জমজমাট এসএমই মেলা

মে উঠেছে দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই আয়োজিত পঞ্চম এসএমই মেলা। গত ২০ ডিসেম্বর থেকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের উৎপাদক, ক্রেতা আর অর্থায়নকারীদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসএমই খাতের উদ্যোক্তারা মেলায় আসছেন প্রযুক্তি, বাজার আর অর্থায়ন বিষয়ে খোঁজ নিতে। নতুন পণ্যের উদ্ভাবকরা তাদের সক্ষমতার প্রকাশ ঘটিয়েছেন এই মেলায়। গতকাল
বৃহস্পতিবার মেলা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। গত ২০ ডিসেম্বর এ মেলা শুরু হয়েছে। আগামীকাল শেষ হবে।
এবারের মেলায় দেশের সরকারি-বেসরকারি ৩৪টি ব্যাংক অংশ নিয়েছে। এসব ব্যাংক এসএমই উদ্যোক্তাদের কীভাবে কত টাকা ঋণ প্রদান করছে তা প্রচার করছে। বিশেষ করে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ব্যাংকগুলোর কী কী ঋণ সুবিধা আছে তা প্রচার করা হচ্ছে। অধিকাংশ ব্যাংকেরই এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়ন স্কিম রয়েছে। যে স্কিমের অধীনে এসএমই উদ্যোক্তারা ১০ থেকে সর্বোচ্চ ১২ শতাংশে জামানতবিহীন ঋণ পাচ্ছে। জামানতবিহীন ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো ব্যাংক সর্বোচ্চ ১০ লাখ, আবার কোনো ব্যাংক সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা দিচ্ছে। পূবালী ব্যাংক, যমুনা ও সিটি ব্যাংকের কর্মকর্তারা সমকালকে জানান, অনেক উদ্যোক্তা আসছেন। উদ্যোক্তারা মূলত জানতে চাচ্ছেন ব্যাংক কী কী ধরনের ঋণ তাদের জন্য দিচ্ছে। এসব ঋণের সুদহার কেমন। উদ্যোক্তাদের কার কোথায় কী ধরনের ব্যবসা তার তথ্য নিচ্ছে ব্যাংকগুলো। কোনো কোনো উদ্যোক্তাকে ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছে কোনো কোনো ব্যাংক।
অপরদিকে চলছে দেশি প্রযুক্তিতে এসএমই উদ্যোক্তাদের উদ্ভাবিত পণ্যের প্রদর্শনী। এবারের মেলায় সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ সৃষ্টি করেছে নূরজাহান গ্রুপের পেঁয়াজ, রসুন, আদা আর কাঁচামরিচের গুঁড়া। পেট বোতলে দেশে এই প্রথম কোনো কোম্পানি এসব মসলা পণ্যের গুঁড়া বাজারজাতকরণের উদ্যোগ নিয়েছে। এখনও এসব পণ্য বাজারে বিক্রি করছে না নূরজাহান গ্রুপ। আগামী জানুয়ারিতে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর এসব পণ্য বাজারজাত করা হবে। শুধু পেঁয়াজ রসুনের গুঁড়া নয়, মেলায় এসএমই খাতের নানা পণ্য প্রদর্শিত হচ্ছে যেগুলো বাংলাদেশে আগে তৈরি হতো না। বায়োডিজেল, শ্যালো ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশ, পিভিসি ইনসুলেশন, স্যালাইনের ব্যাগ, পল্গাস্টিকের উন্নত মানের পানির লাইনের ফিটিংস, রেফ্রিজারেটর ইত্যাদি নতুন নতুন পণ্য তৈরি করে দেশের শিল্পকে এগিয়ে নিচ্ছে এসএমই খাত।
মেলায় গেল্গাবাল গ্রিন এনার্জি লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান বায়োডিজেল প্রদর্শন করছে। ওই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমইউ আবদুস সালাম জানান, কচা (ইংরেজি নাম জাত্রোফা) নামের এক ধরনের গাছের ফলের বীজ থেকে এই বায়োডিজেল তৈরি হয়। বাংলাদেশে ওই গাছটি প্রাকৃতিকভাবে হতো। এখন বাণিজ্যিকভাবে তিনি কয়েকটি জায়গায় বাগান করা শুরু করেছেন।
এ ছাড়া হৃদয় করপোরেশনের পল্গাস্টিকের পানির ফিটিংস, দিদার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ক্র্যাঙ্কশ্যাফট, আলীম ইন্ডাস্ট্রিজের ধান মাড়াই যন্ত্র, জাকের ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের হালকা প্রকৌশল যন্ত্র মেলার দর্শনার্থী, উদ্যোক্তাদের দৃষ্টি কেড়েছে। মেলায় রয়েছে প্লাস্টিক, ফার্নিচার, টেক্সটাইল, হ্যান্ডিক্রাফটস, পাট পণ্য, বৈদ্যুতিক তার, জেনারেটর, খাদ্য ও অর্গানিক ফুড, তৈজসপত্র সামগ্রী, শাড়ি, লুঙ্গি, থ্রি পিস, বিস্কুট, সিরামিক, রেফ্রিজারেশন, ছাপার কালি, স্প্রিং ও ফিল্টার, স্যানিটারি ফিটিংস, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, হারবাল, হোমিওপ্যাথিক ও আয়ুর্বেদিক ওষুধ, রিয়েল এস্টেট খাতের উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন পণ্য।

No comments

Powered by Blogger.