শাহজালাল সার কারখানা প্রকল্প একনেকে অনুমোদন

দেশের ক্রমবর্ধমান সারের চাহিদা মেটাতে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে সরকার 'শাহজালাল সার কারখানা' নামে একটি ইউরিয়া সার কারখানা স্থাপন করবে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) প্রকল্পটি অনুমোদন করেছে। শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) গতকাল এ অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা সভায় সভাপতিত্ব


করেন। বৈঠকে ৬ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা ব্যয়সংবলিত ৮টি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। এর মধ্যে ২ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল এবং ৪ হাজার ৯ কোটি টাকা প্রকল্প সাহায্য থেকে জোগান দেওয়া হবে।
জানা যায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে চীন সরকার প্রকল্প ব্যয়ের ৭০ শতাংশ বা তিন হাজার ৯৮৬ কোটি টাকা ২ শতাংশ সুদে ঋণ সহায়তা হিসেবে প্রদান করবে। পাঁচ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ২০ বছরে এ ঋণ পরিশোধযোগ্য। সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে বাকি অর্থের জোগান দেওয়া হবে। একটি চীনা ঠিকাদারি কোম্পানি ২০১২ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।
জানা গেছে, ফেঞ্চুগঞ্জে বর্তমানে ৫০ বছরের বেশি পুরনো একটি সার কারখানা রয়েছে। যন্ত্রপাতি অতি পুরনো ও জরাজীর্ণ হওয়ায় এর পরিচালনা ব্যয়বহুল ও অলাভজনক হয়ে পড়েছে। এটি বন্ধ করে এর জায়গায় শাহজালাল ফার্টিলাইজার নামে নতুন একটি সার কারখানা স্থাপন করা হবে। বাস্তবায়ন শেষে কারখানা থেকে দৈনিক ১ হাজার ৭৬০ টন সার উৎপাদন হবে। এর ফলে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে ইউরিয়ার ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে কৃষকদের মাঝে সুলভ মূল্যে সার সরবরাহ করা যাবে।
একনেক সভায় সিলেট ও মৌলভীবাজারের নতুন এলাকা গ্যাস সংযোগের আওতায় আনা এবং শাহজালাল গ্যাস কোম্পানির উচ্চ চাপের নেটওয়ার্ক আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে ৯১ কোটি টাকা ব্যয়ে 'সিলেট গ্যাস ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক আপগ্রেডেশন' প্রকল্পটি অনুমোদন করা হয়। প্রকল্পের মাধ্যমে সিলেটের ওসমানীনগর, বালাগঞ্জ ও বিশ্বনাথ এবং মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলায় গ্যাস সরবরাহ করা হবে। রাষ্ট্রীয় তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদন কোম্পানি বাপেক্সের কারিগরি দক্ষতা বাড়াতে সভায় অপর একটি প্রকল্পের সংশোধন অনুমোদন করা হয়। প্রকল্পের আওতায় সেমুতাং ফিল্ডের গ্যাস চট্টগ্রামের রিং মেইনে সরবরাহের লক্ষ্যে ১০ ইঞ্চি ব্যাসের ৬৫ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি সঞ্চালন পাইপলাইন ইতিমধ্যে স্থাপন করা হয়েছে। এর ফলে চট্টগ্রাম এলাকায় গ্যাসের চাহিদা ও সরবরাহের ঘাটতি কমবে। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৩২৩ কোটি টাকা।
সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) একে খন্দকার সাংবাদিকদের বলেন, সভায় ৬ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা ব্যয়সংবলিত ৮টি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। ব্যয়ের ২ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল এবং ৪ হাজার ৯ কোটি টাকা প্রকল্প সাহায্য থেকে মেটানো হবে। পরিকল্পনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব ভূঁইয়া সফিকুল ইসলাম এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
মন্ত্রী বলেন, অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প ৬৯ কোটি টাকা। ১৫৫ কোটি টাকায় বাস্তবায়ন করা হবে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর সেবা কার্যক্রম ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার উন্নয়ন সংশোধিত প্রকল্প। বাংলাদেশ টেলিভিশনের চট্টগ্রাম কেন্দ্রের আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে ৩৮ কোটি টাকায়। ১৬৪ কোটি টাকায় বাস্তবায়ন করা হবে শেরেবাংলা নগরে সংসদ সচিবালয়ের কর্মচারীদের জন্য ৪৪৮টি ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প এবং আশুগঞ্জ-বাখরাবাদ লাইনের গ্যাস সঞ্চালন ক্ষমতা শক্তিশালীকরণ প্রকল্পটিতে ব্যয় হবে ৭৪৩ কোটি টাকা। জানা যায়, বৈঠকে পরিকল্পনামন্ত্রী ছাড়াও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনসহ একনেকের অন্য সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যবৃন্দ, মন্ত্রণালয়ের সচিববৃন্দ এবং সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.