এই নজির গণতন্ত্রের জন্য সুখকর নয়-গণমিছিলে পুলিশের বাধা

দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির পূর্বঘোষিত গণমিছিলে পুলিশের বাধাদান, পদ্ধতিগত হয়রানি ও ধরপাকড়ের ঘটনায় প্রতীয়মান হয় যে, সরকার বিরোধী দলের প্রতি যথেষ্ট অসহিষ্ণু হয়ে পড়েছে, যা গণতন্ত্রের পরিপন্থী।গত রোববার বিএনপির মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট হিংসাত্মক তৎপরতার বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার যথা পদক্ষেপের পর বুধবারের পদক্ষেপকে একই পাল্লায় বিচার করা চলে না। কারণ জনসভা,


সমাবেশ, মিছিল গণতান্ত্রিক অধিকার। ক্ষমতাসীনেরা নিশ্চয় চায় না বিরোধী দল গোপন তৎপরতামুখী হতে উৎসাহী হোক। বুধবারের গণমিছিল কর্মসূচিতে বিরোধী দলের তরফে কোনো নাশকতামূলক তৎপরতার অভিযোগ খোদ পুলিশ প্রশাসনের তরফেও করা হয়নি। রেববারের ঘটনায় সরকার মামলা করেছে এবং বিষয়টি তদন্তাধীন। বিএনপির বিরুদ্ধে আনীত গোপন কর্মসূচির অভিযোগ সত্য হলেও প্রকাশ্য কর্মসূচি তথা গণমিছিলে বাধা, দিনভর পুলিশের সাজ সাজ রব, নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় অবরুদ্ধ করে রাখা এবং ধরপাকড়ের ঘটনা গ্রহণযোগ্য নয়। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত উপকমিশনারের ‘জনগণের জানমাল ও স্বাভাবিক চলাচল’ নিশ্চিত করার তত্ত্ব ধোপে টেকে না।
বুধবার সকাল থেকেই নয়াপল্টনে পুলিশ ও র‌্যাব জলকামান ও সাজোয়া গাড়ি নিয়ে অবস্থান নেয়। বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর তাদের জঙ্গি আচরণ প্রমাণ করে, তারা ওপরের হুকুমে এ কাজ করেছে। সরকার আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে কী করে সংকীর্ণ দলীয় উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে পারে, বুধবার তার আরেকটি নজির তৈরি হল। এই ধরনের কর্মকান্ড গণতন্ত্র কিংবা সরকারের জন্য কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না।
অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা নিয়ে সৃষ্ট সহিংসতার বিষয়ে সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপির সাজানো নাটকের অভিযোগও বিশ্বাসযোগ্যতা পায়নি। মনে হচ্ছে তাদের দলের যে অংশটি হঠকারিতার সঙ্গে যুক্ত ছিল বলে অভিযোগ উঠেছে, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে তাদের সামর্থ্য বা ইচ্ছা নেই। ওই ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা ১১টি মামলায় ছয়-সাত হাজার ব্যক্তি নয়, ৫০০ থেকে ৬০০ জনকে আসামি করার খবর মহানগর পুলিশ স্বীকার করেছে। কিন্তু আমাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে, এ ধরনের রাজনৈতিক নাশকতার প্রকৃত বিচার হয় না। শুধু চাপানউতোরই সার।
পুলিশের বিজ্ঞ মুখপাত্র ‘দেশের বাইরে হামলার পরিকল্পনা’ এবং ‘অর্থায়নকারীদের তালিকা’ করার কথা শুনিয়েছেন। কিন্তু আমরা বলব, দেশে আইন-আদালত আছে, আর তাতে অপরাধীদের দ্রুত বিচার হতে হবে। যাঁরা সরকার চালান তাঁদের কাজ মাঠেঘাটে বক্তব্য দেওয়ার চেয়ে আদালতের কাছে উপযুক্ত প্রমাণাদি পেশ করা।
সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক হবে, চোরাগুপ্ত হামলায় বিএনপির জড়িত থাকার জিগির তুলে সরকার যদি তার অবশিষ্ট মেয়াদে বিরোধী দলের প্রতি একই ধরনের দমন-পীড়ন অব্যাহত রাখে। বিএনপির ‘মদদপুষ্ট’ চোরাগোপ্তা হামলা যদি গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর হয়, তাহলে এর প্রতিকারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দলীয় পেটোয়া বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা গণতন্ত্রের জন্য সুখকর হতে পারে না। আমরা গত রোববারের সহিংসতায় যুক্ত সবার বিচার চাই। বুধবারের পুলিশি বাড়াবাড়িরও জবাবদিহি চাই।

No comments

Powered by Blogger.