ডিসিসিতে ২২ বছর পর আবার প্রশাসক

ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি) বিভক্তির পর অতিদ্রুত প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে নতুন দুটি করপোরেশনে। গতকাল রবিবার দুপুরে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে এ-সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হয়। নবনিযুক্ত দুই প্রশাসকের মধ্যে ঢাকা উত্তরের জন্য খোরশেদ আলম চৌধুরীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। আর ঢাকা দক্ষিণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে প্রাথমিক ও


গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব খলিলুর রহমানকে। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে ২২ বছর পর আবার ডিসিসিতে প্রশাসক নিয়োগের ঘটনা ঘটল।
গতকাল সকাল থেকেই খবর ছড়িয়ে পড়ে নবনিযুক্ত প্রশাসকরা দায়িত্ব নিতে নগর ভবনে এবং গুলশান এভিনিউয়ে অবস্থিত মেয়র হাউসে ঢাকা উত্তরের নতুন নগর ভবনে যাচ্ছেন। এর পরই বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মীরা নগরভবন ও গুলশানে জমায়েত হতে শুরু করেন। কিন্তু বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত খলিলুর রহমান নগর ভবনে পেঁৗছাননি। পরে জানা যায়, ঢাকা উত্তরের জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত খোরশেদ আলম চৌধুরী ওমানে অবস্থান করছেন। তিনিও নতুন দপ্তরে যেতে পারছেন না। আগামী শুক্রবার তিনি দেশে ফিরবেন বলে জানা গেছে। দক্ষিণের প্রশাসক খলিলুর রহমান জানান, নতুন দায়িত্বকে একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিচ্ছেন তিনি।
ডিসিসি সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা মিউনিসিপ্যালিটি গঠনের পর ১৮৬৪ সালে প্রথম প্রশাসক নিযুক্ত হয়েছিলেন স্কিনার নামের একজন অবাঙালি। সিটি করপোরেশনে উন্নীত হওয়ার পর সর্বশেষ ১৯৮৬ সালে প্রশাসক নিযুক্ত হয়েছিলেন কর্নেল (অব.) এম এ মালেক। তিনি ১৯৮৯ সালের ৯ অক্টোবর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। এর ২২ বছর এক মাস ২৫ দিন পর ডিসিসিতে আবার প্রশাসক নিয়োগ করা হলো।
গত ২৯ নভেম্বর জাতীয় সংসদে স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন (সংশোধন) পাস হওয়ার পরই দ্রুত প্রশাসক নিয়োগে তৎপর হয়ে ওঠে সরকার। এর আগে থেকেই ডিসিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ডিসিসি ভাগের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসছিলেন। এ নিয়ে সহিংসতার ঘটনাও ঘটে। তবে স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানকের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে ডিসিসির কর্মকর্তা-কর্মচারী সমন্বয় পরিষদ ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত আন্দোলন কর্মসূচি শিথিল করে। আজ বিকেল ৪টায় সমন্বয় পরিষদের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী। বৈঠকের পরই আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি নির্ধারণ করবেন বলে জানিয়েছেন সমন্বয় পরিষদের নেতারা।
গতকাল সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত নগর ভবনে অবস্থানকালে দেখা যায়, সরকার সমর্থক ডিসিসি শ্রমিক লীগের কর্মচারীরা খণ্ড খণ্ডভাবে নগর ভবনের সামনে মাঝে মাঝে বিক্ষোভ করছেন। একই সঙ্গে তাঁরা সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা ও হরতালের বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজকর্ম ফেলে বিভাজনের বিষয় নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত। ভাগ হলে কাকে কোন অংশে রাখা হবে_এসব বিষয় ঘুরে-ফিরে স্থান পাচ্ছে আলোচনায়। এ ছাড়া যেসব স্থানে মেয়রের নাম ও পদবি উল্লেখ ছিল, সেসব জায়গায় সাদা কাগজে প্রশাসক শব্দ সাঁটিয়ে দেওয়া হয়েছে। নগর ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রস্তুত হয়ে আছেন কখন নতুন প্রশাসক এসে দায়িত্ব নেবেন।

মেয়র হাউস এখন উত্তর নগর ভবন
অন্যদিকে গুলশান এভিনিউয়ের মেয়র হাউসকে ঝেড়েমুছে ঢাকা উত্তরের প্রশাসকের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এটিই এখন ঢাকা উত্তরের নতুন অস্থায়ী নগর ভবন।
ডিসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ দুপুরের পর সাংবাদিকদের বলেন, 'টেলিভিশনের মাধ্যমে ডিসিসিতে প্রশাসক নিয়োগের খবর পেয়েছি। নতুন প্রশাসক এলে তাঁকে গ্রহণ করারও সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এ-সংক্রান্ত কোনো আদেশ এ পর্যন্ত আমার কাছে এসে পেঁৗছেনি।' নিজের বদলি-সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি বলেন, 'আমার বদলিরও কোনো আদেশ এ পর্যন্ত পাইনি।'
অন্যদিকে ডিসিসিতে প্রশাসক নিয়োগের ঘটনায় বিদায়ী মেয়র সাদেক হোসেন খোকা সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেছেন। তাঁর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ডিসিসি দুই ভাগ করার সিদ্ধান্ত কেন বাতিল ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়েছেন আদালত। সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে এ বিষয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে জবাব দিতে বলেছেন আদালত।

No comments

Powered by Blogger.