ঢাকার পর চট্টগ্রামে বাংলাদেশ দল-নাসির টনিক

য়েল ডান নাসির, মনে রেখ, এটা কেবল শুরু হলো তোমার। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, এটা শেষ পর্যন্ত ধরে রাখা। চালিয়ে যাও, দেশের জন্য আরও ভালো খেল...'_ বাংলাদেশ দলের নতুন সেনসেশন নাসির হোসেনকে এভাবেই শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। সেদিন রাতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১০০ রান করার পর মাশরাফির মতো বড় ভাইদের অনেকেই শুভেচ্ছা পাঠিয়েছেন নাসিরকে। এমনকি পাকিস্তান থেকেও ফুহাদ সিদ্দিকী নামে এক


ক্রিকেটপ্রেমী ক্রিকইনফোর মাধ্যমে নাসিরের প্রশংসা করেছেন। 'দেখতে ভালো লাগল, এক বাঙালি অন্তত বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছিল। প্রেসার সিচুয়েশনে সেঞ্চুরি করার মূল্যই আলাদা। হয়তো নাসিরের এই ১০০ রানের ইনিংসটি দলকে জয় এনে দেয়নি, তবে দলের বাকিদের মধ্যে নিশ্চয়ই আত্মবিশ্বাস এনে দিয়েছে।' ১৯ রানে ৪ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর নাসিরের ১৩৪ বলে ১০০ রানের চেয়েও কোচ স্টুয়ার্ট ল ১৫৫ মিনিট ঠাণ্ডা মাথায় ক্রিজে থাকার জন্য কাঁধ চাপড়েছেন। 'ড্রেসিংরুমের সবাই ভীষণ খুশি হয়েছে আমার সেঞ্চুরি হওয়ায়। তবে কোচ বেশি খুশি হয়েছেন শেষ পর্যন্ত উইকেটে টিকে থাকায়।' নাসিরের কাছেও মনে হয়েছে, অমন পরিস্থিতিতে শেষ পর্যন্ত ব্যাট করতে পারাটাই সবচেয়ে কাজে দিয়েছে।
নাসিরের হাসি মাখানো মুখের দিকে তাকিয়েই এখন দলের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা হারিয়ে যাওয়া আত্মবিশ্বাস খুঁজে পাচ্ছেন। যারা সিরিজ শুরুর আগেই 'পাকিস্তানি বোলিং অনেক ভালো...' বলে গুটিয়ে গিয়েছিলেন তারাও মানছেন, উমর গুল, সোহেল তানভির, আফ্রিদি আর আজমলকে ঠিকই সামলে খেলা যায়। 'আমি হচ্ছি দলের মধ্যে সবচেয়ে ছোট। আমি যদি পারি তাহলে বড়রা কেন পারবেন না? আমার মনে হয়, টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের আত্মবিশ্বাস কিছুটা কম ছিল। তবে এটা ঠিক হয়ে যাবে।' সেদিন ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতে এসেই সাংবাদিকদের সামনে বড় ভাইদের কথা বলেছিলেন নাসির। যদিও বড় ভাই তামিম, ইমরুল কিংবা শাহরিয়ার নাফীসের মানসিক অবস্থা মোটেই ভালো না। তামিম তার হাঁটু ব্যথা কাটিয়ে মাঠে ফিরলেও রানে ফেরেননি। ইমরুল কায়েসকে এক ম্যাচে বসিয়ে রাখার সুযোগ পেয়ে নাঈমও হাতছাড়া করেছেন। শাহরিয়ার নাফীস মারতে গেলেও আউট হচ্ছেন, আবার ডিফেন্স করতে গিয়েও সুবিধা করতে পারছেন না। তিন নম্বরে নাকি কেউ সাহস করে ব্যাটিংই করতে চাচ্ছেন না।
এ অবস্থা থেকে নাসিরের ১০০ রানের ইনিংসটি সত্যিকারেই মনের বাঘ দূর করবে ক্রিকেটারদের। বাকিরা যেখানে চাপের মধ্যে ভেঙে পড়েন, নাসির নাকি সে চাপটাই উপভোগ করেন। জিম্বাবুয়ে সিরিজে নাসিরকে প্রথমবারের মতো দলে ডাকার পর নির্বাচক আকরাম খান এভাবেই বর্ণনা করেছিলেন রংপুরের কুড়ি বছরের এ অলরাউন্ডারকে। 'সত্যিই আমি চাপে থেকে ব্যাটিং করাটা উপভোগ করি। যখন চার কিংবা পাঁচ উইকেট পড়ে যায় তখনই ব্যাট করতে ভালো লাগে আমার। জানি না কেন, তবে আমি এমনই।' বিকেএসপির ছাত্র নাসির প্রিমিয়ার লীগে বেশ কয়েকবছর আবাহনীর হয়ে খেলেছিলেন। বড় ক্লাবের হয়ে ছয় এবং সাত নম্বর ব্যাটিংয়ে নেমে নিয়মিতই চাপ সামলাতে হতো তাকে। হয়তো এ কারণেই নাসির অন্যদের চেয়ে একটু বেশি পরিণত।
মাত্র কয়েকদিন আগেই 'এ' দলের হয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়ে চার দিনের ম্যাচে ১৩৪ রানের ইনিংস খেলেছেন। নাসির মনে করেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের পর 'এ' দলের হয়ে খেলার সুবিধা পাচ্ছেন তিনি পাকিস্তান সিরিজে। 'ম্যাচের মধ্যে থাকার একটা সুবিধা অবশ্যই আছে।' নাসির এ সুবিধাটা লুফে নিলেও জাতীয় দলের অনেক তারকা ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের পর ছুটি নিয়ে ঘরোয়া লীগ থেকে নাম উঠিয়ে নিয়েছেন। তারাই এখন পাকিস্তান সিরিজে রানখরায় ভুগছেন। অথচ নাসিরের মতো নবাগত জিম্বাবুয়ে সিরিজে ৬৩ রানের ইনিংস খেলে ওয়ানডেতে অভিষিক্ত হয়েছিলেন। পরের পাঁচ ম্যাচে দুই অঙ্কের ঘরেও যেতে পারেননি; কিন্তু নাসিরের কঠিন পরিশ্রম এবং নিজস্ব ব্যাটিং স্টাইল ধরে রাখার কারণেই দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। এরপর আবার এই সেঞ্চুরি। ৯ ম্যাচে ২৫১ রানের মালিক নাসিরকেই তাই ড্রেসিংরুমে উদাহরণ হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন কোচ স্টুয়ার্ট ল। সাত-পাঁচ না ভেবে টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের নাসিরের মতো করে নিজেদের স্বাভাবিক খেলাটাই খেলতে বলেছেন তিনি।

No comments

Powered by Blogger.