ইসিকে চিঠি-ঢাকার ওয়ার্ডের নাম ও নম্বর পরিবর্তন ছাড়াই নির্বাচন!-বর্তমান কমিশন এ নির্বাচন করতে চায় না : ছহুল by কাজী হাফিজ

বিভক্ত ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন ৯০ দিনের মধ্যে অনুষ্ঠানে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে গতকাল রবিবার স্থানীয় সরকার বিভাগ চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশনকে। চিঠিতে সিটির ওয়ার্ডগুলোর নাম ও ক্রমিক নম্বর পরিবর্তন না করেই নির্বাচন আয়োজনের এই অনুরোধে হতাশা ব্যক্ত করেছেন কমিশনের কর্মকর্তারা। এদিকে নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ ছহুল হোসাইন বলেছেন, দুই ডিসিসির নির্বাচন বর্তমান কমিশন করতে চায় না।


স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে গতকাল বিকেলে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, 'সংশোধিত স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন অনুসারে ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হচ্ছে।' একই সঙ্গে নির্বাচনের সময়সীমা সম্পর্কে সংশোধিত বিধানের কথাও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
চিঠিতে কোন কোন ওয়ার্ড নিয়ে ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটির নির্বাচন করতে হবে তাও জানানো হয়েছে। কিন্তু এ চিঠি পেয়ে নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কিছুটা হতাশা ব্যক্ত করেছেন। তাঁদের প্রশ্ন, ঢাকা সিটি বিভক্ত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সিটির ওয়ার্ডগুলোর নাম ও ক্রমিক নম্বর পরিবর্তন হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু সেটা না করেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের অনুরোধ করা হচ্ছে। তাহলে কি স্থানীয় সরকার বিভাগ ওয়ার্ডগুলোর নাম ও ক্রমিক নম্বরে কোনো পরিবর্তন আনতে চাচ্ছে না?
স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব ধনঞ্জয় কুমার দাস স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ঢাকা সিটি করপোরেশনের ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯, ১০, ১১, ১২, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬, ১৭, ১৮, ১৯, ২০, ২১, ২২, ২৩, ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০, ৪১, ৪২, ৪৩, ৪৪, ৪৫, ৪৬, ৪৭ এবং ৫৪ ও ৫৫ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন করতে হবে। আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন করতে হবে ২৪, ২৫, ২৬, ২৭, ২৮, ২৯, ৩০, ৩১, ৩২, ৩৩, ৩৪, ৩৫, ৩৬, ৪৮, ৪৯, ৫০, ৫১, ৫২, ৫৩, ৫৬, ৫৭, ৫৮, ৫৯, ৬০, ৬১, ৬২, ৬৩, ৬৪, ৬৫, ৬৬, ৬৭, ৬৮, ৬৯, ৭০, ৭১, ৭২, ৭৩, ৭৪, ৭৫, ৭৬, ৭৭, ৭৮, ৭৯, ৮০, ৮১, ৮২, ৮৩, ৮৪, ৮৫, ৮৬, ৮৭, ৮৮, ৮৯, ৯০, ৯১ ও ৯২ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে।
সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কর্মকর্তারা বলছেন, দুটি আলাদা সিটি করপোরেশনের ক্ষেত্রে আলাদা ক্রমিক অনুসারে ওয়ার্ডগুলোর নামকরণ করতে হবে। স্থানীয় সরকার বিভাগ এখনো ইসিতে সীমানা নির্ধারণ সম্পর্কে আলাদা কোনো গেজেট পাঠায়নি। সাধারণত ওই গেজেট পাঠিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করতে বলা হয়। নবগঠিত নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা সিটি নির্বাচনের ক্ষেত্রে তেমনটাই করা হয়েছে। সীমানা নির্ধারণ চূড়ান্ত হওয়ার আগে ভোটার তালিকা প্রস্তুত করাও সম্ভব নয়। এ অবস্থায় স্থানীয় সরকার বিভাগের চিঠি নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ইসিকে তেমন সহায়তা করছে না।
নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন এ বিষয়ে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'স্থানীয় সরকার বিভাগের চিঠি থেকে জানা যাচ্ছে ওয়ার্ডগুলোর ক্রমিক নম্বর ঠিক করে সীমানা নির্ধারণের কাজ এখনো সম্পন্ন হয়নি। এ ছাড়া নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আরো কী কী কাজ অসম্পন্ন রয়েছে, তা জানা যাবে কমিশনের বৈঠকে পর্যালোচনার পর।' থাইল্যান্ড ভ্রমণ শেষে আগামী ১০ ডিসেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এ টি এম শামসুল হুদা দেশে ফেরার পর কমিশনের ওই বৈঠক হবে বলে একটি সূত্র জানায়।
এদিকে ওই চিঠি পাওয়ার আগে গতকাল দুপুরে নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন সাংবাদিকদের জানান, সংশোধিত আইনে ৯০ দিনের মধ্যে (আগামী ২৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে) ঢাকার নতুন দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন করতে বলা হলেও নির্বাচন কমিশন তা করতে চায় না। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ প্রায় শেষ হওয়ার পথে। এ ক্ষেত্রে এটা একটা বড় বাধা। তিনি বলেন, 'আমাদের মেয়াদই আর ৯০ দিন নেই। তাই কোনো নির্বাচন অর্ধেক করতে চাই না। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এ টু জেড পরিকল্পনা এক নির্বাচন কমিশনেরই করা উচিত। আমরা এ সমস্যার কথা সরকারকে জানিয়েছি। আমরা এ নির্বাচনের কাযক্রম শুরু করে যেতে পারতাম। কিন্তু না করাই ভালো।' তবে তিনি বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার দেশের বাইরে। এ জন্য ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে কমিশন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।
প্রসঙ্গত, এর আগে গত বুধবার নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেনও বলেন যে তাদের পক্ষে নব্বই দিনের মধ্যে এই নির্বাচন করা দুঃসাধ্য।

No comments

Powered by Blogger.