পার্থক্য অনেক :মুশফিক

করকম বিরক্ত হয়েই এক সাংবাদিক প্রশ্ন করলেন। 'এ সিরিজ শুরুর আগে থেকেই শুনে আসছি, ওদের (পাকিস্তানি) বোলিং বিশ্বমানের, ওদের বোলিংয়ে বৈচিত্র্য বেশি_ এ ব্যাপারটা বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মনে নেতিবাচকভাবে গেঁথে গেছে কি-না?' বলে রাখা ভালো, এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগেই অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম ম্যাচ শেষে সাংবাদিকদের সামনে এসে একবার বলে ফেলেছেন_ 'পাকিস্তানের বোলিং আক্রমণ বিশ্বের অন্যতম সেরা...।


' কিন্তু তাই বলে কি ৯১ রানে অল আউট হতে হবে? ব্যাপারটি একবার হলেও অঘটন বলে মেনে নেওয়া যেত, কিন্তু এক বছরে তিন ম্যাচে একশ'র নিচে অল আউট হওয়াকে আর যাই হোক অঘটন বলা যায় না। সাংবাদিকের ওই প্রশ্নের সঙ্গে কোনো দ্বিমত করেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক। মেনেও নিয়েছেন, এক ধরনের মানসিক চাপে ভুগছেন তার ব্যাটসম্যানরা। 'আমরাই বোধহয় একমাত্র দল যারা কখনও আড়াইশ' করছি, আবার কখনও একশ'র নিচে অল আউট হয়ে যাচ্ছি। বিশ্বের অন্যান্য দলও যেদিন খুব খারাপ করে, সেদিনও ১৫০ থেকে ১৬০ রান করতে পারে। শুধু আমরাই পারি না। এটার একটা কারণ বোধহয় দলের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতা। যেখানে সাকিব-তামিম কিংবা আমি নিজে রান না পেলে পরের ব্যাটসম্যানরা চাপে পড়ে যান। যেটা হওয়া উচিত নয়। তাছাড়া আমাদের টপ অর্ডার ব্যাটিং নিয়েও এতটা নাড়াচাড়া হচ্ছে যে, প্রত্যেক ব্যাটসম্যানই চাপ নিয়ে নিচ্ছেন। প্রতিটি দলে যেখানে ওপেনিং এবং তিন নম্বর জায়গাটি দলের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান খেলতে নামেন, সেখানে গত সিরিজ থেকে আমরা ওই জায়গায় তেমন কাউকে পাচ্ছি না। এটাও ব্যাটিং ধসের একটি কারণ।'
টপ অর্ডারে রান না পাওয়ার মুশফিকের আক্ষেপ বেড়ে গিয়েছিল রুবেল আর সাকিবের বোলিং দেখার পর। মাঝে ৮ রানের মধ্যে যখন পাকিস্তানের ৪ উইকেট পড়ে যায় তখন মুশফিকের মনে হয়েছে, আর যদি কিছু রান থাকত বোর্ডে। '৯১ রান নিয়ে ম্যাচ জিততে হলে মাঠে অষ্টম আশ্চর্যের মতো কিছু দরকার হতো। তারপরও আমাদের লক্ষ্য ছিল যদি ওদের চার-পাঁচ উইকেট ফেলতে পারি, তাহলে একটু অন্তত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে, আর পরের ম্যাচের জন্য কিছুটা মনের জোর বাড়বে। সত্যিই যখন ৫ উইকেট পড়ে যায়, তখন মনে হয়েছিল আমাদের বোর্ডে যদি ১৫০ রান থাকত...।' আফসোসের সঙ্গে অভিমানও রয়েছে বাংলাদেশ অধিনায়কের। সেটা ঘরের মাঠের উইকেট নিয়ে। 'হোম অ্যাডভান্টেজ জিনিসটা কী_ সেটা আমি গত দুটি সিরিজে দেখিনি। যদি জানতাম এ উইকেটে এত রান নিরাপদ, তাহলে সেভাবেই খেলতাম। তবে উইকেটের দোষ দিয়ে লাভ নেই, আমরা ব্যাটসম্যানরা মাঠে গিয়ে নিজেদের তুলে ধরতে পারিনি। এটাই আমাদের ব্যর্থতা।'
অধিনায়ক হয়ে হারের সব দায় নিজের কাঁধে নিয়ে মুশফিক স্বীকার করেছেন, পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের একটা বড় পার্থক্য ক্রিকেটীয় স্কিলে। 'ওদের হাতে চার-পাঁচজন ম্যাচ উইনার। সবাই স্কিলড। আমাদের হাতে তা নেই। তার পরও আমাদের যা আছে, তা নিয়েই লড়তে হবে। আমি এখনও বিশ্বাস করি, অন্য সব কিছু ভুলে নিজের স্কিলটা প্রয়োগ করতে পারলে বড় স্কোর করা সম্ভব। পাকিস্তানিরা সবসময় এতটা টাইট বোলিং করে, দু'একটা লুজ বল পেলেই আমরা হাঁকাতে থাকি। সেটাই হয়তো মিস হিট হয়ে আউট হয়ে যাওয়ার কারণ। আমরা যদি এটা না করে দু'এক করে রানের চাকা সচল রাখতে পারি, তাহলে হয়তো রান আসবে।' সাংবাদিকদের সামনে বলা এ কথাগুলো ৯১ রানে অল আউট হওয়ার পর ড্রেসিংরুমেও বলেছিলেন মুশফিক; কিন্তু বলার সঙ্গে কাজের তো মিল হচ্ছে না? প্রশ্নটা মুশফিকের নিজেরও। 'বলে কী লাভ, কাজেই যদি তা না লাগাতে পারলাম!'

No comments

Powered by Blogger.