সবুজের সমারোহে ঘেরা অপূর্ব পরিবেশ by শাহনুর ওয়াহিদ

সারা দিনের হাড়ভাঙা খাটুনির পর একজন মানুষ চায় ঘরে ফিরে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটাতে, রাতের খাবারের পর তাদের সঙ্গে নিয়ে হাঁটতে। কিন্তু এই মহানগরে তেমন একটি স্থান কোথায়, যেখানে ছিনতাইকারীর কবলে পড়ার ভয় নেই কিংবা দ্রুত ছুটে আসা মিনিবাসের তলায় পিষ্ট হওয়ার ভয় নেই? অবশ্যই একসময়ের প্রধান আবাসিক এলাকা ওয়ারী, গেণ্ডারিয়া, সেগুনবাগিচা, পুরানা পল্টন, আজিমপুর, ধানমণ্ডি, বনানী বা গুলশান নয়।


ওই সব অঞ্চল তার আসল চেহারা হারিয়ে ফেলেছে। প্রতিদিন ওই সব এলাকায় গজিয়ে উঠছে বাণিজ্যিক ভবন। আবাসিক এলাকার জায়গা দ্রুত পাল্টে গিয়ে সেসব স্থান দখল করে নিচ্ছে দোকান-পসরা। চুরি-ছিনতাই এসব এলাকায় নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কখনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনেই কখনো তাদের চোখের বাইরে।
কিন্তু বসুন্ধরা-বারিধারার পরিবেশ এর থেকে সম্পূর্ণ আলাদা (বিশেষ করে বারিধারার পূর্ব এলাকা)। এ কথা আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি। গত এক বছর এ অঞ্চলে বসবাস করছি। সারা দিনের কাজের পর এলাকায় মনোরম পরিবেশে ঘুরে বেড়িয়ে বেশ উপভোগ করতে পারছি। সারা দিনের কাজের পর শরীর সুস্থ রাখতে হাঁটাহাঁটি করার জন্য এটি একটি উপযুক্ত পরিবেশ। কিন্তু এ জন্য তো আমার কিছু দরকার, তাই নয় কি? সে সমস্যাও মিটে গেল এক সপ্তাহের মধ্যে। আমি আনন্দের সঙ্গে লক্ষ করলাম, আমার কিছু বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সহপাঠী সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিয়ে এ এলাকায় বসবাস করতে শুরু করছেন। এ এলাকার বিশেষত্ব কী? আমি তাঁদের কাছে জানতে চেয়েছি। তাঁরা সবাই একই কথা বলেছেন এ এলাকাটি নিরিবিলি এবং নিরাপদ। এ দুটো বিষয়ই তাঁদের কাছে সবচেয়ে বড় বিষয়। অন্য এলাকার মতো এখানে কোনো গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি নেই, নেই কোনো মোটর ওয়ার্কশপ। ঘর থেকে বের হলেই ছোট ছোট দোকান বা রেস্টুরেন্ট অথবা প্রাইভেট অফিস নেই, যা অপরাধীদের আকর্ষণ করতে পারে। এই আবাসিক এলাকায় বসুন্ধরা কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করায় তাঁরা সবাই খুবই প্রশংসা করেছেন। এই নিরাপত্তাব্যবস্থার ফলে একজন মহিলা বাজার করে রাত সাড়ে ১০টায় বাসায় ফিরতে পারেন। একজন হাঁটতে যাওয়া মেয়েমানুষ কোনো পুরুষ সঙ্গী ছাড়াই সন্ধ্যায় একা হাঁটতে বের হতে পারেন। রাস্তার ধার দিয়ে নানা রঙের যে ফুল আর গাছের সমারোহ, তা প্রকৃতিপ্রেমী যেকোনো মানুষকে টানবে। বর্ষা মৌসুমে গাছে গাছে শাখা-প্রশাখা লেগে থাকা আচ্ছাদন তৈরি হয়। শরতের হিমেল হাওয়া শীতের বার্তা বয়ে আনে। বহু প্রজাতির পাখি ইতিমধ্যেই গাছে বাসা বাঁধতে শুরু করেছে। সকালের ঘুম ভেঙে যায় নানা রকম পাখির কলকাকলিতে। যেসব এলাকার গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে এবং যেসব এলাকায় বিল্ডিং তৈরি হচ্ছে সেসব এলাকা থেকে এ অঞ্চলে মাইগ্রেট করতে শুরু করেছে এখানে। সন্ধ্যায় আকাশে ঝাঁক বেঁধে সবুজ টিয়াপাখি ফিরতে দেখা যায়। অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা মহানগরের উচ্চ শব্দের জন্য বিশেষ বদনাম আছে। এর মধ্যে এ এলাকা যেন একটি দ্বীপের মতো। যেই এখানে প্রথম আসবে তার কাছেই এর নীরবতা, শান্তভাব, শৃঙ্খলা চোখে পড়বে। কোথায় এমনটি দেখা যাবে যে আবাসিক এলাকার ভেতর দিয়ে প্রশস্ত রাস্তা প্রতিটি এক কিলোমিটার পর্যন্ত চলে গেছে?
এক বছরের বসুন্ধরা এলাকায় বসবাসের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, এটি এমনই একটি অঞ্চল, যেখানে যে কেউ এক কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় প্রয়োজনীয় সব কিছু পেতে পারেন। বসুন্ধরায় প্রবেশের দুই প্রান্তে বাণিজ্যিক এলাকায় দুটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। একটি বিশ্বমানের হাসপাতাল, প্রায় সব বড় ব্যাংকের শাখা, একটি অথবা দুটি ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, দু-তিনটি স্থানীয় স্কুল, একটি অত্যন্ত উন্নতমানের কনভেনশন সেন্টার এবং বেশ কয়েকটি দোকান ও রেস্টুরেন্ট রয়েছে
এ এলাকায়।
আমি শুনেছি, নির্বিঘ্নে ও দ্রুত যাতায়াত সুবিধার জন্য নতুন করে প্রবেশপথ তৈরি করা হচ্ছে। আমার বিশ্বাস, নতুন রাস্তা হয়ে গেলেই অনেক নতুন পরিবার এই বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বসবাস করতে চলে আসবে এবং তারা এ এলাকাটা পছন্দ করবে। এ লেখাটি যখন আমি সন্ধ্যাবেলা লিখছিলাম, তখন শুনতে পেলাম এক ঝাঁক টিয়াপাখি ডাকতে ডাকতে উড়ে যাচ্ছে। কী সুন্দর সে পাখির কলোরব! আমাদের প্রত্যেকের মাঝে নিভৃতচারী যে কবিসত্তা বাস করে, তার জন্য এটি সত্যি এক আশীর্বাদপুষ্ট এলাকা।
লেখক : দৈনিক দ্য ডেইলি সানের যুগ্ম সম্পাদক।
লেখাটি ইংরেজি থেকে অনূদিত

No comments

Powered by Blogger.