হরতালে খোকাকে নিয়ে উত্তেজনা-পুরান ঢাকায় সংঘর্ষ পুলিশের গাড়িতে আগুন

ঢাকা সিটি করপোরেশন বিভক্ত করার প্রতিবাদে বিএনপির ডাকা হরতালে উত্তাপ ছিল পুরান ঢাকার কোর্ট-কাচারি এলাকায়। আদালতপাড়ায় ব্যাপক সংঘর্ষের পর সেখান থেকে ঢাকা সিটি করপোরেশনের সদ্য বিদায়ী মেয়র সাদেক হোসেন খোকাকে পুলিশি 'হেফাজতে' নেওয়াই ছিল গতকালের হরতালের বড় ঘটনা। খোকাকে ভ্যানে তুলে নেওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যে তাকে গুলশানের বাসায় পেঁৗছে দেয় পুলিশ। অবশ্য বাসা থেকে সঙ্গে সঙ্গে গুলশানে ইউনাইটেড
হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। বিএনপি দাবি করেছে, আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে আহত হয়েছেন খোকা। ঘটনার প্রতিবাদে আজ সোমবার নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করবে দলটি। পুলিশ অবশ্য বলছে, পুলিশ হেফাজতে ছুরিকাঘাত করার কোনো সুযোগ নেই। তিনি মিছিলে ইটের আঘাত পেয়ে থাকতে পারেন। পুলিশ ও ছাত্রলীগের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় আদালত চত্বরে পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যানসহ দুটি গাড়িতে অগি্নসংযোগ ও ১০টি গাড়ি ভাংচুর করে পিকেটাররা। এ সময় টিয়ার শেল ও লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয় পুলিশ।
বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনা ছাড়া রাজধানীতে মোটামুটি শান্তিপূর্ণ সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালিত হয়েছে। কয়েকটি স্থানে সংঘর্ষ, লাঠিচার্জ, ককটেল বিস্ফোরণ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশের শক্ত বাধার মুখে রাজপথে দাঁড়াতে পারেননি বিএনপিসহ চারদলীয় জোটের নেতাকর্মীরা। অবশ্য বেশিরভাগ পয়েন্টে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে মিছিল করার চেষ্টাও করেননি তারা। ভোর থেকেই নয়াপল্টনে
বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নেতারা ছিলেন অবরুদ্ধ। সংসদ ভবন এলাকায় সাংসদদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। হরতালে সারা ঢাকায় পুলিশসহ অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। আটক হয়েছে ৩৪ জন পিকেটার। অবশ্য বিএনপি দাবি করেছে, তাদের আড়াইশ'র বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের হামলায় শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছে বলেও দাবি করেছে দলটি।
বিভিন্ন স্থানে হরতালবিরোধী মিছিল করেছে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগসহ বিভিন্ন সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন। অবশ্য বিএনপি ছাড়া চারদলীয় ঐক্যজোটের অন্য শরিক দল নতুন রাজনৈতিক মিত্র এলডিপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো সমর্থন দিলেও রাজপথে তাদের দেখা যায়নি।
হরতালে রাজধানীতে পিকেটিং কম হলেও যানবাহন চলাচল ছিল কিছুটা কম। ঢাকা থেকে দূরপাল্লার বাস না ছাড়লেও ট্রেন, লঞ্চ ও বিমান চলাচল স্বাভাবিক ছিল। নগরীতে রিকশা চলাচল স্বাভাবিক ছিল। কিছু বাস চলাচল করেছে। অবাধে চলেছে প্রাইভেটকার। প্রধান সড়কের পাশের দোকানপাট না খুললেও পাড়া-মহল্লার গলিপথে দোকান খোলা ছিল। সচিবালয়সহ অফিস-আদালতে উপস্থিতি ছিল কম। প্রতিদিনের মতো বহিরাগত দর্শনার্থীর ভিড়ও লক্ষ্য করা যায়নি। ব্যাংক-বীমায় লেনদেন ছিল কম। ব্যাংক ও বড় প্রতিষ্ঠানের মূল ফটক বন্ধ রাখা হয়েছিল। অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাস হয়নি। হরতালের মধ্যেও শেয়ারবাজারে লেনদেন স্বাভাবিক হলেও দরপতন হয়েছে। অবশ্য হরতালের মধ্যেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিভিন্ন পরীক্ষা চলেছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকাকে পুলিশের উপস্থিতিতে 'আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীরা' ছুরিকাঘাত করেছে।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এলজিআরডিমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার জন্যই হরতাল করছে।
যেভাবে পুলিশের প্রিজন ভ্যানে খোকা : দুপুর পৌনে ১২টার দিকে সাদেক হোসেন খোকার নেতৃত্বে জজকোর্টের মূল গেট দিয়ে একটি মিছিল বের করার চেষ্টা করা হয়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে খোকার ব্যাপক ধস্তাধস্তি হয়। মিছিলকারীরা ইট নিক্ষেপ করলে পুলিশের কোতোয়ালি জোনের এসি রাজীব আল মাসুদ মাথায় আঘাত পান। ইটপাটকেল নিক্ষেপের মুখে পুলিশ সরে গেলে হরতাল সমর্থনকারীরা রাস্তায় বের হয়ে অন্তত ১০টি গাড়ি ভাংচুর করে। জজকোর্টের ভেতরে রাখা পুলিশের একটি গাড়ি লক্ষ্য করে ব্যাপক ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে হরতাল সমর্থনকারীরা। এক পর্যায়ে সাদা হাফ হাতা গেঞ্জি পরা এক যুবক পুলিশের ওই গাড়িটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মুহূর্তেই গাড়িটি দাউদাউ করে জ্বলতে থাকে। একই সময় গেটের বাইরে পুলিশের একটি মোটরসাইকেল জ্বলতে দেখা যায়। আদালত এলাকায় এমন পরিস্থিতি শুরু হলে সাদেক হোসেন খোকা ঢাকা বারের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইকবাল হোসেনের কার্যালয়ে আশ্রয় নেন। পুলিশ আদালত চত্বরে ঢুকে লাঠিচার্জ ও টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে হরতাল সমর্থনকারীদের মিছিল ছত্রভঙ্গ করে দেয়। একই সময় ছাত্রলীগের একটি মিছিল আদালত এলাকায় প্রবেশ করলে সংঘর্ষ বেধে যায়। এ সময় লালবাগ জোনের ডিসি খোরশেদ আলম ও এডিসি কামরুজ্জামানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঢাকা বারের সাধারণ সম্পাদকের কার্যালয়ে প্রবেশ করে। পুলিশের দলটি খোকাকে টেনেহিঁচড়ে সেখান থেকে উঠিয়ে নিতে চাইলে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা বাধা দেন। সাদা পোশাকের এক পুলিশ কর্মকর্তা খোকাকে বাইরে নেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় বারের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইকবাল হোসেন বাধা দিলে তাকে টেনেহিঁচড়ে বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশ কর্ডনের মধ্যে বার ভবন থেকে বাইরে গিয়ে খোকা নিজেই প্রিজন ভ্যানে ওঠেন। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে খোকাকে বহনকারী প্রিজন ভ্যানটি নিয়ে পুলিশ আদালত এলাকা ত্যাগ করে।
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ধোলাইখাল এলাকা থেকে মিছিল বের করেন ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা। সেখানে পুলিশ ব্যানার কেড়ে নিয়ে মিছিলকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার চেষ্টা করলেও খোকা ১৫-২০ জনের মিছিল নিয়ে ধোলাইখাল টং মার্কেটের দিকে চলে যান। পরে সিএমএম কোর্ট চত্বরে খোকা এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বলেন, 'ঢাকা আমাদের আবেগের বিষয়। কোনোভাবেই ঢাকাকে বিভক্তি হতে দেব না। এই ভাগ সংবিধানসম্মত নয়। দেশের স্বাধীনতা বিনষ্ট করার জন্য বাইরের কোনো ষড়যন্ত্র কি-না তা ভেবে দেখতে হবে।'
পুলিশের বক্তব্য : ঘটনাস্থলে লালবাগ জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার কামরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকাকে আটক বা গ্রেফতার করা হয়নি। তাকে সংঘর্ষ থেকে নিরাপদ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সাদেক হোসেন খোকার নেতৃত্বে আদালত চত্বরে পুলিশের গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। ইট নিক্ষেপ করে পুলিশ সদস্যদের আহত করা হয়। এক পর্যায়ে হরতাল সমর্থনকারী ও হরতালবিরোধীদের মধ্যে আদালত চত্বরে সংঘর্ষ শুরু হলে পুলিশ তাকে নিরাপদে নিয়ে যায়। আটক করা না হলে সাবেক মেয়রকে প্রিজন ভ্যানে কেন নেওয়া হলো, জানতে চাইলে পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলেন, কাছাকাছি কোনো গাড়ি না থাকায় তাকে প্রিজন ভ্যানে নেওয়া হয়।
কোতোয়ালি থানার ওসি সালাউদ্দিন খান সমকালকে জানান, সাবেক মেয়রকে নিরাপদে তার গুলশানের বাসায় পেঁৗছে দেওয়া হয়েছে।
ইউনাইটেড হাসপাতালে খোকা : গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালের ৪১৭ নম্বর কেবিনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন সাদেক হোসেন খোকা। তিনি সেখানে ডা. আবু সাঈদ এম এম রহমানের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন। বিকেলে ডা. সাঈদ সাংবাদিকদের বলেন, খোকা পায়ে কিছুটা আঘাত নিয়ে এসেছেন। এদিকে সাদেক হোসেন খোকাও বলতে পারেননি কীভাবে তিনি আঘাত পেয়েছেন।
কর্তব্যরত অপর এক চিকিৎসক রাত সাড়ে ৭টায় সমকালকে বলেন, ধারালো চোখা বস্তু দিয়ে সাদেক হোসেন খোকাকে আঘাত করা হয়েছে। তার পায়ে চারটি সেলাই দিতে হয়েছে। আজ সোমবার তিনি বাসায় ফিরতে পারবেন।
এদিকে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, এলডিপি সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, ড. আবদুল মঈন খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা. জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল প্রমুখ তাকে দেখতে যান।
আইনজীবীদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য : ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইকবাল হোসেন বলেন, মামলার কাজে পরামর্শের জন্য সাদেক হোসেন খোকা তার কার্যালয়ে আসেন। এ সময় পুলিশের ছত্রচ্ছায়ায় ছাত্রলীগ ক্যাডাররা ঢাকা বারে ঢুকে আইনজীবীদের ওপর হামলা চালায়। হামলাকারীরা সবাই বহিরাগত সন্ত্রাসী।
অন্যদিকে ঢাকা বারের সভাপতির কার্যালয়ে ডাকা আওয়ামী লীগপন্থি আইনজীবীদের সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বারের সহ-সাধারণ সম্পাদক একেএম আমিন উদ্দিন মানিক বলেন, হরতালের নামে সাদেক হোসেন খোকার নেতৃত্বে বিএনপির সন্ত্রাসীরা আদালত চত্বরে গাড়ি পুড়িয়ে ও ভাংচুর চালিয়ে বারের সাধারণ সম্পাদকের কার্যালয়ে আশ্রয় নেয় এবং খোকার নেতৃত্বে আদালত অঙ্গনে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে।
নগর ভবনের চিত্র : হরতালে শ্রমিক-কর্মচারী লীগ ও পুলিশের দখলে ছিল নগর ভবন। বেশ কিছু বহিরাগত ক্যাডারও নগর ভবনে সকাল থেকে অবস্থান করে বলে নগর ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অভিযোগ করেছেন। নগর ভবন দখলে রাখা শ্রমিক-কর্মচারী লীগের ব্যানারে দফায় দফায় হরতালবিরোধী মিছিল হয়েছে। এদিন ডিসিসি বিভক্তির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারী সমন্বয় পরিষদের কাউকে নগর ভবনে দেখা যায়নি। এদিকে আজ বিকেল ৪টায় স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানকের সঙ্গে বৈঠকে বসছে ডিসিসি কর্মকর্তা-কর্মচারী সমন্বয় পরিষদ।
সংসদ এলাকায় সাংসদদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি : সকাল ৯টার মধ্যেই সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অবস্থান নেন বিএনপির সাংসদরা। এ সময় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজাসহ বিভিন্ন স্থান ও প্রবেশ মুখ কর্ডন করে রাখে পুলিশ। এক পর্যায়ে বিএনপির সাংসদরা মিছিলের চেষ্টা করলে পুলিশ ধাওয়া দেয়। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে মিছিলকারীরা সংসদ ভবনে ঢুকে পড়েন। মিছিল সহকারে তারা মানিক মিয়া এভিনিউর দিকে যেতে চাইলে পুলিশ তাদের ঘিরে ফেলে। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। এতে সাংসদ শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ও আশিফা আশরাফী পাপিয়া মাটিতে পড়ে যান। পুলিশের বাধার মুখে তারা সংসদ ভবনের পূর্ব পাশের এক নম্বর এমপি হোস্টেলের পানির পাম্পের সামনে সমাবেশ করেন।
মহাখালীর চিত্র : ?সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তিতুমীর কলেজের ছাত্রদল শাখা রসুলবাগ এলাকায় চলাচলকারী বাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাঙার উদ্দেশ্যে ইটপাটকেল ছোড়ে। এ সময় পুলিশ তাদের ধাওয়া করলে তারাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে।
গুলশান এলাকার চিত্র : বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমানের নেতৃত্বে সকাল ৮টা থেকে সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত গুলশান-২ এর ৬২ নম্বর রোডে পিকেটিং করেন মহিলা দলের নেতাকর্মীরা। এ সময় পিকেটারদের সঙ্গে দুই দফা মৃদু সংঘর্ষ হয় পুলিশের সঙ্গে।
মিরপুর, মোহাম্মদপুর ও গাবতলীর চিত্র : সকাল থেকে মিরপুরের বিভিন্ন সড়কে যাত্রীবাহী বাস চলতে দেখা যায়। দুপুরে মিরপুর ১ নম্বর গোলচত্বরে এক ঘণ্টার ব্যবধানে দুটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। মিরপুরে সকাল থেকে হরতালবিরোধী মিছিল বের করা হয়।
শান্ত ব্যস্ত পল্টন : হরতালে শান্ত ও ব্যস্ত ছিল রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু পল্টন এলাকা। বাংলাদেশের রাজনীতিতে হরতাল মানেই পল্টন এলাকা রণক্ষেত্র। রোববারের হরতালে ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র। পুরানা পল্টন, মুক্তাঙ্গন, বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটসহ দৈনিক বাংলা মোড়ে মোতায়েন ছিল বিপুলসংখ্যক পুলিশ। রাস্তায় নামতে পারেনি হরতাল সমর্থকরা। সকালে কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে যান চলাচল। দুপুর ১২টার পর প্রায় স্বাভাবিক হয়ে আসে জীবনযাত্রা।
দুই মামলা দায়ের, ৭ জন গ্রেফতার : হরতালে পুরান ঢাকার জজকোর্ট এলাকায় পুলিশের গাড়ি পোড়ানো ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। দুটি মামলাতেই অজ্ঞাতপরিচয় দেড় শতাধিক জনকে আসামি করা হয়েছে। গতকাল রাতে পুলিশ বাদী হয়ে এ মামলা করে। পুলিশ আহত হওয়ার ঘটনায় মামলার বাদী কোতোয়ালী থানার এসআই নাজমুল হোসেন। অন্যদিকে গাড়ি পোড়ানো মামলার বাদী চালক কনস্টেবল হাসান আল মামুন। গাড়ি পোড়ানো মামলাটি করা হয়েছে দ্রুতবিচার আইনে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ ৭ জনকে গ্রেফতার করেছে। তাদের মধ্যে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেফতার হয় ৫ জন। তারা হচ্ছেন_ নুরুল ইসলাম খান ওরফে নাসিম, জাকির হোসেন, পাপ্পু ওরফে শান্তি, এরশাদ ও জালাল আকমল। রাতে অভিযান চালিয়ে পুলিশ সোহাগ ও শহীদ নামে দু'জনকে গ্রেফতার করে।
থানার ওসি সালাউদ্দিন খান সমকালকে জানান, এ দুটি মামলায় সাদেক হোসেন খোকা বা কোনো আইনজীবীকে আসামি করা হয়নি। তদন্তে তাদের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দুপুরে আটক হওয়া পাঁচজনকে দুই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এছাড়াও ফুটেজ দেখে চিহ্নিত করে অপর আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

No comments

Powered by Blogger.