স্মরণ-স্বাধীন বাংলার অন্যতম স্বপ্নদ্রষ্টা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী

৮৯২ সালের ৮ সেপ্টেম্বর। বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুরের সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম হয় এক শিশুর। নাম রাখা হয় হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। মা-বাবার কনিষ্ঠ সন্তান। বাবা জাহিদ সোহরাওয়ার্দী। তিনি ছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিখ্যাত বিচারক। প্রথা অনুসারে পরিবারের সবাই উর্দু ভাষা ব্যবহার করলেও তিনি নিজের ইচ্ছায় বাংলা শেখেন।শিক্ষাজীবন শুরু করেন কলকাতার আলিয়া মাদ্রাসায়। এরপর সেন্ট জেভিয়ারস কলেজ থেকে স্নাতক পাস


করেন। মায়ের অনুরোধে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবি ভাষা ও সাহিত্যে অর্জন করেন স্নাতকোত্তর ডিগ্রি। ১৯১৩ সালে চলে যান যুক্তরাজ্যে। অঙ্ফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞানে সম্মানসহ স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর এখান থেকে আইনে বিসিএল পাস করেন। ১৯১৮ সালে গ্রেস ইন থেকে লাভ করেন বার অ্যাট ল। তারপর ১৯২১ সালে কলকাতায় ফিরে যোগ দেন আইন পেশায়। ১৯২০ সালে ব্রিটিশ ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্যার আবদুর রহিমের মেয়েকে বিয়ে করেন। ওই বছরই রাজনৈতিক অঙ্গনে আসেন তিনি।
এ সময় বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে পাকিস্তান আন্দোলনে ব্যাপক সমর্থন দেন। ১৯৪৬ সালের ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবেও তাঁর ভূমিকা ছিল। এখানে তিনি অখণ্ড স্বাধীন বাংলার প্রস্তাব রেখেছিলেন। অনেকেই মনে করেন, সেদিনের লাহোর প্রস্তাবের মধ্যেই ছিল আজকের স্বাধীন বাংলার বীজ। তবে তখন তাঁর অখণ্ড বাংলার ধারণার সঙ্গে অনেক নেতাই একমত ছিলেন না। যে কারণে ১৯৪৭ সালে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান।
তবে পাকিস্তানে না গিয়ে থেকে যান কলকাতায়। ১৯৫৩ সালে এ কে ফজলুল হক ও মওলানা ভাসানীর সঙ্গে গঠন করেন যুক্তফ্রন্ট। আওয়ামী মুসলিম লীগের সঙ্গে কৃষক শ্রমিক পার্টি, পাকিস্তান গণতন্ত্রী দল ও পাকিস্তান খেলাফত পার্টি মিলে গঠিত হয় যুক্তফ্রন্ট। ১৯৫৪ সালে পূর্ব পাকিস্তান পরিষদ নির্বাচনে ২৩৭টি আসনের ২২৩টি পায় যুক্তফ্রন্ট। এর মধ্যে ১৪৩টি পেয়েছিল আওয়ামী মুসলিম লীগ। ১৯৫৫ সালে অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে 'মুসলিম' শব্দটি বাদ দেওয়া হয়। এরপর বগুড়ার মোহাম্মদ আলী মন্ত্রিসভায় তিনি আইনমন্ত্রী নিযুক্ত হন। ওই বছরই যোগ দেন পাকিস্তান আইনসভার বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে। ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের প্রথম সংবিধান প্রণয়নে তাঁর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। ওই বছরই চৌধুরী মোহাম্মদ আলীর পদত্যাগের পর তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন। এ সময় পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণে পদক্ষেপ নেন। এ কারণে জন্ম হয় রাজনৈতিক বিরোধিতার। ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন জারি করেন ইস্কান্দার মির্জা। ১৯৫৯ সালের আগস্টে ইলেকটিভ বডি ডিসকোয়ালিফিকেশন অর্ডার অনুসারে পাকিস্তানের রাজনীতিতে নিষিদ্ধ করা হয় সোহরাওয়ার্দীকে। রাষ্ট্রবিরোধী কাজের অপরাধ দেখিয়ে ১৯৬২ সালের ৩০ জানুয়ারি গ্রেপ্তার করা হয় তাঁকে। রাখা হয় করাচি কেন্দ্রীয় কারাগারে। মুক্তি পান ১৯৬২ সালের ১৯ আগস্ট। ওই বছরের অক্টোবরেই আইয়ুববিরোধী আন্দোলনের উদ্দেশ্যে গঠন করেন ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট। ১৯৬৩ সালের এই দিনে লেবাননের বৈরুতে মারা যান এই মহান নেতা। তাঁকে সমাহিত করা হয় ঢাকায়।
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ছিলেন বিখ্যাত বাঙালি রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী। ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার অন্যতম স্বপ্নদ্রষ্টা। তিনি গণতান্ত্রিক রীতি ও জনমতের প্রতি ছিলেন শ্রদ্ধাশীল। এ জন্য তাঁকে বলা হয়, 'গণতন্ত্রের মানসপুত্র'। আজ তাঁর প্রয়াণ দিবসে তাঁকে আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি।
তামান্না ইসলাম অলি

No comments

Powered by Blogger.