আইভী উচ্ছ্বাসে হোঁচট by আনোয়ার হোসেন

কজন প্রবীণ সাংবাদিক কয়েকদিন আগে ফোন করে বলেছিলেন, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র পদেও একজন 'আইভীর' সন্ধান পেয়ে গেছেন। তিনি নারায়ণগঞ্জের সেলিনা হায়াৎ আইভীর মতোই জনপ্রিয়। তবে একটিই সমস্যা_ বয়স খানিকটা বেশি। কত বেশি, এ প্রশ্নে জানান_ ধরুন একটু বেশিই। তিনি কি দলমত নির্বিশেষে আইভীর মতো সবাইকে চারপাশে বিশেষ করে, তরুণ প্রজন্মকে সমবেত করতে পারবেন_ এ প্রশ্নের উত্তর পাইনি।


তিনি যে নামটি বলেছিলেন, এখন দেখছি আদৌ তিনি প্রার্থীই হননি। কেন হননি, সে প্রশ্ন করেছিলাম। জানা গেল, তার দল বিএনপি নির্বাচন করছে না বলে তিনি রণে ভঙ্গ দিয়েছেন। তবে বিএনপির একজন নেতা কুমিল্লা পৌরসভার বিদায়ী মেয়র মনিরুল হক সাক্কু প্রার্থী হয়েছেন। কেন্দ্রীয়ভাবে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাদের প্রধান যুক্তি ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম ব্যবহার। নির্বাচন কমিশন নারায়ণগঞ্জে সীমিতসংখ্যক কেন্দ্রে এ যন্ত্র ব্যবহার করেছিল। তার সুফল আমাদের জানা_ এমনকি নিরক্ষর ভোটারদেরও কোনো সমস্যা হয়নি ভোট দিতে। বিএনপির চেয়ারপারসন কয়েকদিন আগে তারেক রহমানের জন্মদিন পালনের এক অনুষ্ঠানে কয়েকজনকে ল্যাপটপ উপহার দিয়েছেন। এটা সুলক্ষণ_ যুগের সঙ্গে তাল মেলানো। তিনি কেন ইভিএমের বিরোধী?
কুমিল্লায় কোনো 'আইভী' প্রার্থী হননি। মেয়র পদে একজন নারী প্রার্থী আছেন বটে, তবে তিনি হেভিওয়েট বলে গণ্য হবেন বলে এখন পর্যন্ত মনে হয় না। আওয়ামী লীগের আফজল খান অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থী। তিনি আইভী যে নন, সেটা বুঝতে কারও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। তিনি কি কুমিল্লার শামীম ওসমান? নারায়ণগঞ্জের শামীম ওসমান দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের পূর্ণ সমর্থন পেয়েছিলেন। কিন্তু ভোটাররা তাকে পছন্দ করেননি। তিনি নির্বাচনে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হওয়ার পরও দাবি করেন, মাত্র ১৫ মিনিটে ৫ লাখ লোকের সমাবেশ ঘটানোর ক্ষমতা তার রয়েছে। কিন্তু ভোটের ফল সেটা বলে না। আফজল খান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সমর্থন পেয়েছেন। জেলার সরকারদলীয় সাংসদরা তার পাশে আছেন। ভোটারদের সমর্থন এভাবে মিলবে কি-না সেটা সময়ে বলে দেবে। তবে তার ভাবমূর্তি তেমন উজ্জ্বল নয় বলেই বিভিন্ন সংবাদপত্রের খবরে প্রকাশ। সদ্য ভেঙে দেওয়া কুমিল্লা পৌরসভার মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর ভামূর্তিতেও কালির অনেক আঁচড়। নারায়ণগঞ্জের নির্বাচন হওয়ার পর 'আইভী' নিয়ে যে উচ্ছ্বাস বইতে শুরু করেছিল, তা এভাবে মস্ত হোঁচট খেল। বিএনপি নির্বাচন অফিসিয়ালি করছে না। তাই তারা এ ক্ষেত্রে ছাড় পেতে পারে। কিন্তু আওয়ামী লীগ ঘোষণা দিয়েই নির্বাচনী ময়দানে হাজির। তারা কেন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য প্রার্থী বাছাই করতে পারল না? এমন প্রার্থীর কি আকাল পড়েছে কুমিল্লায়? নাকি এ পথে না চলতেই বেশি আগ্রহ? নারায়ণগঞ্জের পর কুমিল্লার মনোনয়ন থেকে সারাদেশের কর্মী-সমর্থকদের কাছে আওয়ামী লীগ কি এ বার্তাই দিল যে_ 'আইভীর সন্ধান' করে লাভ নেই, আমাদের আস্থা 'শামীমেই'? যদি তাই হয়ে থাকে, দলের জন্য এর অর্থ যাই হোক না কেন, দেশের জন্য কিন্তু মোটেই ভালো হবে না।

No comments

Powered by Blogger.