বাংলাদেশের হৃদয় জিততে চান আফ্রিদিরা! by সঞ্জয় সাহা পিয়াল

হাতে লেখা কোনো স্ক্রিপ্ট ছিল না। এমন কোনো প্রশ্নও ছিল না, যার উত্তর দিতে গিয়ে পাকিস্তান দলের ম্যানেজার রিদওয়ান চিমাকে বলতে হলো, 'এখানে শুধু ম্যাচ জিততে আসিনি, বাংলাদেশিদের হদয়ও জয় করতে এসেছি আমরা...।' গতকাল বাংলাদেশি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে নিজে থেকেই মাইকটা টেনে নিয়ে সেতুবন্ধনের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন পাকিস্তান ম্যানেজার। যা শোনার পর গোটা মিডিয়া হলরুমটাই কিছুক্ষণের জন্য চুপ হয়ে গিয়েছিল।


একে অন্যের দিকে মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে উত্তর খুঁজছিলেন স্বদেশি সাংবাদিকরা। কেন বললেন? কী কারণে বললেন? বলে কী বোঝাতে চাইলেন? তাহলে কি ওরা ডিসেম্বরকে ভয় পাচ্ছে? উত্তরও যে-যার মতো বানিয়ে নিলেন। তবে একটি ব্যাপারে প্রায় সবাই একমত হলেন, আর সেটা হলো, এর আগে কোনো বিদেশি দল ঢাকায় এসেই সিরিজ শুরুর আগে এতটা ভালোমানুষী কথা বলেননি। এমনকি অতীতে পাকিস্তান ক্রিকেট দল ঢাকায় পা রেখেও এমন বন্ধুত্বের প্রস্তাব দেননি। কোনো পাকিস্তানির মুখে 'বাংলাদেশিদের হদয় জয় করা' কথাটিতে বিশ্বাস করা না করাটা পরের ব্যাপার, তবে এটা সত্য, গেল বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে মিরপুরে গ্যালারিভর্তি চাঁন-তারা পতাকা দেখে যাওয়ার দৃশ্য এখনও চোখে লেগে আছে পাকিস্তানিদের। 'আমরা এখানে এসেছি শুধুই ক্রিকেট খেলতে। মাঠে আমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব, কিন্তু তা হবে বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে। আমরা বাংলাদেশের জনগণকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি, তারা ক্রিকেটের জন্য খুবই এক্সাইটেড, আশা করছি, একটি ভালো সিরিজ দেখতে পাবেন তারা।' ঢাকার ময়দানে লড়াইয়ের বারুদ বিছিয়ে পাকিস্তানের যে খুব একটা লাভ হবে না, সেটা বুঝেই দক্ষ কুটনীতিকের ভূমিকা নিয়েছিলেন এদিন রিদওয়ান চিমা।
অধিনায়ক মিসবাহ-উল হকও বাংলাদেশিদের পালস মেপে সিরিজ শুরুর সৌহার্দ্যের ঘোষণা দিয়েছিলেন। 'আমার মতে, বাংলাদেশ বেশ ভালো দল। তারা ভালো ক্রিকেট খেলছে, বিশেষ করে দেশের মাটিতে তারা শক্ত প্রতিপক্ষ। আমরা জানি, তারা (বাংলাদেশিরা) আমাদের লড়াইয়ে ফেলে দিতে পারে। এ বিষয়টা সম্পর্কে আমরা সচেতন। আমাদের নিজেদের খেলাটা উন্নতি করতে পারলে সিরিজে ভালো লড়াই হবে।' আরব আমিরাতের মরুশহরে শ্রীলংকাকে দুরমুশ করে আসা পাকিস্তান দল এ সিরিজে নিশ্চিত ফেভারিট। হয়তো ভদ্রতার কারণেই সেটা মুখে উচ্চারণ করলেন না মিসবাহ; কিন্তু আঁড়েফেঁড়ে বুঝিয়ে দিলেন বন্ধুত্বের হাত বাড়ালেও সিরিজ হারতে আসেননি তিনি। 'শ্রীলংকাকে হারানোর পর দলের প্রত্যেকের মনোবল তুঙ্গে। তারা জানে, বাংলাদেশেও সেই ধারবাহিকতা ধরে রাখতে হবে। তারা এটাও জানে, এ সিরিজে ভালো করতে হলে আমাদের খেলার আরও উন্নতি করতে হবে। বিশেষ করে ব্যাটিংয়ে আরও ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে।'
কালই মিরপুরে টি২০ দিয়ে শুরু হচ্ছে কুল অ্যান্ড কুল সিরিজ। ১, ৩ ও ৬ ডিসেম্বর তিনটি ওয়ানডে ম্যাচের পর আরও দুটি টেস্ট খেলবে পাকিস্তান। মিসবাহদের সাম্প্রতিক ফর্ম এবং অতীত পরিসংখ্যান সব কিছুই এ সিরিজে বাংলাদেশ পিছিয়ে। ২৬ ওয়ানডের মধ্যে ১৯৯৯ বিশ্বকাপে ওই একটি ম্যাচ ছাড়া সবগুলোতেই হারতে হয়েছে বাংলাদেশকে। মুলতানে একটি সম্ভাবনা ছাড়া ৬ টেস্টের সবগুলোতেই হেরেছে বাংলাদেশিরা। চারটি টি২০ ম্যাচের প্রত্যেকটিতেই হার। তারপরও শুধু ঘরের মাঠে খেলা বলেই কি মুশফিকদের থেকে সতর্ক থাকছেন মিসবাহ? বিসিবির কিছু কর্মকর্তার কানাঘুষা, এ সিরিজে একটি বড় মিশন নিয়ে এসেছে পাকিস্তান। আর সেটা হলো, ২০১২ সালের এপ্রিলে পাকিস্তানের মাটিতে বাংলাদেশকে সিরিজ খেলতে নিয়ে যেতে চায় পিসিবি। তার বদলে আইসিসির ভাইস প্রেসিডেন্টের পদ বাংলাদেশকে ছেড়ে দিতে রাজি পাকিস্তান। এ সিরিজের মাঝেই আগামী বছরের পাকিস্তান সফর নিয়ে পিসিবি একটি লিখিত চুক্তি করে নিতে যাচ্ছে বিসিবির কাছ থেকে। ২০০৯ সালে লাহোরে লংকান ক্রিকেট দলের বাসে সন্ত্রাসী হামলার পর বিদেশি দলগুলো যখন পকিস্তানে সফর বয়কট করেছে। তখন পাকিস্তান ভালো ভালো কথা বলে মুশফিকদের আগামী বছর সে দেশে নিতে চাইছে।
পাকিস্তানের এই গোপন অনুসন্ধি ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর, রিদওয়ান চিমার বলা_ 'বাংলাদেশিদের হৃদয় জয় করতে এসেছে পাকিস্তান...' বলার পেছনের কারণও স্পষ্ট হয়ে যায়।

No comments

Powered by Blogger.