটাল যাত্রার শুভ সূচনা হোক।
অনুষ্ঠানে প্রদর্শনীর প্লাটিনাম স্পন্সর জিপিআইটির প্রধান নির্বাহী পিটার ডিনডিয়াল বলেন, সরকারের যেকোনো উদ্যোগের সঙ্গে জিপিআইটি কাজ করবে। সরকারি সহায়তা পেলে জিপিআইটি ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের অন্যতম সহায়ক শক্তি হিসেবে নিরলস কাজ করতে প্রস্তুত বলে তিনি জানান।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের আগে বাংলাদেশের তৃণমূল পর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তির বিস্তার নিয়ে পাঁচ মিনিটের একটি প্রামাণ্যচিত্র উপস্থাপন করা হয়। পরে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মেলনের উদ্বোধন এবং একটি স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত করেন। এরপর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে স্থাপিত বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন।
আগামীকাল রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রদর্শনী চলছে। শিক্ষার্থীরা পরিচয়পত্র প্রদর্শন সাপেক্ষে এবং অন্যান্য পেশাজীবী ভিজিটিং কার্ড প্রদর্শন সাপেক্ষে বিনা মূল্যে প্রবেশ করতে পারবেন। এ আয়োজনের প্লাটিনাম স্পন্সর জিপিআইটি, গোল্ড স্পন্সর হুওয়ায়ে, গোল্ড ইন্টারনেট স্পন্সর কিউবি, সিলভার স্পন্সর সিসকো, ট্র্যাক স্পন্সর স্যামসাং ও ক্যাটালিস্ট, নলেজ পার্টনার ব্র্যাক ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়। অনুষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ আয়োজনগুলো টেলিভিশন ও ওয়েবে সরাসরি সমপ্র্রচার করা হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.