নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ নিয়ে সংলাপ-জাপা ও জাসদের কাছে নাম চেয়েছেন রাষ্ট্রপতি

রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান জাতীয় পার্টি (এরশাদ) ও জাসদের (ইনু) সঙ্গে সংলাপে নতুন নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যায় এমন ব্যক্তিদের নাম চেয়েছেন। উভয় দলের নেতারা ‘প্রস্তুতি নেই’ জানিয়ে পরে নাম দেবেন বলে রাষ্ট্রপতিকে জানান। জাতীয় পার্টি ও জাসদের নেতারা সাংবাদিকদের জানান, আগামী দু-তিন দিনের মধ্যে তাঁরা লিখিতভাবে তাঁদের প্রস্তাবিত নির্বাচন কমিশনারদের নাম রাষ্ট্রপতির দপ্তরে পাঠাবেন।


গতকাল বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করেছেন। প্রথম দিনে তিনি জাতীয় পার্টি ও জাসদের সঙ্গে আলাদাভাবে আলোচনা করেন।
সংলাপে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশন নিয়োগে অনুসন্ধান কমিটির (সার্চ কমিটি) প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সমন্বয়ে অনুসন্ধান কমিটি গঠনের কথা বলেছে দলটি। আর জাসদের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশন গঠনে একটি বিধিমালা প্রণয়ন ও মনোনয়ন কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়।
বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বে ১৬ সদস্যের প্রতিনিধিদল এবং দুপুর ১২টা থেকে একটা পর্যন্ত জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বে ১১ সদস্যের প্রতিনিধিদল বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে মতবিনিময় করে।
সূত্র জানায়, উভয় দলের সঙ্গে সংলাপের শুরুতেই রাষ্ট্রপতি সূচনা বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠায় সংবিধান অনুসারে রাষ্ট্রপতি হিসেবে আমি ক্ষমতাপ্রাপ্ত। ইচ্ছা করলে একাই করতে পারতাম। কিন্তু আপনাদের ডেকেছি মতামতের জন্য। কারণ, রাজনৈতিক দল হিসেবে আপনারা স্টেকহোল্ডার।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন দরকার। তাই আমি সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগ না করে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিতে চাই।’
বৈঠকে জাতীয় পার্টি ও জাসদের নেতারা রাষ্ট্রপতির উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান। তাঁরা বলেন, গত ৪০ বছরে এই প্রথম রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশন গঠনে উদ্যোগ নিলেন। আগে কখনো এমনটা হয়নি। এটা শুভ উদ্যোগ, গণতান্ত্রিক উদ্যোগ।
সংলাপে রাষ্ট্রপতিকে সহায়তা করেন রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম, রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব মেজর জেনারেল কাজী ফখরুদ্দীন আহমেদ, রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব এ কে এম নেছারউদ্দিন ভূঞা এবং রাষ্ট্রপতির একান্ত সচিব ফজলুল হক।
অনুসন্ধান কমিটি গঠনের পক্ষে জাতীয় পার্টি: সংলাপ শেষে বেরিয়ে বঙ্গভবনের সামনের সড়কে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সাংবাদিকদের বলেন, দলের পক্ষ থেকে অনুসন্ধান কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ কমিটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের নিয়ে গঠন করা যেতে পারে। প্রধান বিচারপতি, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান এ কমিটিতে থাকতে পারেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বিএনপির সংলাপে না আসার সম্ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাইলে এরশাদ বলেন, বিরোধী দল আসবে কি আসবে না, সেটা তাদের রাজনৈতিক ইচ্ছা। তারা সংলাপে যোগ দিলে ভালো হবে। তবে কে এল, না এল তার জন্য দেশ বসে থাকবে না। নির্বাচন কমিশন গঠন হবে এবং দেশে নির্বাচনও হবে।
প্রথমবারের মতো আলোচনার এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেন, সংলাপ গণতন্ত্রের মূলমন্ত্র। সংলাপ ছাড়া গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উন্নতি হয় না। তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে, দেশে দ্বন্দ্ব-সংঘাত ছড়িয়ে পড়বে।
জাতীয় পার্টির ১৬ সদস্যের প্রতিনিধিদলে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর আহমদ, মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, বাণিজ্যমন্ত্রী জি এম কাদের, জিয়াউদ্দিন আহমেদ, টি আই এম ফজলে রাব্বি, গোলাম হাবিব, দেলোয়ার হোসেন খান, কাজী মাহমুদ হাসান, কাজী ফিরোজ রশীদ, গোলাম মসিহ, মুজিবুল হক প্রমুখ।
বিধিমালা চায় জাসদ: সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ বাস্তবায়নে স্থায়ীভাবে নির্বাচন কমিশন গঠন বিধিমালা প্রণয়নের প্রস্তাব দিয়েছে জাসদ। বিধিমালায় তিন স্তরের কার্যক্রমের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী, বিভিন্ন সাংবিধানিক পদে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং করছেন এমন ১০ জন ব্যক্তিকে নিয়ে রাষ্ট্রপতি একটি মনোনয়ন কমিটি গঠন করবেন। কমিটি নির্বাচন কমিশনের প্রতিটি পদের বিপরীতে তিনজনের নাম প্রস্তাব করে সর্বদলীয় সংসদীয় বাছাই কমিটিতে পাঠাবে। বাছাই কমিটি ওই তালিকা যাচাই-বাছাই করে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবে। রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ পূর্ণাঙ্গ নির্বাচন কমিশন গঠনে নিয়োগদান করবেন।
জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু সংলাপ শেষে বঙ্গভবনের সামনে সাংবাদিকদের বলেন, প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সংলাপে না আসা হবে আত্মঘাতী। সংলাপে না এলে মনে করতে হবে, বিএনপি সুনির্দিষ্টভাবে গণতন্ত্রের বদলে চক্রান্তে লিপ্ত।
বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে পুনর্নিয়োগ দেওয়া যায় কি না, জানতে চাইলে হাসানুল হক ইনু বলেন, বিদায়ী কমিশনের বিদায় নেওয়া উচিত। রাজনীতিবিদেরা আজীবন ক্ষমতায় থাকতে পারেন। সাংবিধানিক পদে যাঁরা থাকেন, তাঁরা পারেন না।
ইনু জানান, রাষ্ট্রপতি তাঁদের কাছে সুনির্দিষ্টভাবে নামের তালিকা চেয়েছেন। তাঁরা দু-এক দিনের মধ্যে তালিকা পাঠিয়ে দেবেন বলে রাষ্ট্রপতিকে জানিয়েছেন।
জাসদের (ইনু) ১১ সদস্যের প্রতিনিধিদলে আরও ছিলেন শরীফ নূরুল আম্বিয়া, মঈন উদ্দীন খান বাদল, শিরিন আখতার, রবিউল আলম, মীর হোসাইন আখতার, ইন্দুনন্দন দত্ত, ইকবাল হোসেন খান, নাজমুল হক প্রধান, মোহাম্মদ খালেদ ও হাবিবুর রহমান শওকত।

No comments

Powered by Blogger.