বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়-বিজ্ঞান শিক্ষক নেই, ছাত্রীরা কোচিংমুখী

গুড়ার ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে এক বছরের বেশি সময় ধরে বিজ্ঞানের পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। বিদ্যালয়ে পদার্থ, রসায়ন ও জীববিজ্ঞানে যথাযথ পাঠ না পেয়ে ছাত্রীরা গৃহশিক্ষক ও কোচিং সেন্টারমুখী হচ্ছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খাতুন বলেন, বিদ্যালয়ে দুটি পালায় (প্রভাতী ও দিবা) পাঠদান দেওয়া হয়। দুই পালায় পদার্থ, রসায়ন ও জীববিজ্ঞান বিষয়ে ১২ জন শিক্ষক দরকার। অথচ আছেন মাত্র তিনজন।
বিজ্ঞানের শিক্ষক না থাকায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পরবর্তী এসএসসি পরীক্ষায় ফল খারাপ করতে পারে—এমনটাই আশঙ্কা করছেন শিক্ষক ও অভিভাবকেরা। অথচ গত বছরও এ বিদ্যালয় থেকে ২১৫ জন ছাত্রী জিপিএ-৫ পেয়ে রাজশাহী বোর্ডে তৃতীয় স্থান অর্জন করে।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৮৬৯ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। দুই পালায় প্রায় দুই হাজার ১০০ ছাত্রী পড়াশোনা করে এখানে। এসএসসি পরীক্ষায় প্রতিবছরই এই বিদ্যালয় থেকে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পায়।
নবম শ্রেণীর ছালমা ইয়াসমিন বলে, ‘রসায়ন বিজ্ঞানের শিক্ষক এক বছর ধরে নেই। বাইরে প্রাইভেট পড়ে কোর্স শেষ করতে হচ্ছে আমাদের। অনেক সময় অন্য বিষয়ের শিক্ষকেরা বিজ্ঞানের ক্লাস নেন।’ শহরের ফুলতলা এলাকায় বসবাসকারী এক শিক্ষার্থীর বাবা মজির উদ্দিন জানান, সরকারি বিদ্যালয় দেখে তাঁর মেয়েকে ভর্তি করিয়েছেন। এখানে ভালো শিক্ষক আছেন এবং পড়াশোনা হয়—এমনটাই জানতেন। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক না থাকায় বাধ্য হয়ে মেয়েকে গৃহশিক্ষকের কাছে বা কোচিং সেন্টারে পড়াতে হচ্ছে। শিক্ষকসংকটের কারণে বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী এই বিদ্যায়তনটির ফলাফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন কয়েকজন অভিভাবক।
সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, এই বিদ্যালয়ে ৪৯ জন শিক্ষক আছেন। দুই পালায় পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে শিক্ষকের প্রয়োজন চারজন। অথচ আছেন মাত্র একজন। রসায়নে চারজন শিক্ষককের একজনও নেই। জীববিজ্ঞান বিষয়ে চারজন শিক্ষকের মধ্যে আছেন দুজন। এক বছর ধরে এই অবস্থা চলছে।
প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, ‘শিক্ষকসংকটের কারণে সামাজিক বিজ্ঞানের শিক্ষক দিয়ে বিজ্ঞানের বিষয়গুলো পড়ানো হচ্ছে। এ ব্যাপারে রাজশাহী অঞ্চলের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে বেশ কয়েকবার চিঠি লেখা হয়েছে। পরে ঢাকায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছেও চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। এসব চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে বিজ্ঞানের শিক্ষক না দিয়ে সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষকদের বদলি করা হয়েছে। দরকার না থাকলেও গত এক বছরে চারজন সামাজিক বিজ্ঞানের শিক্ষক এখানে বদলি করা হয়েছে।’
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর রাজশাহী অঞ্চলের উপপরিচালক তরুণ কুমার সরকার প্রথম আলোকে বলেন, রাজশাহী অঞ্চলে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের সংকট রয়েছে, বিশেষ করে বিজ্ঞান শিক্ষকের সংকট বেশি। সরকার শিক্ষক নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু করেছে। চলতি বছরের মধ্যে এই প্রক্রিয়া শেষ হলে আগামী জানুয়ারি থেকে এসব সমস্যা দূর হবে।

No comments

Powered by Blogger.