উত্তর কোরিয়া :ক্ষমতার নেপথ্যে যারা

ত্তর কোরীয় নেতা রহস্যপুরুষ কিম জং ইল মৃত্যুর আগে তার ছেলে কিম জং উনকে উত্তরাধিকারী হিসেবে দায়িত্ব দিয়ে গেছেন। সবেমাত্র ২৭ বছরে পা দেওয়া এই তরুণ বিশ্বের কাছে অনেকটাই অপরিচিত মুখ। তবে তিনি দেশটির পরবর্তী নেতা হচ্ছেন বলে ২০০৯ সালেই খবর ছড়িয়ে পড়ে। এর আগে ২০০৮ সালে কিম জং ইলের একবার স্ট্রোক হওয়ার পর থেকে তৃতীয় ছেলে কিম জং উনের হাতে ধীরে ধীরে ক্ষমতা ছাড়তে শুরু করেছিলেন। তখন থেকেই তিনি
ইঙ্গিত দিতে শুরু করেছিলেন, উনই হতে চলেছে উত্তর কোরিয়ার পরবর্তী নেতা। ১৯৮৪ সালে জন্ম নেওয়া এ যুবক এখনই উত্তর কোরিয়ার নেতৃত্ব দিতে সক্ষম কি-না তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তবে এর আগে গণমাধ্যমে কিংবা জনসমক্ষে খুব একটা আসতেন না উন। ২০১০ সালে দেশটির ওয়ার্কার্স পার্টির সম্মেলনে উনকে নিয়ে হাজির হন কিম জং ইল। ওই সম্মেলনে তাকে উত্তর কোরীয় সেনাবাহিনীর চার তারকা জেনারেলের মর্যাদা দেওয়া হয়। এরপরই দেশটির গণমাধ্যমে বাবার সঙ্গে তার সরব উপস্থিতি দেখা যায়। বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে বাবার সঙ্গে উপস্থিত থাকতেন উন। ইলের মৃত্যুর পর জাতীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া কমিটিতে সবার প্রথমে উনের নামই ছিল। উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্র্রীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত ওই কমিটির নামের তালিকায় ক্রমানুযায়ী দেশের নীতিনির্ধারকদের নাম স্পষ্ট করা হয়েছে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের। বিশ্লেষকদের মতে, উন রাজনীতি এবং কূটনীতিতে অনভিজ্ঞ। প্রত্যাশার কয়েক বছর আগে দায়িত্ব পাওয়ায় তিনি নিজেও অপ্রস্তুত। অন্যদিকে দলের অন্য জ্যেষ্ঠ জেনারেলরা উনের নেতৃত্বকে কীভাবে দেখেন সেটাও দেখার বিষয়। তবে অনেকেই মনে করছেন, উন দেশটির প্রধান থাকলেও পেছন থেকে কলকাঠি নাড়বেন কিম জং ইল পরিবারের প্রভাবশালী দম্পতি। ইলের বোন কিম কোং হুই এবং তার স্বামী চ্যাং সং টিক। তাদের উভয়ের বয়স ৬৫। এর মধ্যে চ্যাং সং টিক দেশটির অন্যতম অভিজ্ঞ একজন রাজনীতিবিদ। ইলের সবচেয়ে আস্থাভাজন ছিলেন চ্যাং। তিনি দলের পলিট ব্যুরোর সদস্য এবং দেশটির জাতীয় প্রতিরক্ষা কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান। দেশটির বিভিন্ন অর্থনৈতিক কার্যক্রমও তিনি চালান বলে ধারণা করা হয়। অন্যদিকে উনের ফুফু কিম হুই দেশটির সেনাবাহিনীর চার তারকা জেনারেল সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও দলের পলিট ব্যুরোর সদস্য।
উত্তর কোরিয়ার প্রতাপশালী এ দম্পতি জং উনকে পরিচালিত করবেন বলে ধারণা বিশেষজ্ঞা মহলের।
এ বিষয়ে সিউলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তর কোরিয়া বিষয়ক গবেষক মু ঝিন বলেন, কিম জং ইলের আমলেও চ্যাং নীতিনির্ধারকের ভূমিকা পালন করেছেন। ইলের অসুস্থতার সময় সব সিদ্ধান্ত তিনিই নিতেন। চ্যাংই উনকে পরিচালনা করবেন এটাই স্বাভাবিক। রাজনীতি, অর্থনীতি এবং কূটনীতিতে উনকে চীন সর্বোতভাবে সহায়তা করবে বলেও জানান তিনি। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, পর্দার পেছন থেকে ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ করলে উনকে সরিয়ে উনের ভগি্নপতি চ্যাং নিজেই ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে পারেন। অনেক বিশ্লেষকের আশঙ্কা, ক্ষমতা কুক্ষিগত করে চ্যাং তার ছেলেকেও ক্ষমতায় বসাতে পারেন। তার ছেলে রি ইয়ং হো দেশটির সেনাবাহিনীর জয়েন্ট চিফ অব স্টাফ। ইলের শেষকৃত্য কমিটিতে তার নাম তালিকার চতুর্থ স্থানে ছিল।
বিশ্লেষকরা বলছেন, কিম জং ইলের উত্তরসূরি হিসেবে সবকিছু বুঝে নিয়ে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতেই উনের কমপক্ষে তিন বছর সময় লাগবে। তবে এটা তখনই সম্ভব যখন চ্যাং ও শীর্ষ নেতারা উনকে মেনে নিয়ে তাকে সহায়তা করেন। এ ছাড়া আরও কয়েক নেতাকে ম্যানেজ করতে হবে উনকে। এরা হলেন দেশটির পার্লামেন্ট প্রধান তিম ইয়ং নাম ও ক্যাবিনেট প্রধান হোয়ে ইয়ং রিম। বিশ্লেষকের মতে, উনের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আছে তার ভাইও। বিশেষত তার সৎ ভাই কিম জং ন্যাম। উনের নাম ঘোষণার আগে দেশটির সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে তার নামই ভাবা হচ্ছিল। তবে এর আগে কিম জং ন্যাম নিজেই জানিয়েছিলেন, নেতৃত্ব দেওয়ার ভূমিকা নিতে তিনি আগ্রহী নন। তবে অনেকের ধারণা, ধীরে ধীরে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করে নেবেন উন। কারণ তার বাবার অনুসারীরা যারা উনকে নিজেদের নেতা বলে মেনে নিয়েছেন, তার সর্বদাই সতর্ক থাকবেন। চ্যাং নিজেও যাদের একজন। সূত্র :বিবিসি অনলাইন।

No comments

Powered by Blogger.