নতুন উচ্চতায় সাকিব


দুঃস্বপ্নের সিরিজ, ভুলে যাওয়ার মতো সিরিজ। পাকিস্তান সিরিজকে এক কথায় হয়তো বলতে হতো এটাই। বলতে হতো, কিন্তু এখন আর বলা যাচ্ছে না। বরং আজ থেকে অনেক দিন পরও বাংলাদেশ ক্রিকেটের পথচলা নিয়ে বলতে হলে শুরুর দিকেই রাখতে হবে এই সিরিজকে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের সেরা অর্জনগুলোর একটি এল যে এই সিরিজ থেকেই! সাকিব আল হাসান বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার, এটা এখন স্বীকৃত! ওয়ানডের মতো এখন টেস্ট


অলরাউন্ডারদের র‌্যাঙ্কিংয়েরও শীর্ষে বাংলাদেশের সাকিব। কোনো একটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের একজন বিশ্বে সবার ওপরে, এ এক অনির্বচনীয় অনুভূতি! অনেকে বলতে পারেন, সাকিব ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে উঠেছেন তো সেই কবেই। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটটাই তো আসল ক্রিকেট। ওয়ানডের সঙ্গে টেস্টের দৈর্ঘ্যের পার্থক্য চার দিন, সত্যিকারের পার্থক্য আরও অনেক বেশি। ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে ওঠার পরও ‘সাকিব বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার’—এটি তাই জোর গলায় বলার উপায় ছিল না। এখন অবিসংবাদিতভাবেই বিশ্বের এক নম্বর অলরাউন্ডার বাংলাদেশের সাকিব।
যেভাবে শীর্ষে উঠলেন, সেটিতেও চমক আছে। সর্বশেষ র‌্যাঙ্কিংয়ে ছিলেন পাঁচে। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে একই টেস্টে সেঞ্চুরি ও ৫ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়লেন ঢাকা টেস্টে। ব্যাটিং-বোলিং দুটিতেই উঠে এলেন ক্যারিয়ার-সেরা র‌্যাঙ্কিংয়ে। ব্যাটিংয়ে ৭ ধাপ এগিয়ে ৩১-এ, বোলিংয়ে দুই ধাপ এগিয়ে সাতে (সাতে অবশ্য আগেও ছিলেন)। এই দুটোর প্রতিফলনই অলরাউন্ডারদের র‌্যাঙ্কিংয়ে, এক লাফে চার ধাপ এগিয়ে শীর্ষে!
যাঁকে সরিয়ে শীর্ষে উঠেছেন, সেই জ্যাক ক্যালিস শীর্ষে ছিলেন মোট ৪৫৭ টেস্ট ধরে। সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডার বলে স্বীকৃত স্যার গ্যারি সোবার্স ছিলেন ২১৩ টেস্ট। সময়ের হিসাবে অবশ্য ক্যালিস (৩৬৯৬ দিন) অনেকটাই পিছিয়ে। শীর্ষ তিন—ওয়ালি হ্যামন্ড (৫০৬৭ দিন), সোবার্স (৪৪২৫ দিন), অব্রে ফকনার (৪২৭৭ দিন)। হ্যামন্ড-সোবার্সদের সময় র‌্যাঙ্কিং প্রথারই চল ছিল না। তবে র‌্যাঙ্কিংয়ের বর্তমান নিয়ম অনুসরণ করে পেছনে ফিরে গিয়ে র‌্যাঙ্কিং পয়েন্টের আয়নায় দেখা হয়েছে অতীতের মহানায়কদেরও।
তা সাকিব কত দিন বা কত টেস্ট জুড়ে থাকতে পারবেন? সাকিবের শীর্ষে ওঠার খবর শুনে সতীর্থ তামিম ইকবালের প্রথম প্রতিক্রিয়া, ‘আরও এক-দেড় বছর আগেই শীর্ষে উঠতে পারত সাকিব। আমরা এত কম টেস্ট খেলি...সাকিব তো এই অর্জনটা ধরে রাখার সুযোগই পাবে না। আমরা পরের টেস্ট খেলব হয়তো ৫-৬ মাস পর, তত দিনে ক্যালিস-ওয়াটসনরা ৭-৮টি টেস্ট খেলে ফেলবে।’ তামিমের কথাটাই নির্মম বাস্তবতা। সাকিবের রেটিং পয়েন্ট ৪০৪, ক্যালিসের ৩৯৭। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বক্সিং ডে টেস্টে ভালো করলেই আবার শীর্ষে উঠে যাবেন ক্যালিস। সাকিবের করার থাকবে না কিছুই, খেললেই না কেবল কিছু করার থাকে!
তবে যা নিয়ন্ত্রণে নেই, সেটা ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলে লাভ নেই। অনন্য এক অর্জনের আনন্দকে সম্ভাব্য পরিণতির আক্ষেপ মিশিয়ে বিষাদগ্রস্ত করার প্রয়োজনই বা কী! তার চেয়ে বর্তমানকে উপভোগ করাই ভালো। আর সেই সঙ্গে স্বপ্ন দেখা। ছোট থেকে বড় হওয়া সব ক্রিকেট খেলুড়ে দেশের ইতিহাস বলছে, একজন-দুজন মহানায়কের হাত ধরে অন্য উচ্চতায় পৌঁছে গেছে সে দেশের ক্রিকেট। সাকিবই কি বাংলাদেশ ক্রিকেটের সেই মহানায়ক?

No comments

Powered by Blogger.