আমরাই পার্বত্য চুক্তি পূর্ণ বাস্তবায়ন করব :প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পার্বত্য শান্তিচুক্তি পূর্ণ বাস্তবায়ন বর্তমান সরকারই করবে। এর আগের আওয়ামী লীগ সরকার আমলে এ চুক্তি হয়েছে। এটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব বর্তমান সরকারের। এ নিয়ে কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকা উচিত নয়। চুক্তি বাস্তবায়নে সবার সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি। গতকাল রোববার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে পঞ্চম সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য উৎসব উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।


২ ডিসেম্বর শান্তিচুক্তি সইয়ের বার্ষিকী উপলক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ইউএনডিপির অধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন ফ্যাসিলিটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অংশগ্রহণে এ উৎসবের আয়োজন করে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর তৎকালীন বিরোধী দলের আপত্তি উপেক্ষা করে শান্তিচুক্তি করা হয়েছিল। শান্তিচুক্তি যেভাবে করা হয়েছে, বাস্তবায়নও সেভাবে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি-বাঙালি সবার উন্নয়নে কাজ করার জন্য উন্নয়ন সহযোগী ও দাতা সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, শান্তিচুক্তি করার পর তৎকালীন সরকার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর পুনর্বাসনে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছিল। পুলিশ ও আনসারে তাদের চাকরির ব্যবস্থা করা হয়। ভারতে যারা পালিয়ে
গিয়েছিল তাদের ফিরিয়ে এনে পুনর্বাসিত করা হয়। তাদের সন্তানদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে তথ্য ও সংস্কৃতিমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ এবং সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট প্রমোদ মানকিন বক্তব্য রাখেন। বাংলাদেশে ইউরোপীয় ডেলিগেশনের প্রধান উইলিয়াম হান্না, জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক নিল ওয়াকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নবকিশোর ত্রিপুরাও এতে বক্তব্য রাখেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে দীর্ঘদিনের সংঘর্ষের অবসান এবং এ অঞ্চলে সব নাগরিকের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করাই শান্তিচুক্তির প্রধান লক্ষ্য। তার সরকার বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। শান্তিচুক্তির অধিকাংশ ধারাই ইতিমধ্যে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। চুক্তির বাকি ধারা বাস্তবায়ন করতে সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে। শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কাউন্সিল এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি কমিশন গঠন করা হয়েছে। বর্তমান সরকারের সময় পার্বত্য অঞ্চলে সড়ক, সেতু ও কালভার্ট নির্মাণের মধ্য দিয়ে ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। রাঙামাটিতে একটি বিজ্ঞান ও আইসিটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং একটি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইউএনডিপি, ইউনিসেফ, এডিবি, ড্যানিডা, ইইউ, সিডা ও অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীর সহায়তায় পার্বত্য অঞ্চলের জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং পরিবেশ সংরক্ষণ, জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ইতিমধ্যে বিভিন্ন মেয়াদি উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, এক সময় পার্বত্য চট্টগ্রাম ছিল বিচ্ছিন্ন এলাকা। দায়িত্ব গ্রহণের পর পূর্ববর্তী আওয়ামী লীগ সরকার রাজনৈতিকভাবে এ সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করে। পার্বত্য চট্টগ্রামের লোকজন দীর্ঘকাল সংঘাতের মধ্যে ছিল এবং বহুকাল সামরিক ও অসাংবিধানিক সরকার ক্ষমতায় থাকায় তাদের স্বপ্ন পূরণ হয়নি। তিনি বলেন, শান্তি ও উন্নয়নের পথ কখনোই মসৃণ নয়। উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সব প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করে ওই অঞ্চলের জনগণকে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।
অনুষ্ঠানে দীপংকর তালুকদার প্রধানমন্ত্রীকে একটি ক্রেস্ট ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী পোশাক প্রদান করেন।

No comments

Powered by Blogger.