ডিসিসি বিভক্তি ঝুঁকিপূর্ণ-নাগরিকদের পরামর্শ নিন

ঠাৎ করেই সরকার বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা মহানগরীর ঢাকা সিটি করপোরেশনকে উত্তর ও দক্ষিণ_দুটি ভাগে ভাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ঢাকা ভাগ করার এই বিল আজই সংসদে পাস হতে পারে বলে সংবাদমাধ্যমে জানা গেছে। স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রীও তেমন ইঙ্গিত দিয়েছেন। সেই সঙ্গে নির্বাচনের আগে প্রশাসক নিয়োগের মেয়াদ ১৮০ দিন থেকে কমিয়ে ৯০ দিন করা হতে পারে। বিলটি পাস হলে আগামী সপ্তাহেই সিটি করপোরেশনে দুই প্রশাসক
নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। উল্লেখ্য, ৪০০ বছরের পুরনো ঢাকা শহরকে ভেঙে দুই ভাগ করার সরকারের এ সিদ্ধান্তকে সংকীর্ণ স্বার্থে নেওয়া উদ্যোগ বলে মনে করছে বিভিন্ন মহল।
ঢাকা সিটি করপোরেশন ভেঙে দুই ভাগ করার এত বড় একটি সিদ্ধান্ত সরকার কোনো পরিকল্পনা এবং জনগণ ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ছাড়াই কী করে নিল, তা কোনো মহলের কাছেই বোধগম্য নয়। যেখানে একটি সিটি করপোরেশনের সঙ্গেই সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কোনো সমন্বয় নেই, যে মহানগরীতে বেশির ভাগ মানুষ নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত; রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ, টেলিফোন সংযোগসহ জায়গা-জমি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে হাজারো সমস্যা বিদ্যমান, সেখানে দুটি সিটি করপোরেশন হলে কী করে সমন্বয় সাধন হবে? কী পরিমাণ সমস্যার পাহাড় জমবে? ডিসিসির পানি সরবরাহ, বিদ্যুৎ সরবরাহ থেকে শুরু করে অফিস-আদালতের কার্যক্রম নিয়ে পর্যন্ত সম্ভাব্য দুই সিটি করপোরেশনের মধ্যে যে চরম সংকট তৈরি হবে, সহজেই তা অনুমেয়। ডিসিসির বর্তমান মেয়র হয়তো এসব কথা বিবেচনা করেই ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি আর নির্বাচন করবেন না। তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে পদত্যাগ করবেন। তবুও সিটি করপোরেশনকে যেন না ভাঙা হয়। পৃথিবীর কোনো দেশেই মহানগরীকে ভেঙে দুটি সিটি করপোরেশন করা হয় না। ইংল্যান্ড একবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে।
একবার সিটি করপোরেশন ভেঙে ফেললে তা আবার প্রয়োজনে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে। ব্যয় হবে সময়, সৃষ্টি হবে অনেক জটিলতা। তাই এ সিটি করপোরেশন ভাঙার আগে সরকারকে শতবার ভাবতে হবে। যদি ভাঙতেই হয়, তাহলে অবশ্যই এ ব্যাপারে নগর বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ এবং নাগরিকদের মতামত নিতে হবে। এভাবে সরকারের হুট করে ঢাকা সিটি করপোরেশন ভাঙার চেষ্টাকে আমরা কোনোক্রমেই সমর্থন করি না। প্রয়োজনে সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন কার্যক্রম একাধিক প্রকল্পে বিভক্ত করা যেতে পারে। বরং প্রয়োজনে যেসব অঞ্চল ইতিমধ্যে ঢাকার সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে গেছে, অথচ স্থানীয় সরকারব্যবস্থায় তা ঢাকার সঙ্গে যুক্ত নয়, সেসব এলাকাকে ঢাকার সঙ্গে আত্তীকরণ করে নিতে হবে।
সরকারের বহু মৌলিক কাজ পড়ে আছে, যা এখনো নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুসারে সম্পন্ন করা যায়নি। যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন, পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে জটিলতা নিরসন, দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে নিয়ে আসাসহ কৃষি অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনা এবং নগর উন্নয়নের মতো কাজ রয়ে গেছে অনেক। এ অবস্থায় ঢাকা সিটি করপোরেশন ভাঙতে যাওয়া সরকারের জন্যও একটি চরম ঝুঁকি ডেকে আনার শামিল। সুতরাং বিলটি সংসদে উত্থাপন ও পাস করার বিষয়ে সংসদ সদস্যদের আরো একবার গভীরভাবে ভেবে দেখতে হবে। ডিসিসি ভাঙার ফলে এবং তা যদি সঠিকভাবে পরিচালিত না হয়, তাহলে দেশের আমদানি-রপ্তানিসহ সার্বিক অর্থনীতি চরম ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত নাগরিকদের জীবন করপোরেশনের সঙ্গে বাঁধা থাকে, সে জীবন দ্বিখণ্ডিত হলে জীবনের সমস্যাও দ্বিগুণ বেড়ে যাবে।

No comments

Powered by Blogger.