আরও ২ হাজার কোটি টাকা চায় বিদ্যুৎ বিভাগ by জাফর আহমেদ

লতি ২০১১-১২ অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (আরএডিপি) রাজস্ব থেকে অতিরিক্ত দুই হাজার ২৩৩ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। তবে বৈদেশিক অর্থ ব্যয় করতে না পারায় প্রকল্প সহায়তা থেকে ১০৭ কোটি টাকা ফেরত দিতে চায় মন্ত্রণালয়। চলতি অর্থবছরের মধ্যেই এ বিভাগটি বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প শেষ করতে পারবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে। প্রস্তাবনাটি ইতিমধ্যে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে


বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের মূল এডিপিতে বিদ্যুৎ বিভাগকে সবচেয়ে বেশি সাত হাজার ১৬৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে চার হাজার ৬৮১ কোটি এবং বৈদেশিক ঋণ বাবদ দুই হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু বৈদেশিক অর্থ ব্যয় করতে সমস্যা হওয়ায় সংশোধিত এডিপিতে প্রকল্প সাহায্যের ১০৭ কোটি টাকা ফেরত দিতে চায় তারা। তবে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ মেয়াদ অনুযায়ী এ বছরের মধ্যেই শেষ করার লক্ষ্যে সরকারি তহবিল থেকে অতিরিক্ত দুই হাজার ২৩৩ কোটি টাকা চেয়েছে বিভাগটি। সব মিলিয়ে সংশোধিত এডিপিতে মোট ৯ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা চেয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এর মধ্যে দেশীয় সম্পদ থেকে ছয় হাজার ৯১৯ কোটি এবং বৈদেশিক ঋণ বাবদ দুই হাজার ৩৭৭ কোটি টাকা নিতে চায় বিদ্যুৎ বিভাগ।
সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের মধ্যেই ৯টি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প শেষ করতে চায় বিদ্যুৎ বিভাগ। এ জন্য প্রকল্পগুলোতে বেশি অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। প্রকল্পগুলো হচ্ছে_ ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ও দ্বিতীয় ইউনিট পুনর্বাসন ও আধুনিকায়ন প্রকল্প, সিলেট ৯০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, চাঁদপুর ১৫০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, সিলেট ১৫০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, রেনোভিশন অ্যান্ড অগমেন্টেশন অব ডিস্ট্রিবিউশন লাইনস নির্মাণ, আশুগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্র কমপ্লেক্সের পুনর্বাসন ও আধুনিকায়ন, সিদ্ধিরগঞ্জ ২২০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ারপ্ল্যান্ট নির্মাণ, সঞ্চালন লাইনের সুবিধাসহ নতুন গ্রিড উপকেন্দ্র নির্মাণ ও সম্প্রসারণ এবং মেঘনাঘাট-আমিনবাজার ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন প্রকল্প।
ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের এক ও দুই নম্বর ইউনিটের পুনর্বাসন ও আধুনিকায়ন প্রকল্পে চলতি অর্থবছরের মূল এডিপিতে ১৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সংশোধিত এডিপিতে মূল বরাদ্দের চেয়ে অতিরিক্ত ১৭ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব চেয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এ ছাড়া কনস্ট্রাকশন অব ৮২০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ারপ্ল্যান্ট প্রকল্পে মূল এডিপিতে দুই হাজার ২৪৮ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। সংশোধিত এডিপিতে এখন তিন হাজার ২৬৯ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে।
তবে ভেড়ামারায় ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পে চলতি অর্থবছরের এডিপিতে বৈদেশিক ঋণ বাবদ ৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও তা কমিয়ে ৬০ কোটি টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। হরিপুরে ৩৬০ মেগাওয়াটসহ বিদ্যুতের আরও কয়েকটি প্রকল্পেও বৈদেশিক ঋণের অর্থ ফেরত দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। যদিও এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারি কোষাগার থেকে অর্থ চাওয়া হয়েছে।
এদিকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের মূল এডিপিতে বিদ্যুৎ বিভাগে সর্বোচ্চ সাত হাজার ১৬৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। আর অর্থবছরের পাঁচ মাসে এডিপি বাস্তবায়নে বিদ্যুৎ বিভাগ সবচেয়ে বেশি সফল হয়েছে। আলোচ্য সময়ে বিদ্যুৎ বিভাগ ২ হাজার ৫০১ কোটি টাকা (৩৫ শতাংশ) ব্যয় করেছে।
জানা যায়, গত ২০১০-১১ অর্থবছরের মূল এডিপিতে বিদ্যুৎ বিভাগে চার হাজার ৯১৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অর্থবছরের ছয় মাস পর তাদের চাহিদা বেড়ে যায়। সে পরিপ্রেক্ষিতে সংশোধিত এডিপিতে এক হাজার ৬৫ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে সংশোধিত এডিপিতে বিদ্যুৎ বিভাগে ৫ হাজার ৯৮১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। অর্থবছর শেষে বিদ্যুৎ বিভাগ ৯৯ শতাংশ অর্থ ব্যয় করতে সক্ষম হয়েছে বলে আইএমইডি সূত্রে জানা গেছে।

No comments

Powered by Blogger.