বীরের এলাকা চাটখিল by আনোয়ারুল হায়দার

হান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বীরের এলাকা নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলা। রণাঙ্গনে অসম সাহসিকতা প্রদর্শনের জন্য এ উপজেলায় ৪ জন মুক্তিযোদ্ধাকে বীরবিক্রম এবং ৬ জনকে বীরপ্রতীক খেতাব প্রদান করা হয়েছে। উপজেলায় তালিকাভুক্ত রয়েছেন ৭৫৫ জন মুক্তিযোদ্ধা। খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা হচ্ছেন ১. সুবেদার অলি উল্লাহ্ বীর বিক্রম; ২. শহীদ সিপাহি আবুল বাশার বীরবিক্রম; ৩. হাবিলদার আবদুল হাকিম বীরবিক্রম; ৪. শহীদ হাবিলদার রুহুল


আমিন বীরবিক্রম ; ৫. শহীদ আবদুল গফুর বীরপ্রতীক; ৬. শহীদ সার্জেন্ট নূর মোহাম্মদ বীরপ্রতীক; ৭. সুবেদার আবদুর রাজ্জাক বীরপ্রতীক এবং ৮. মোঃ শহীদ উল্লাহ্ বীরপ্রতীক। এর মধ্যে সুবেদার আবদুর রাজ্জাক বীরপ্রতীক সম্মান অর্জন করেছেন দু'বার।
সুবেদার আবদুর রাজ্জাক মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে ল্যান্স নায়েক পদে চাকরি করতেন। তিনি সৈয়দপুর তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে কর্মরত ছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ তিনি তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সব বাঙালি সৈনিকসহ বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্রসহ পাকিস্তানি পক্ষ ত্যাগ করে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। রংপুর, সৈয়দপুর, ঘোড়াঘাট, পলাশবাড়ী, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, পার্বতীপুর, জংশন, ফুলবাড়ী, জয়পুরহাটসহ বিভিন্ন স্থানে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
মে মাসে ভারতে প্রবেশ করে তিনি ও তার দলের সদস্যরা টিলাতলা ক্যাম্পে গিয়ে অস্ত্রশস্ত্র জমা দেন। প্রথমদিকে তিনি দুই মাস মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষনের দায়িত্বে ছিলেন। একই সঙ্গে নিজে উন্নত মানের ভারী অস্ত্র পরিচালনার ওপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
প্রশিক্ষণ শেষে জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত আবদুর রাজ্জাক জেড ফোর্সের অধীনে মেজর জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, পাটগ্রাম, শেরপুর, জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ, মাদারগঞ্জ, বাহাদুরাবাদসহ বিভিন্ন স্থানে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যান।
১৯৭১ সালের ৮ অক্টোবরের পর থেকে আবদুর রাজ্জাক যুদ্ধ করেন ৫নং সেক্টরের অধীনে বৃহত্তর সিলেটের ছাতক, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, গোবিন্দগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, দোয়ারা বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে। তার কমান্ডার ছিলেন মেজর সিআর দত্ত।
১২ অক্টোবর দোয়ারাবাজার গ্যাসফিল্ডের কাছে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। তখন মুক্তযোদ্ধাদের ৮০-৯০টি নৌকায় অবস্থান করা কয়েকশ' মুক্তিযোদ্ধা ভুল তথ্যের ভিত্তিতে পাকবাহিনীর অ্যামবুশের ফাঁদে পড়ে যায়। তখন সেদিনের যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রায় ১৩০ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ওই দিনের সাহসিকতার জন্য তাকে বীরপ্রতীক খেতাব দেওয়া হয়।
স্বাধীনতার পর তার পোস্টিং হয় খাগড়াছড়িতে। ১৯৮৬-৮৭ সালের শান্তিবাহিনীর হামলা ও অত্যাচার-অবিচার দমনে অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে আবদুর রাজ্জাক অসীম সাহসিকতার পরিচয় দেন। বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের স্বীকৃতি হিসেবে তাকে দ্বিতীয়বার বীরসূচক বীরপ্রতীক খেতাব প্রদান করা হয়। পরে তার পোস্টিং হয় রংপুরের সৈয়দপুর সেনানিবাসে। ১৯৮৯ সালে ১ সেপ্টেম্বর রংপুর সেনানিবাসে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া মোকাবেলা প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে যাওয়ার সময় এক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি গুরুতর আহত হন। দীর্ঘদিন রংপুর সম্মিলিত সাময়িক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৯৮৯ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর তিনি ইন্তেকাল করেন।
বীরপ্রতীক আবদুর রাজ্জাকের পৈতৃকভিটা নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার ছয়ানী টবগা গ্রামে। তার পিতার নাম মরহুম মোঃ জবেদ উল্লা ভূঁইয়া, মাতা- মরহুমা রোকেয়া বানু, স্ত্রীর নাম ও রোকেয়া বেগম। তাঁর দু্বই ছেলে, চার মেয়ে।

আনোয়ারুল হায়দার : সাংবাদিক

No comments

Powered by Blogger.