ক্ষোভের নগরী বরিশাল-জিন্নাত স্যারের এই মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না

ছাত্রীদের বুকফাটা কান্না, সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা ও রাষ্ট্রীয় সম্মান দেওয়ার মধ্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা শিক্ষক জিন্নাত আলীর দাফন সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল রোববার জোহরের নামাজ শেষে নগরীর সাগরদীর এ ওয়াহেদ বালিকা বিদ্যালয়ের মাঠে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। মেয়েকে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করতে গিয়ে দুই বখাটের ছুরিকাঘাতে নির্মমভাবে খুন হন জিন্নাত আলী। এ ঘটনায় নগরীর সর্বস্তরের মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।


নিহত শিক্ষকেরকর্মস্থল এ ওয়াহেদ বালিকা বিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকা আলেকান্দা, সাগরদী ও রূপাতলীসহ নগরীর পশ্চিমাংশে এ নিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে। পুলিশের কাছে অভিযোগ করার পরও বখাটের হাতে সবার প্রিয় জিন্নাত স্যারের নির্মম মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না কেউ। এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সভা করেছে বরিশাল আঞ্চলিক শিক্ষক সমিতি। কালোব্যাজ ধারণ করেছে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ঘোষণা করা হয়েছে সাত দিনের প্রতিবাদ কর্মসূচি।
হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং দায়িত্বে অবহেলাকারী পুলিশের বিচারের দাবিতে গতকাল রোববার দুপুর পৌনে ১টায় নগরীর রূপাতলীতে বরিশাল-পটুয়াখালী ও বরিশাল-ঝালকাঠি আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষুব্ধ ছাত্রীরা। প্রায় আধঘণ্টা অবরোধের পর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহিদুজ্জামান এবং স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাইনুদ্দিন খান আইয়ুব ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বখাটে রূপম ওরফে রূপাকে গ্রেফতারের আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেয় তারা।
গতকাল সকালে শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিহতের লাশের ময়নাতদন্ত শেষে লাশ নেওয়া হয় স্কুল সংলগ্ন বাড়িতে। পরে লাশ নেওয়া হয় স্কুল প্রাঙ্গণে। এ সময় গোটা এলাকায় এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। স্কুলের নতুন ও পুরনো ছাত্রীরা প্রিয় শিক্ষকের মরদেহ ঘিরে কান্নায় ভেঙে পড়ে। সহকর্মী শিক্ষক ও অভিভাবকরাও অশ্রু ধরে রাখতে পারেননি। হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবিতে বিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও আশপাশের সড়কে ছাত্রীরা বিক্ষোভ করতে থাকে। বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত নামাজে জানাজায় নগরীর বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। জানাজাপূর্ব সমাবেশে ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কমিশনার জিল্লুর রহমান জিন্নাত আলীর অন্যতম খুনি রূপমকে গ্রেফতারের অঙ্গীকার করেন। পরে বিক্ষোভ মিছিল সহকারে লাশ নিয়ে যাওয়া হয় নগরীর মুসলিম গোরস্তানে। এর আগে মুক্তিযোদ্ধা জিন্নাত আলীকে রাষ্ট্রীয় সম্মান দেওয়া হয়।
মেয়েকে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করতে গিয়ে জিন্নাত আলী খুনের ঘটনায় শনিবার রাতে কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার বাদী হয়েছেন নিহতের স্ত্রী কাজী শিরিন আক্তার। মামলায় বখাটে রূপম ও মিঠুকে আসামি করা হয়েছে। মিঠু গ্রেফতার হলেও মূল ঘাতক রূপম এখনও পলাতক।
নিহতের স্ত্রী কাজী শিরিন আক্তার তার স্বামীর হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবির পাশাপাশি দায়ী পুলিশের বিচার দাবি করেন। নিহতের বড় জামাতা মোঃ জুবায়ের বলেন, বিপদের আশঙ্কায় কাউনিয়া থানায় জিডি করা হলেও পুলিশের গাফিলতির কারণে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে নির্মমভাবে জীবন দিতে হলো।
জানা গেছে ছুরিকাঘাতের পর জিন্নাত আলীকে বাঁচাতে চেষ্টা করে তার পরিবার-স্বজন ও শিক্ষকরা। ছুরিকাঘাতে পেটের ভেতরে ৫টি নাড়ি কেটে যাওয়ায় রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা তা বন্ধ করতে পারেননি। চিকিৎসকরা তাকে দ্রুত ঢাকায় পাঠানোর পরামর্শ দেন। তাকে দ্রুত ঢাকায় নেওয়া সম্ভব হয়নি।
শিক্ষকদের বিক্ষোভ : সাত দিনের কর্মসূচি
জিন্নাত হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে বরিশাল আঞ্চলিক শিক্ষক সমিতি গতকাল প্রতিবাদ সভা করেছে। দাসগুপ্ত আশীষ কুমারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভা শেষে শিক্ষকদের বিক্ষোভ মিছিল নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। আঞ্চলিক শিক্ষক সমিতি আগামীকাল মঙ্গলবার নগরীর প্রত্যেকটি বিদ্যালয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে। এদিকে এ ওয়াহেদ বালিকা বিদ্যালয়ে ঘোষিত সাতদিনের প্রতিবাদ কর্মসূচির প্রথম দিন গতকাল বিদ্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন এবং শিক্ষক-কর্মচারীরা কালোব্যাজ ধারণ করে। আজ সোমবার বিদ্যালয়ের সামনে মানববন্ধন রচনা করা হবে।

No comments

Powered by Blogger.