নিরপরাধ ব্যক্তির হাজতবাস-শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে হবে

পরাধ না করেও বছরের পর বছর হাজতে কাটাতে হয় কারো কারো। বিনা অপরাধে এই ভোগান্তি থেকে রেহাই পেতে ভুক্তভোগীকে সহায়-সম্পদ হারাতে হয় প্রায়ই। নিজের সহায়-সম্পদ না থাকলে আইনি সহায়তা পায় না রাষ্ট্রের কাছ থেকে। সরকারি বিশেষ সহযোগিতা পাওয়া এ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলেও এর উদাহরণ খুঁজে পাওয়া যায় না। হত্যা, ডাকাতি কিংবা চুরির মামলায় যদি নির্দিষ্ট কাউকে আসামি করা সম্ভব না হয়, তাহলে কে যে কখন সেই মামলার


আসামি হয়ে যাবে, তার কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই। কালের কণ্ঠের এক প্রতিবেদনে ফুটে উঠেছে তেমনই কিছু তথ্য। দেখা গেছে, কাউকে কাউকে হয়তো মুক্তি দেওয়ার নাম করে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করা হয়েছে। কিন্তু কার্যত দেখা যায়, পুলিশ তার পক্ষে কোনো কাজই করেনি। মাঝখান থেকে টাকা হারাচ্ছে ভুক্তভোগীরা। সাধারণত নিম্ন আয়ের মানুষই এর শিকার হয়ে থাকে এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, একটি পরিবারের হয়তো উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটিই পুলিশের এই হয়রানিতে পড়ছে। ফলে একটি পরিবার উপার্জনক্ষম ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। এই অসহায়ত্ব থেকে বাঁচানোর জন্যও কেউ এগিয়ে আসে না। বরং সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হতে হয় তাকে। অথচ ঘটনার ধারেকাছেও হয়তো সে ছিল না। এসব ঘটনা নাগরিকের মানবাধিকার লঙ্ঘন। মানবাধিকার হারিয়ে যে ব্যক্তিটি যখন বেকসুর খালাস হলো তখন তার ক্ষতিপূরণের কোনো ব্যবস্থা থাকে না। ফলে আর্থিক ও সামাজিক অপূরণীয় ক্ষতির মুখে তাকে পড়তে হয়, যা কোনোমতেই কাম্য হতে পারে না।
এসব কাজের সঙ্গে পুলিশের দায়িত্ব পালনের বিষয়টি জড়িত বেশির ভাগ ক্ষেত্রে। আন্দাজের ওপর কাউকে গ্রেপ্তার করার পর সেই গ্রেপ্তারকে বৈধতাদানের জন্যই আসলে হয়রানিগুলো তৈরি হয়। পুলিশের দক্ষতার অভাব কিংবা সততার অভাবও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এ ধরনের হয়রানির পেছনে কাজ করে। অজানা ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা করার রেওয়াজ সহজে বন্ধ হবে_এমন আশা করা যায় না। সে ক্ষেত্রে চিন্তা করতে হবে, কিভাবে এ ধরনের হয়রানির পরিমাণ কমিয়ে আনা যায়। তার জন্য আইনি সহায়তা প্রদানের ব্যাপারে সরকারকে উদ্যোগী ভূমিকা নিতে হবে। একই সঙ্গে কোনো ব্যক্তি যদি নির্দোষ প্রমাণিত হয় তাহলে তাকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়টিও চিন্তা করতে হবে। সর্বোপরি পুলিশের দক্ষতা ও সততা বৃদ্ধির দিকে নজর দিতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.