টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণের প্রতিবাদ-সিলেটে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালিত

ভারতের টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণের প্রতিবাদে সিলেটে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালিত হয়েছে। বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল পালিত হয়। তবে পিকেটাররা অর্ধশতাধিক হালকা যানবাহন ভাঙচুর করে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্রিয় উপস্থিতি থাকলেও পিকেটিং বা পিকেটারদের হাতে গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় তারা কোনো বাধা দেয়নি।সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গতকাল ভোরেই রাজপথে অবস্থান নেয় পিকেটাররা।


এ সময় শিবগঞ্জ, মিরাবাজার, জিন্দাবাজার, আম্বরখানা, চৌকিদেখিসহ বিভিন্ন স্থানে অর্ধশত গাড়ি ভাঙচুর করে তারা। হরতালে রিকশা নিয়ে বের হওয়ায় অনেক চালককে কান ধরে উঠবস করার শাস্তিও দেয় পিকেটাররা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনে গাড়ি ভাঙচুর হলেও তারা কোনো বাধা দেয়নি। এর পরপরই রাজপথ যানশূন্য হয়ে যায়। দোকানপাট, মার্কেট বন্ধ ছিল। অফিস-আদালত ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান খোলা থাকলেও স্বাভাবিক কাজকর্ম হয়নি। দূর বা স্বল্প পাল্লার কোনো যানবাহন সিলেট ছেড়ে যায়নি এবং প্রবেশও করেনি। সকালে চট্টগ্রামগামী আন্তঃনগর ট্রেনটি রেলস্টেশনে আটকে দেয় হরতাল সমর্থকরা।
রাজপথে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ইলিয়াস আলীসহ অন্যরা গান গেয়ে হরতালের প্রচারণা চালান। দিনভর নগরীর বিভিন্ন রাস্তা পিকেটারদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। মিছিলে মিছিলে সরগরম ছিল রাজপথ। হরতাল চলাকালে ব্যতিক্রমী মিছিল করে স্বেচ্ছাসেবক দল। তারা লাশ বহনের একটি খাটিয়া নিয়ে নগরীতে মিছিল করে। খাটিয়ায় লেখা ছিল 'বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী'। এ সময় মিছিলকারীদের অনেকের মাথায় সাদা কাপড় বাঁধা ছিল। মিছিলটি অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
বিকেলে হরতাল শেষে কোর্ট পয়েন্টে অনুষ্ঠিত সমাবেশে মাসব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে মিছিল, সমাবেশ, লিফলেট বিতরণ, মানববন্ধন, প্রতীকী অনশন ও সমাবেশ। কর্মসূচি অনুযায়ী আজ থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত সিলেট বিভাগের সব স্থানে লিফলেট বিতরণ, ২০ ডিসেম্বর বিভাগের সব উপজেলা, থানায় বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল, ২৬ ডিসেম্বর সব জেলা ও মহানগরে মানববন্ধন, ২৯ ডিসেম্বর সকাল ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত জেলা সদরে ও সিলেট মহানগরে প্রতীকী অনশন, ২ জানুয়ারি সিলেট বিভাগের সব জেলা সদরে ও সিলেট মহানগরে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল এবং ৭ জানুয়ারি সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী অমলসিদে জনসভা।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মহানগর বিএনপির সভাপতি এম এ হক। প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলী। বক্তব্য দেন সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ শফি আহমদ চৌধুরী, দিলদার হোসেন সেলিম, কলিম উদ্দিন মিলন, মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী, অধ্যাপক ডা. রফিক আহমদ চৌধুরী, বিএনপি নেতা আবদুল গফফার, আবদুল কাইয়ুম জালালী পংকি, নাসিম হোসাইন, অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান জামান, রেজাউল হাসান কয়েস লোদী প্রমুখ।
ইলিয়াস আলী বলেন, সিলেটসহ বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ এলাকাকে মরুকরণ ও ধ্বংসযজ্ঞের হাত থেকে রক্ষা করতে বিএনপি টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণের বিরুদ্ধে হরতালসহ বিভিন্ন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বিএনপি টিপাইমুখ নিয়ে রাজনীতি করছে না। সিলেটের মাটি ও মানুষের স্বার্থে বিএনপি হরতালের ডাক দিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.