যে কারণে সিরিয়া প্রশ্নে সতর্ক তুরস্ক

বর্তমান সময়ে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের কট্টর সমালোচক দেশগুলোর মধ্যে একটি তুরস্ক। বিষয়টি চলতি বছর পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট আসাদের সঙ্গে তুরস্কের নেতাদের উষ্ণ সম্পর্কের বিপরীত চিত্র তুলে ধরে।
সম্প্রতি তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান প্রকাশ্যে প্রেসিডেন্ট আসাদকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন। তার পরও সিরিয়ার বিষয়ে তুরস্কের অবস্থান অনেক সতর্ক বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
প্রেসিডেন্ট আসাদ সিরিয়ায় চলমান সহিংসতা বন্ধ করতে ব্যর্থ হওয়ায় তুর্কি প্রধানমন্ত্রী এরদোয়ান দুই মাস আগে দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের অঙ্গীকার করেন। কিন্তু তিনি সেই নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিলেন মাত্র কয়েক দিন আগে। তাও আরব দেশগুলোর সংগঠন আরব লিগ সিরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর।
সিরিয়ার ওপর তুর্কি নিষেধাজ্ঞায় প্রেসিডেন্ট আসাদের ঘনিষ্ঠদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা, সম্পদ জব্দ ও দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দেওয়া হয়। আরব লিগও সিরিয়ার বিরুদ্ধে প্রায় একই রকম নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, নিষেধাজ্ঞার মিল দেখে বোঝা যায় নিষেধাজ্ঞা আরোপের ক্ষেত্রে তুরস্ক কতটা সতর্ক ছিল। তুরস্ক সিরিয়ার ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি। কারণ, সিরিয়ার সঙ্গে তাদের বিশাল বাণিজ্য রয়েছে। গত বছর এই দুটি দেশের মধ্যে ২৪০ কোটি মার্কিন ডলারের বাণিজ্য হয়। তুরস্কের নিষেধাজ্ঞায় এমন কিছু নেই, যা সিরিয়ার সাধারণ জনগণের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। যেমন, নিষেধাজ্ঞায় সিরিয়ায় বিদ্যুৎ রপ্তানি বন্ধ করা বা দেশটিতে পানিপ্রবাহে বাধা দিতে তুরস্কের নদী থেকে পানি প্রত্যাহারেরও মতো বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়নি।
নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে তুরস্কের এই বিষয়গুলোতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। সিরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের ব্যাপারে তুরস্ক সরকার সংশয়বাদী। আর তুর্কি ব্যবসায়ীরা সিরিয়ায় এমন কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপের পক্ষে নন, যাতে তাঁরা ব্যবসায়িক ক্ষতির শিকার হন। সরকারের কাছে ওই ব্যবসায়ীদের তদবিরের বিষয়টিও নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রে বিবেচনায় এসেছে।
এই মুহূর্তে সিরিয়ার অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়েছে। তাই তুর্কি ব্যবসায়ীরা সিরিয়ায় পণ্য রপ্তানি ও দেশটি হয়ে অন্য দেশে পণ্য রপ্তানি করতে শঙ্কার মধ্যে পড়েছেন। পণ্য পাঠালে অর্থ পাবেন কি না, তা তাঁরা নিশ্চিত নন।
এরই মধ্যে সিরিয়ার ভেতরে ‘বাফার জোন’ তৈরির ব্যাপারে অনেক আলোচনা হচ্ছে। সেই জোন তুর্কি সেনাদের নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হচ্ছে। তুরস্ক আনুষ্ঠানিকভাবে বলছে, এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তবে তারা তখনই বাফার জোনের বিষয়টি বিবেচনা করবেন, যখন সিরিয়া থেকে শরণার্থীর ঢল নামবে এবং বাফার জোনের জন্য আন্তর্জাতিক সমর্থন পাওয়া যাবে।

No comments

Powered by Blogger.