'দীর্ঘস্থায়ী দারিদ্র্যের' বিরুদ্ধে লড়ছে রুবিনা-ইকবালরা

পাকিস্তানের রুবিনা নাজের (৩৩) দেহে চার বছর আগে এইচআইভি (এইডস রোগের জন্য দায়ী ভাইরাস) ধরা পড়ে। মাদকাসক্ত প্রথম স্বামীর কাছ থেকে এ জীবাণু সংক্রমিত হয় তাঁর দেহে। ওই স্বামী মারা যাওয়ার এক বছর পর বিষয়টি ধরা পড়ে। এইচআইভি পজিটিভ প্রমাণিত হওয়ার পরপরই রুবিনার জীবনে নেমে আসে 'সর্বনাশ'। শ্বশুরবাড়ি থেকে তাঁকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। তাঁর চার সন্তানকেও আটকে রাখে তারা। তাঁকে পাপী হিসেবে বিবেচনা করতে শুরু
করে সবাই। বাবার বাড়িতে আশ্রয় পেলেও তাঁর খাওয়া-পরা সবই আলাদা করে দেওয়া হয়। তবে এইচআইভি আক্রান্তদের সাহায্য করছে এমন একটি প্রতিষ্ঠান (এনজিও) রুবিনার দিকে হাত বাড়ায়। কাজের সুযোগ করে দেয়। সেখানেই পরিচয় হয় বর্তমান স্বামী ইকবালের সঙ্গে।
পরিহাসের বিষয়, ইকবালও ছিলেন এইচআইভি আক্তান্ত। বন্ধুদের সঙ্গে মাদক নিতে গিয়ে ১০ বছর আগে প্রাণঘাতী ভাইরাসে আক্রান্ত হন তিনি। ভাইয়েরা বাড়ি থেকে বের করে দেয় তাঁকে। তিন বছর পর ওই এনজিওর সহায়তার তাঁর চিকিৎসা শুরু হয়। স্ত্রী রুবিনার সঙ্গে মিলে এখন এই প্রতিষ্ঠানেই কাজ করছেন তিনি।
রুবিনা ও ইকবালের গল্পের মোড় ঘুরলেও এশিয়ায় এইচআইভি আক্রান্তদের বেশির ভাগেরই ভাগ্যে ঘটে অনিবার্য 'সর্বনাশ'। সামাজিক ও আর্থিকভাবে নিগৃহের শিকার হন তাঁরা। বিশ্ব এইডস দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) গতকাল বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে জানায়, এশিয়ার এইচআইভি আক্রান্ত পরিবারগুলো 'দীর্ঘস্থায়ী দারিদ্র্যে' জড়িয়ে পড়ছে। চিকিৎসার ব্যয় বহন করতে গিয়ে তারা এ পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছে। এর সবচেয়ে বড় শিকারে পরিণত হচ্ছে নারী ও শিশুরা।
জাতিসংঘের হিসাবে গত বছর বিশ্বে এইচআইভি আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ছিল তিন কোটি ৪০ লাখের মতো। ২০০৫ সালে এইডসে মৃত্যুর হার যেখানে ২২ লাখ ছিল, চিকিৎসাব্যবস্থার উন্নতির কারণে গত বছর এর পরিমাণ ১৮ লাখে নেমে আসে। তবে এশিয়ায় এইচআইভিকে জড়িয়ে এখনো কুসংস্কার কাজ করছে। ইউএনডিপির তথ্য মতে, ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামে সাধারণ কোনো রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির তুলনায় এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তিদের পারিবারিক চিকিৎসা ব্যয় তিন গুণ বেশি। চিকিৎসার উচ্চ ব্যয় বহন করতে না পেরে অনেক পরিবারই তাদের সন্তানদের পড়ালেখা বন্ধ করে দিচ্ছে। ঋণের চাপে পড়ে সন্তানদের জন্য সারা জীবনের দারিদ্র্যের বোঝা রেখে যাচ্ছে। এইচআইভির ঝুঁকির দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারত ও নেপালের পরেই অবস্থান করছে পাকিস্তান। তবে দেশটি সরকারি সব হাসপাতালে বিনা মূল্যে এইডসের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে। বেসরকারি কিছু এনজিও এইডস আক্রান্তদের চিকিৎসার পাশাপাশি এইডস আক্রান্ত রোগীদের কাজেরও ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। সূত্র : এএফপি।

No comments

Powered by Blogger.