এসএমই মেলা জমে উঠেছে-নারী উদ্যোক্তাদের পণ্য ঘিরে বেশি আগ্রহ

দিবাসী এক নারী আপনমনে সুতির চাদর বুনে যাচ্ছেন। নজরকাড়া কারুকাজের এই চাদর সহজেই সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। উৎসুক অনেক দর্শনার্থী আগ্রহ নিয়ে তা দেখছেন। আবার বোনা চাদর কিনে এই হাড়কাঁপানো শীতে গায়ে জড়িয়েও ফিরছেন কেউ কেউ। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এসএমই মেলায় গতকাল বৃহস্পতিবার এমনই দৃশ্য দেখা গেল। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতের উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়ে উৎসাহী করতে


বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন—এফবিসিসিআই পাঁচ দিনব্যাপী এই মেলার আয়োজন করে।
এফবিসিসিআই ২০০২ সালে প্রথম এসএমই মেলার আয়োজন করে। এরপর ২০০৫, ২০০৬ ও ২০০৯ সালেও এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
এবারের এসএমই মেলায় ১৩১টি স্টল এবং ১৯টি প্যাভিলিয়ন রয়েছে। এর মধ্যে ৬৪টি উদ্যোক্তা-প্রতিষ্ঠান এবং ৩৪টি ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। গত মঙ্গলবার মেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গতকাল মেলা ঘুরে দেখা যায়, মেলায় দর্শনার্থীর সংখ্যা ভালো। তবে মেলায় নারী উদ্যোক্তাদের তৈরি নান্দনিক পোশাক ও হস্তজাত পণ্যের স্টলগুলোতে ক্রেতারা আগ্রহ নিয়ে ভিড় করেছেন। অনেকেই পছন্দের পণ্যটি কিনে বাড়ি ফিরেছেন। অনেক ব্যবসায়ী ও প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনীয় পণ্যের ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে কার্যাদেশও দিচ্ছে।
রাঙামাটির রিহা টেক্সটাইল ১৫ বছর ধরে দেশীয় উপকরণ দিয়ে চাদর, শাড়ি, থ্রি-পিস, ব্যাগ ও হস্তশিল্প তৈরি করছে। এ ছাড়া আদিবাসীদের পোশাক তৈরি করে তারা। এবারের এসএমই মেলায় প্রতিষ্ঠানটির স্টলের সামনেই ওই চাদর বোনার দৃশ্য চোখে পড়ে।
রিহা টেক্সটাইলের স্বত্বাধিকারী মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘দেশীয় ঐতিহ্য তুলে ধরার লক্ষ্য নিয়েই কাজ করা। মেলায় ভালো সাড়া পাচ্ছি। অনেকেই খোঁজখবর নিয়ে কার্যাদেশ দিচ্ছেন। খুচরা বিক্রিও হচ্ছে সমান তালে।’
এসএমই মেলায় কক্সবাজার উইমেন চেম্বারের তত্ত্বাবধানে ওই অঞ্চলের আটটি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। চেম্বারের সদস্য ইসরাত জাহান জানান, মূলত নারী উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্যের পরিচিতি ও ব্যবসার প্রসার ঘটাতেই মেলায় অংশ নেওয়া। এখন পর্যন্ত দর্শনার্থী ও ক্রেতারাও ইতিবাচকভাবে সাড়া দিয়েছেন।
চট্টগ্রামের আরিয়ন ফ্যাশন দীর্ঘদিন ধরে বৈচিত্র্যময় পোশাক দিয়ে ওই অঞ্চলের ফ্যাশন-সচেতন মানুষের কাছে পরিচিত হয়ে উঠেছে। তারা সালোয়ার কামিজ, পরদা, অলংকার, ব্যাগ, ফাইল, ঘর সাজানোর সামগ্রীসহ অর্ধশতাধিক পণ্য এনেছে মেলায়।
আরিয়ন ফ্যাশনের এক উদ্যোক্তা আমিনা রহমান বলেন, ‘আমাদের অধিকাংশ পণ্যই রপ্তানি মানসম্পন্ন। তবে ব্যাংকঋণসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে একটি ক্ষুদ্র পরিসরেই ঘোরাফেরা করতে হচ্ছে।’
প্লাস্টিকের গৃহস্থালি সামগ্রী, হ্যাঙ্গার, পলি মোড়ক, ফোম, খাদ্যসামগ্রী, সোলার প্যানেলসহ বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী নিয়ে মেলায় অংশ নিয়েছে বেঙ্গল গ্রুপ। তবে বিক্রি নয়, মূলত পণ্যের পরিচিত ও প্রসার ঘটাতে শুধুই প্রদর্শনী করছেন বলে জানান ওই গ্রুপের কর্মকর্তা মো. মঈনুল হোসেন।
মেলায় অংশ নেওয়া একাধিক প্রতিষ্ঠানই আবার বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ঘোষণা করেছে। আখতার ফার্নিশার্স তাদের আসবাবে ১৫ শতাংশ ছাড় ঘোষণা করেছে।
পাওয়ার টিলার, ধান ও ভুট্টামাড়াইয়ের কলসহ অনেক ধরনের কৃষিপণ্য নিয়ে মেলায় এসেছে সিলেটের আলীম ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। মেলা উপলক্ষে সিলেট থেকে বিনা পরিবহন খরচে পণ্য সরবরাহ করা হচ্ছে বলে জানালেন প্রতিষ্ঠানটির বিপণন ব্যবস্থাপক মো. শফিকুল ইসলাম।
শফিকুল বলেন, দেশের বাইরে থেকে শুধু ইঞ্জিন আমদানি করা হয়। তারপর কাঠামো তৈরি করে উন্নতমানের কৃষি যন্ত্রাংশ তৈরি করছে আলীম ইন্ডাস্ট্রিজ।
দেশের অধিকাংশ সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক এবং কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশ নিয়েছে। এসব ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা এসএমই বিষয়ে তাঁদের উদ্যোগ ও সহজে ঋণ পাওয়ার বিষয়ে উদ্যোক্তাদের অবগত করছেন।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তা রৌউফুর রাহিম বলেন, কৃষি ব্যাংক প্রায় ২০টি এসএমই খাতের জন্য সহজ শর্তে ও স্বল্প সময়ে ঋণ দিয়ে থাকে। এসএমই ঋণ ৫০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে দেড় কোটি টাকা দেওয়া হয়।
‘ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ঠিকমতো ঋণ পান না’ এমন প্রশ্নের জবাবে রৌউফুর বলেন, অনেক সময় ন্যূনতম শর্ত পূরণে ব্যর্থ হলে ঋণ দেওয়ায় কিছুটা জটিলতা হয়।
মেলায় খাদ্যসামগ্রী নিয়ে প্রাণ গ্রুপ, শতরঞ্জি নিয়ে কারুপণ্য রংপুর, হারবাল ওষুধ নিয়ে মর্ডান হারবাল, দেয়ালঘড়ি নিয়ে সিটিসান, লুঙ্গি নিয়ে আমানত শাহ লুঙ্গি, সয়াবিন তেল ও আচার নিয়ে নূরজাহান গ্রুপ, সোলার প্যানেল নিয়ে জেএমআই গ্রুপসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে।
এ ছাড়া বিদ্যুতের তার, জেনারেটর, তৈজসপত্র, সিরামিক, রেফ্রিজারেশন, স্প্রিং ও ফিল্টার, সেনেটারি সামগ্রী, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, হোমিওপ্যাথিক ও আয়ুর্বেদিক প্রভৃতি পণ্য নিয়ে মেলায় অংশ নিয়েছে অনেক প্রতিষ্ঠান।
মেলা শেষ হবে কাল শনিবার। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত এ মেলা চলবে। মেলায় কোনো প্রবেশমূল্য নেই।

No comments

Powered by Blogger.