জ্বালানি আমদানি-বেসরকারি খাতের সুযোগ বাড়ূক

বিদ্যুৎ উৎপাদনে এক সময়ে সরকারি খাতের একক কর্তৃত্ব ছিল। নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের জন্য এ খাত উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এর ফল ইতিবাচক হয়েছে_ দ্রুতই বাড়ছে বিদ্যুৎ উৎপাদন। ছোট-বড় অনেক ধরনের বিদ্যুৎ প্রকল্প বেসরকারি খাতে নির্মিত হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে অবশ্য নতুন সমস্যা গ্যাসের সংকট। আশির দশক থেকে সরকারি বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো জ্বালানি হিসেবে গ্যাসের ব্যবহার শুরু করে।


বেসরকারি প্রকল্পগুলোও প্রথম দিকে এ সুবিধা পেয়েছে। কিন্তু চার-পাঁচ বছর ধরে গ্যাস সংকট প্রকট হতে থাকায় জ্বালানি হিসেবে ডিজেল-ফার্নেস অয়েলের ব্যবহার শুরু হয়েছে। কিন্তু এ জ্বালানি ব্যয়বহুল হওয়ায় এর ব্যবহার থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের দাম পড়ে গ্যাসের তুলনায় অনেক বেশি। সরকার এ খাতে প্রচুর ভর্তুকি দিয়ে এতদিন পরিস্থিতি সামাল দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সরকারি কোষাগারের চাপ সহ্য করার ক্ষমতা অশেষ নয়। এ বিবেচনা থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য বেসরকারি উদ্যোক্তাদের নিজেদের প্রয়োজনীয় জ্বালানি আমদানির সুযোগ প্রদানের একটি সিদ্ধান্ত সরকার নিতে যাচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে। আমরা এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। যুগ যুগ ধরে জ্বালানি তেল আমদানির কর্তৃত্ব রয়েছে সরকারের হাতে। এটা ঠিক যে, জ্বালানি বিশ্বের সর্বত্রই স্ট্র্যাটেজিক পণ্য হিসেবে গণ্য হয়। কিন্তু এখন বেসরকারি খাতের ভূমিকা আর্থ-সামাজিক সব ক্ষেত্রেই স্বীকৃত এবং তা সুফলও দিচ্ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হবে, এক সময়ে এটা ভাবা কঠিন ছিল। কিন্তু এখন পরিস্থিতি আমূল বদলে গেছে। বাংলাদেশে সরকারি খাতের চেয়ে বেসরকারি খাতের প্রকল্পগুলো বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। তাদের প্রয়োজনীয় জ্বালানি আমদানির সুযোগ প্রদান করা হলে উৎপাদনের কাজ আরও সহজ হতে পারবে। তবে এ ক্ষেত্রে যেহেতু সরকারকে নির্দিষ্ট অঙ্কের ভর্তুকি দিতে হবে, তাই আমদানির ওপর সরকারকে অবশ্যই নজরদারি রাখতে হবে। সরকারের ভর্তুকি রয়েছে এমন কোনো কোনো খাতে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা বাড়তি সুবিধা আদায়ের জন্য ভুল তথ্য উপস্থাপন করে বলে অভিযোগ রয়েছে। জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে পরিমাণ ও মূল্য বেশি দেখানোর বিষয়ে অবশ্যই সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে। ভর্তুকিযুক্ত এ পণ্য খোলাবাজারে যেন আসতে না পারে তারও নিশ্চয়তা চাই। এ ক্ষেত্রে একটি সমস্যা হবে তেল জমা রাখার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ। আমদানিকারক ও উদ্যোক্তারা প্রথম দিকে এ জন্য সরকারের সহায়তা চাইতে পারে এবং এ বিষয়টি বিবেচনায় থাকা চাই। সরকারিভাবে যে বিপুল জ্বালানি আমদানি করা হচ্ছে সে ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বজায় রাখার ওপরও আমরা গুরুত্ব দিতে চাই। আমাদের আমদানি ব্যয়ের প্রধান খাত জ্বালানি। ক্রমবর্ধমান ব্যয়ের কারণে সরকার হিমশিম খাচ্ছে। এ খাতে কমিশন এজেন্টরা সক্রিয় বলে অভিযোগ রয়েছে অনেক বছর ধরেই এবং তা অমূলক বলা যাবে না। একই সঙ্গে সরকারকে শুধু বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য নয়, জ্বালানি তেল আমদানি পুরোপুরি বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবতে হবে। এতে সরকারের ওপর আর্থিক চাপ যেমন কমবে, তেমনি বিশ্ববাজারের ওঠানামার সঙ্গে দেশীয় বাজারে মূল্য নির্ধারণের কাজও সহজ হবে।

No comments

Powered by Blogger.