অনলাইনে রফতানি তথ্য সংগ্রহে সমস্যা-প্রথম মাসে জমা পড়েছে ৪০ হাজার বিলের তথ্য by ওবায়দুল্লাহ রনি

মস্যার মধ্যেই চলছে অনলাইনে রফতানি তথ্য সংগ্রহের কাজ। এ প্রক্রিয়ায় প্রথম মাস তথা গত নভেম্বরে জমা পড়েছে প্রায় ৪০ হাজার রফতানি বিলের তথ্য। ব্যাংকগুলো 'ই-এক্সপি' সফটওয়্যার ব্যবহার করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা অপারেশন বিভাগে দৈনিক ভিত্তিতে এসব পাঠিয়েছে। রফতানি প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বাড়াতে এ পদ্ধতি চালু হয়। পর্যায়ক্রমে আমদানি, রেমিট্যান্সসহ বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের সব তথ্য অনলাইনে জমা নেওয়ার চিন্তাভাবনা


করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভারে অতিরিক্ত চাপের কারণে রফতানি তথ্য দিতে ব্যাংকগুলোকে বেশ বেগ পোহাতে হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানিয়েছে, অনলাইনে রফতানি তথ্য সংগ্রহ শুরুর পর থেকে যেসব রফতানি হচ্ছে তা তামাদি করার কোনো সুযোগ দেওয়া হবে না। যে কারণে প্রতিদিনের তথ্য পাঠাচ্ছে ব্যাংকগুলো। বর্তমানে মোট ৮৫০টি বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী (এডি) শাখা রয়েছে। গত নভেম্বরে ২৫ কার্যদিবসে গড় ভিত্তিতে ১৬৩টি করে শাখা তথ্য জমা দিয়েছে। এ সময়ে সর্বোচ্চ তথ্য পড়েছে ২৭ নভেম্বর। ওই দিন রফতানি তথ্য জমা দেয় ২৬৮টি এডি শাখা। সর্বনিম্ন তথ্য দিয়েছে ১৮ নভেম্বর। ওই দিন মাত্র একটি এডি শাখার তথ্য জমা পড়ে। জমা পড়া মোট তথ্যের পরিমাণ ৩৯ হাজার ১১৮টি। এ তথ্য জমা দিতে গিয়ে ব্যাংকগুলোকে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে বলে জানা গেছে। মূলত বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভারে অতিরিক্ত চাপের কারণে ওই সমস্যা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, 'ই-এক্সপি' নামের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সফটওয়্যারটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে, শাখাগুলো তথ্য পাঠালে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের ডাটা সেন্টারে এসে যুক্ত হবে। ১২০ দিনের মধ্যে যেহেতু রফতানির সব প্রক্রিয়া শেষ করার বিধান আছে তাই এ পদ্ধতির পাশাপাশি বর্তমানে কাগুজে পদ্ধতিও চালু রাখা হয়েছে। তবে আগামী ফেব্রুয়ারি বা মার্চে গিয়ে আর কাগুজে পদ্ধতিতে তথ্য নেবে না বাংলাদেশ ব্যাংক। বর্তমানে সব ব্যাংক মিলিয়ে ৮৫০টি এডি শাখা রয়েছে। এর আগে এ পদ্ধতির বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী বিভাগের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এরপর বেশ কিছুদিন পরীক্ষামূলক তথ্য সংগ্রহের পর গত ১ নভেম্বর থেকে অনলাইন কার্যক্রম শুরু হয়।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, রফতানি তথ্য সংগ্রহের বিষয়ে বাংলাদেশে এখনও গ্রহণযোগ্য কোনো ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। যে কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যে প্রতি বছরই বড় ধরনের পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। ২০১০-১১ অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে ইপিবির তথ্যে ২১৯ কোটি ডলারের পার্থক্য দেখা দিয়েছে। প্রতি ডলারের বিপরীতে ৭৫.৫০ পয়সা হিসেবে বাংলাদেশি মুদ্রায় যার মূল্যমান দাঁড়ায় সাড়ে ১৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। মূলত নির্দিষ্ট কোনো ফরম্যাট না থাকায় এমন হয় বলে জানা গেছে। তবে অনলাইনে সফলভাবে সব ধরনের তথ্য সংগ্রহ সম্পন্ন করা গেলে এ ধরনের সমস্যা থাকবে না বলে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো জানিয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, প্রচলিত পদ্ধতিতে রফতানিপণ্য জাহাজিকরণের পর ব্যাংকগুলো কাগুজে পদ্ধতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে তথ্য পাঠায়। এতে একদিকে যেমন অতিমাত্রায় কাগজের ব্যবহার হয়, অন্যদিকে বেশি লোকবল প্রয়োজন হয়। এছাড়া অনেক ক্ষেত্রে তথ্য গোপন করতে রফতানিকারক নানা জালিয়াতির আশ্রয় নেয়। এসব সমস্যা সমাধানে রফতানি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এডি শাখা থেকে অনলাইনে সরাসরি কেন্দ্রীয় ব্যাংকে তথ্য পাঠানোর বিধান চালু হয়েছে। এ পদ্ধতির ফলে উভয় পক্ষেরই সময় বাঁচবে ও খরচ কমবে। একই সঙ্গে কাজের স্বচ্ছতা আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.