শুল্কমুক্ত সুবিধা আদায়ে সোচ্চার থাকবে বাংলাদেশ by জাকির হোসেন

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডবি্লউটিও) এবারের মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে বাংলাদেশ উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের বাজারে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) জন্য শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত সুবিধা আদায়ে সোচ্চার থাকবে। এ ছাড়া উন্নত দেশে জনশক্তি রফতানিতে এলডিসিগুলোকে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার পক্ষেও অবস্থান নেবে বাংলাদেশ। ডবি্লউটিওর সম্মেলন সামনে রেখে গতকাল বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশের ওই
অবস্থান নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ১৫ ডিসেম্বর বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন শুরু হচ্ছে। তিন দিনব্যাপী সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খানের নেতৃত্বে ১৬ সদস্যের প্রতিনিধি দল যোগ দিচ্ছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খানের সভাপতিত্বে বৈঠকে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফসিসিআই সভাপতি এ. কে. আজাদ, গবেষণা সংস্থা সিপিডির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, বাণিজ্য সচিব গোলাম হোসেনসহ বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক সূত্র জানায়, ডবি্লউটিও সম্মেলন থেকে বাংলাদেশের প্রত্যাশা বিষয়ে একটি কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়েছে। কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী, অন্যবারের মতো এবারও শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধার ব্যাপারে সোচ্চার থাকবে বাংলাদেশ। এলডিসির সমন্বয়কারী হিসেবে বাংলাদেশ শুধু নিজের জন্য নয়, অন্য এলডিসির দাবির ব্যাপারেও জোরালো বক্তব্য দেবে। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে_ সেবা খাতে স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়া অর্থাৎ এলডিসি থেকে উন্নত দেশে দক্ষ ও আধা-দক্ষ শ্রমিক রফতানি এবং স্বল্পোন্নত দেশের খাদ্য আমদানির ওপর উন্নত দেশ কর্তৃক রফতানি নিষেধাজ্ঞা আরোপ না করা ইত্যাদি।
বৈঠকের ব্যাপারে জানতে চাইলে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান সমকালকে বলেন, বাংলাদেশ ডবি্লউটিওতে যেসব বিষয় তুলে ধরবে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দোহা রাউন্ড শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা না করে স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি আগাম ফসল হিসেবে দেখতে চায় বাংলাদেশ। হংকংয়ে মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে এ বিষয়ে অনেক অগ্রগতি ছিল, যা পুরোপুরিভাবে এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। এ ছাড়া উন্নত দেশে অভিবাসনের ক্ষেত্রে স্বল্পোন্নত দেশের জন্য নিয়মকানুনের শৈথিল্য দেখানোর দাবি তুলে ধরা হবে। বাণিজ্যের জন্য সুবিধা বাড়ানোর বিষয়ে অবস্থান নেবে বাংলাদেশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রফতানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়ার বিষয়েও বাংলাদেশ তৎপরতা চালাবে। সূত্র জানায়, মূল সম্মেলনে অংশগ্রহণের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি (ইউএসটিআর), ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ট্রেড কমিশনার, ভারত, জাপান, চীন, আর্জেন্টিনা, পেরু, ব্রাজিল, কলম্বিয়ার বাণিজ্যমন্ত্রী এবং ডবি্লউটিওর মহাপরিচালকের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা এবং সার্কভুক্ত দেশের বাণিজ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে আলাদা বৈঠক হবে। ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী পেরু, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল এবং কলম্বিয়ার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্প্র্রসারণ বিষয়ে আলোচনা করবেন বলেও জানা গেছে।

প্রতিনিধি দল :১৬ সদস্যের প্রতিনিধি দলে বাণিজ্যমন্ত্রীর পাশাপাশি সরকারপক্ষ থেকে রয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডবিল্গউটিও সেলের মহাপরিচালক অমিতাভ চক্রবর্তী, ট্যারিফ কমিশনের যুগ্ম প্রধান মোস্তফা আবিদ খান, ডবিল্গউটিও সেলের দুই পরিচালক শরীফা খান ও নেছার আহমেদ, সুইজারল্যান্ডে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আবদুল হান্নান, ইকোনমিক মিনিস্টার বিজয় ভট্টাচার্য।
এর পাশাপাশি বেসরকারি খাত থেকে এফবিসিসিআই সভাপতি এ. কে. আজাদ, ইন্টারন্যাশনাল চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুর রহমান, সার্ক চেম্বারের সভাপতি আনিসুল হক, ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আসিফ ইব্রাহীম, বিজিএমইএর সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, পরিচালক আরশাদ জামাল, বিটিএমইএ সভাপতি জাহাঙ্গীর আলামীন, বিকেএমইএর সহ-সভাপতি এএইচ আসলাম সানী, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান প্রতিনিধি দলে অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.