নভেম্বরে দেশে গাড়ি এসেছে মাত্র ৫৩টি by আসিফ সিদ্দিকী,

ট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে গত দুই বছরে প্রতি মাসে দেড় থেকে দুই হাজার জাপানি গাড়ি আমদানি হলেও গত মাসে গাড়ি আমদানি হয়েছে মাত্র ৫৩টি। একটি মাত্র জাহাজে নিয়ে আসা এই গাড়ি ছাড়া দেশে আর কোনো গাড়ি আসেনি নভেম্বর মাসে। এর মধ্যে নতুন গাড়ি ৪৮টি এবং রিকন্ডিশন্ড বা একবার ব্যবহৃত গাড়ি মাত্র পাঁচটি। নভেম্বর মাসে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে কম গাড়ি আমদানি হওয়ার জন্য রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানির শুল্কহার বাড়ানো, ভারতীয় নতুন


গাড়ি আমদানিতে উৎসাহিত করা এবং দেশে গাড়ি বিক্রি কমে যাওয়াকে দায়ী করেছেন ব্যবসায়ীরা।চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার পর থেকে গাড়ি আমদানি ক্রমাগত কমছে। গত জানুয়ারি মাসে জাপান থেকে গাড়ি আসে এ বছরের মাসগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি_এক হাজার ৬৬৮টি। আর অক্টোবরে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৯০-তে, অর্থাৎ প্রায় এক তৃতীয়াংশে নেমে আসে। অথচ জাপানে সুনামির পরও গত এপ্রিলে দেশে গাড়ি এসেছিল এক হাজার ১৪৬টি।
রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানিকারক ও পরিবেশক সংস্থা বারভিডার হিসাব অনুযায়ী চলতি বছরের ১১ মাসে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর দিয়ে দেশে মোট গাড়ি আমদানি হয়েছে ১২ হাজার ৭৯২টি। অন্যদিকে গত বছর একই সময়ে আমদানি হয়েছিল ২৭ হাজার ৬৪৩টি। ২০০৯ সালের একই সময়ে এ সংখ্যা ছিল ৩১ হাজার ২৯৬টি। দুই বছরের ব্যবধানে জাপান থেকে দেশে গাড়ি আমদানি প্রায় এক তৃতীয়াংশ কমে গেছে।
চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা যায়, এ বন্দর দিয়ে চলতি বছর জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে জাপান থেকে মোট গাড়ি আমদানি হয়েছে ৯ হাজার ৮৬৩টি। এর মধ্যে নতুন গাড়ি এসেছে দুই হাজার ৭৫৩টি, আর রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি করা হয়েছে সাত হাজার ১১০টি। একই সময়ে অতীতে এত কম সংখ্যক গাড়ি আমদানি আর কখনো হয়নি।
বারভিডার সভাপতি আবদুল মান্নান খসরু কালের কণ্ঠকে বলেন, 'জাপান থেকে গাড়ি আমদানি এক-তৃতীয়াংশে নেমে আসায় ব্যবসা বন্ধ হওয়ার উপক্রম। গাড়ি বিক্রি কমে যাওয়ায় গত দুই বছরে দেশে অর্ধশত শোরুম বন্ধ হয়ে গেছে। এর অধিকাংশই ঢাকার শোরুম।'
গাড়ি আমদানি কমে যাওয়া প্রসঙ্গে চট্টগ্রামের শোরুমের 'ফোর হুইলার্স' মালিক ও বারভিডার সহসভাপতি হাবিবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ভারত থেকে আসা নতুন গাড়ি দেশের রিকন্ডিশন্ড গাড়ির বাজার দখল করে নিচ্ছে।' তিনি অভিযোগ করেন 'প্রশাসনের একটি চক্রের সহায়তায় শুল্ক সুবিধায় এসব গাড়ি অবাধে দেশে আসছে। অথচ সরকার জাপানের রিকন্ডিশন্ড গাড়ির ওপর কড়াকড়ি আরোপ করছে। এ বৈষম্যমূলক নীতি চলতে পারে না।'
দেশে মোট গাড়ি আমদানির সিংহভাগই চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে খালাস করা হয়। ফলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে রাজস্ব আয়ে শীর্ষ অবস্থানে ছিল গাড়ি আমদানি খাত। কিন্তু সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের শীর্ষ অবস্থানে চলে এসেছে সিগারেট। আর গাড়ি খাতের ক্রম নেমে এসেছে অনেক নিচে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমসের এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, 'গাড়ি আমদানি যেভাবে কমছে, তাতে করে কাস্টমসের বার্ষিক রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা কঠিন হয়ে পড়বে।'
গাড়ি আমদানি কম হওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দরে চার হাজার গাড়ি রাখার জায়গা দীর্ঘদিন ধরে খালি রয়েছে। গাড়ি জট নিয়ে এখন বন্দর কর্মকর্তাদের আর মাথা ঘামাতে হয় না। এতে বন্দরে গাড়ি রাখা বাবদ রাজস্ব আয়ও কমেছে। চট্টগ্রাম বন্দরে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত রিকন্ডিশন্ড ও নতুন গাড়ি রাখা ছিল এক হাজার ৩১৮টি।
চট্টগ্রাম বন্দরে গত বছর এপ্রিল মাসে রেকর্ড পরিমাণ (প্রায় পাঁচ হাজার) গাড়ি আমদানি হয়েছিল। সাধারণত প্রতি মাসে তিন থেকে চারটি বিশেষায়িত জাহাজে করে জাপান থেকে গাড়ি আমদানি হয়ে থাকে। কিন্তু গত বছর থেকে গাড়ি নিয়ে জাহাজ আসা কমে যায়। চলতি বছরে প্রতি মাসে গড়ে দুটি করে গাড়ির জাহাজ বন্দরে এসেছে। আর এই জাহাজগুলোও আগের তুলনায় অনেক ছোট। নভেম্বরে জাপান থেকে এসেছে বিশেষায়িত জাহাজ 'এশিয়ান কারাত'। এতে মাত্র ৫৩টি গাড়ি নিয়ে আসার কথা জানান শিপিং এজেন্ট এনওয়াইকের জেনারেল ম্যানেজার রবি শংকর। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'জাপান থেকে দীর্ঘদিন ধরে গাড়ি পরিবহনের মাধ্যমে আমাদের সুনাম অর্জিত হয়েছে। এই সুনাম অক্ষুণ্ন রাখতে কিছুটা ছাড় আমাদের দিতে হচ্ছে। তা ছাড়া এখন গাড়ি আসা কমে গেলেও ভবিষ্যতে বাড়বে_এই আশায় আমরা ক্ষতি স্বীকার করে পরিবহন অব্যাহত রাখছি।'
 

No comments

Powered by Blogger.