ওয়ানডের পর এবার টেস্ট ক্রিকেটেও সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান-মিস্টার অলরাউন্ডার

রে নেওয়া যেতে পারে বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য এটাই সান্তাক্রুজের ঝোলা থেকে বের হওয়া ক্রিসমাস গিফট। হতে পারে শুষ্ক একটি ক্রিকেট বছরের এটাই অন্নপূর্ণার বৃষ্টি। যেভাবেই দেখা হোক না কেন, সাকিব আল হাসানের আইসিসি টেস্টে নম্বর ওয়ান হওয়ার ঘটনা বাংলাদেশের ক্রিকেট সমর্থকদের জন্য দারুণ একটি উপহার হয়ে ধরা দিয়েছে ২২ ডিসেম্বরে। যেখানে তারা গর্ব করতে বলতে পারবেন, বিশ্ব ক্রিকেটের 'মিস্টার অলরাউন্ডার' রয়েছেন


লাল-সবুজের পতাকাতলে। দেশের হয়ে অনেক প্রথমের সাক্ষী হয়েছেন সাকিব। প্রথম কোনো বাংলাদেশি হয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে শীর্ষ অলরাউন্ডার হয়েছেন, কাউন্টি ক্রিকেটে দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন, প্রথম হয়ে টেস্টের এক ইনিংসে সেঞ্চুরি এবং পাঁচের বেশি উইকেট দখল করেছেন। সাকিব মানেই যেন প্রথম আর নতুন, কেমন লাগে এমন প্রথম হতে? 'কাউকে না কাউকে তো শুরু করতেই হয়। সেটা আমার মাধ্যমে হচ্ছে, এই আর কী। এদিক থেকে ভাবলে আমি বেশ সৌভাগ্যবান বলব নিজেকে। আমার এই অর্জনগুলোর গুরুত্ব হয়তো এখন অতটা বুঝতে পারছি না। খেলার মধ্যে রয়েছি, সে কারণেই তেমন বড় কিছু মনে হচ্ছে না। তবে যখন খেলা ছেড়ে দেব তখন নিশ্চয়ই এ ফিলিংসগুলো কাজ করবে।' আসলে সাকিব এমনই। অধিনায়কত্ব হারানোর পরও যেমন শোক তাকে ছুঁতে পারেনি, তেমনি বিশ্বসেরা টেস্ট অলরাউন্ডার হওয়ার দিনটিকেও সেভাবে আবেগ দিয়ে মুড়িয়ে রাখতে পারেনি।
কেননা সাকিব বিশ্বাস করেন, মাঠে ভালো করলে তার পুরস্কার মিলবেই। এ বছর মাত্র পাঁচ টেস্টে ৪৫৪ রান করেছেন এবং বোলিংয়ে হাত ঘুরিয়েও ২১ উইকেট শিকার করেছেন। তার এই পারফরম্যান্সের গোপন রহস্য কী? জিজ্ঞাসাটা সাংবাদিকদের মতো তামিম ইকবালও মাঝে মধ্যেই বন্ধু সাকিবকে করে থাকেন। ঘুরিয়ে উত্তর দিলেও একটি শব্দ চলে আসে সাকিবের মুখে। 'আমি খেয়াল করে দেখেছি, ইতিবাচক মানসিকতা আর 'কিছু করার' সংকল্প নিয়ে মাঠে নামলে টেস্টেও ভালো ফল পাওয়া যায়। পুরো বছরে আমি সেটাই করার চেষ্টা করেছি। আমি শুধু বেসিকটা মেনে চলেছি আর স্বাভাবিক খেলাটা ধরে রেখেছি।'
সাকিব বিশ্বাস করেন, তার এই অর্জন নতুন প্রজন্মকে আরও সাহসী করে তুলতে সাহায্য করবে। 'ওয়ানডের পর টেস্টেও শীর্ষ অলরাউন্ডার। আপাতত এটাকে ব্যক্তিগত অর্জন মনে হলেও বৃহত্তর অর্থে দেশের ক্রিকেটের জন্য এটা ভালো একটি ব্যাপার। রেকর্ডের দিকে তাকালেও বাংলাদেশের ক্রিকেটের উন্নতি দেখা যাবে। আমি মনে করি, জাতীয় দলে যত বেশি পারফর্মার থাকবে, তাদের অনুসরণ করে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আন্তর্জাতিক তারকা হয়ে ওঠার চেষ্টা করবে।'
দেশীয় গণ্ডি পেরিয়ে, সবাইকে ছাপিয়ে অনেক আগেই নিজের নামের সঙ্গে আন্তর্জাতিক মানের ট্যাগ লাগিয়ে নিয়েছেন সাকিব। বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছেন র‌্যাংকিংয়ের নিচু সারির একটি দলের সদস্য হয়েও ব্যক্তিগত মেধা আর শ্রম দিয়ে শৃঙ্গে ওঠা যায়। যে জ্যাক ক্যালিস ৩৬৯৬ দিন ধরে আইসিসির টেস্ট র‌্যাংকিয়ে অলরাউন্ডারের তালিকায় শীর্ষে থেকেছেন, গতকাল তিনি কি-না সিংহাসন হারালেন বছর চবি্বশের এক বঙ্গসন্তানের কাছে। টুইটারে ক্যালিস সাকিবকে অভিনন্দনও জানিয়েছেন। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পক্ষ থেকেও উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করা হয়েছে। গোটা বিশ্বে সাকিবভক্তরা গতকাল ফেসবুক আর টুইটারে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিশ্ব ক্রিকেটের এই মিস্টার অলরাউন্ডারকে। আর ভক্তদের এ ভালোবাসায় সাড়া না দিয়ে থাকতে পারেননি সাকিব নিজেও। 'পরিচিত সবাই আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছে। মাগুড়ার বাড়ি থেকেও ফোন পেয়েছিলাম। খুবই ভালো লাগছে। আজকের এ সম্মান আমি আমার বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে উৎসর্গ করছি। আমাকে আমার লক্ষ্যে পেঁৗছতে সতীর্থরা ভীষণভাবে সাহায্য করেছে।'

No comments

Powered by Blogger.