সিরিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপে সম্মত আরব লীগ

সিরিয়ার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপের বিষয়ে ঐকমত্যে পেঁৗছেছে আরব লীগ। শনিবার কায়রোতে আরব লীগের অর্থমন্ত্রীরা এক বৈঠকে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের সরকারের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করার বিষয়ে সম্মত হয়েছেন। দামেস্কে শান্তি মিশন পাঠানোর ব্যাপারে আরব লীগের প্রস্তাব এবং আলটিমেটাম অমান্য করার পর এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। খবর : রয়টার, এএফপি।
সিরিয়ার বিরুদ্ধে আরব লীগের প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অবরোধ প্যাকেজের খসড়ায় মধ্যে রয়েছে_ সিরিয়ার সরকারি সম্পদ জব্দ, সিরিয়াগামী সব বাণিজ্যিক ফ্লাইট স্থগিত ও দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে সব ধরনের লেনদেন বন্ধ করে দেওয়া। এর বাইরে সিরিয়ার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের ভ্রমণের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে ওই খসড়ায় বলা হয়েছে, সিরিয়ার জনগণের মৌলিক চাহিদার বিষয়গুলো এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে না। এদিকে সিরিয়ার বিরোধীরা দাবি করেছে, শনিবারও দেশটিতে ৪২ বেসামরিক ব্যক্তি ও সেনা নিহত হয়েছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, আরব লীগের প্রস্তাবিত অবরোধ কার্যকর হলে সিরিয়া গভীর অর্থনৈতিক সংকটে পড়বে। একই সঙ্গে দেশটি আঞ্চলিকভাবেও বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক যোগাযোগে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।
রোববার কায়রোতে আরব লীগের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের একটি বৈঠকে দামেস্কের বিরুদ্ধে প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপের বিষয়টি উত্থাপন করা হয়। গতকাল সেখানে অনুমোদন পেলে দামেস্কের বিরুদ্ধে প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অবরোধ কার্যকর হবে। পর্যবেক্ষক দলকে সিরিয়ায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার ব্যাপারে আরব লীগের বেঁধে দেওয়া সময়সীমা উপেক্ষা করায় দামেস্কের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপের বিষয়ে ঐকমত্যে পেঁৗছেছে এ জোট।
পর্যবেক্ষকদের প্রবেশের অনুমতি দিতে হবে নতুবা অবরোধের মুখোমুখি হতে হবে সিরিয়াকে_ এ হুশিয়ারি দিয়ে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল আরব লীগ। কিন্তু শুক্রবারের মধ্যে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হয় সিরিয়া। সিরিয়ার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য ৫০০ সদস্যের পর্যবেক্ষক দল পাঠাতে চায় আরব লীগ। কিন্তু দামেস্ক ৪০ জনকে সিরিয়ায় প্রবেশের অনুমতি দিতে রাজি। এ পরিস্থিতিতে সিরিয়ার বিরুদ্ধে কী ধরনের অবরোধ আরোপ করা হবে, তা ঠিক করতে গতকাল কায়রোয় মিলিত হন আরব লিগের মন্ত্রীরা। সিরিয়ার রফতানি পণ্যের অর্ধেকই যায় প্রতিবেশী আরব দেশগুলোয়। এ ছাড়া আরব দেশগুলো থেকে এক-চতুর্থাংশ পণ্য আমদানিও করে থাকে দেশটি। গত আট মাস ধরেই সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ চলছে। আসাদ অনুগত নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে বলে জাতিসংঘ জানিয়েছে।
এদিকে হত্যাযজ্ঞ বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আহ্বান উপেক্ষা করে প্রেসিডেন্ট আসাদ সরকারবিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখার হুমকি দিয়েছেন। এই প্রথম আরব লীগ জোটের কোনো সদস্য রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে।
নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলে সিরিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে সব ধরনের লেনদেন বন্ধ থাকবে। তবে সিরিয়ার নাগরিকদের নিত্যপ্রয়োজনীয় রসদ সরবরাহ এর বাইরে থাকবে। সিরিয়ার মানবাধিকার সংগঠন সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস দাবি করেছে, শনিবার সরকারি বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছে আরও ২৭ বেসামরিক নাগরিক। তাদের অধিকাংশই হমস ও কুসেইর শহরে সরকারি বাহিনীর গুলিতে মারা যায় বলে জানায় সংগঠনটি। সেনাবাহিনীর পক্ষত্যাগী বিদ্রোহী সেনাদের হামলায় সরকারি বাহিনীর ১২ সেনা নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে একটি সূত্র। সরকারি সেনাদের একটি বহর মারাত আল নুমান শহরের দিকে যাওয়ার সময় তাতে হামলা চালায় বিদ্রোহী সেনারা। এখানে লড়াইয়ে ৩ বিদ্রোহী সেনাও নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। সিয়িয়ায় বিদেশি গণমাধ্যমগুলোর কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি থাকায় বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া খবরগুলো নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের পর বাহরাইন এবং কাতার গতকাল রোববার সিরিয়া থেকে তাদের নিজ নিজ দেশের নাগরিকদের দেশে চলে আসায় আহ্বান জানিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.