যুক্তরাজ্য নিয়ে ইরানের পার্লামেন্টে ভোট-সম্পর্কের অবনমন, রাষ্ট্রদূত বহিষ্কারের পক্ষে রায়

যুক্তরাজ্যের সঙ্গে কূটনীতিক সম্পর্ক অবনমনের পক্ষে রায় দিয়েছে ইরানের পার্লামেন্ট। গতকাল রবিবার এ-সংক্রান্ত একটি বিলের ওপর অনুষ্ঠিত ভোটাভুটিতে ১৭৯ জন আইনপ্রণেতার অধিকাংশই এর পক্ষে ভোট দিয়েছেন। বিলটি সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর পরিষদ 'গার্ডিয়ান কাউন্সিলের' অনুমোদন পেলে তেহরানে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূতকে দেশে ফিরে যেতে হবে।দেশটির বিতর্কিত পরমাণু কর্মসূচির বিরুদ্ধে শাস্তি হিসেবে ইরানি ব্যাংকগুলোর ওপর যুক্তরাজ্যের
অবরোধ আরোপের পর এ সিদ্ধান্ত নিল ইরান। বিলে অর্থ ও বাণিজ্যিক সম্পর্কও 'নূ্যনতম' পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। ইরানের রাষ্ট্রীয় বেতারে ভোট সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। তেহরানের এ পদক্ষেপকে 'দুঃখজনক' বলে মন্তব্য করেছে লন্ডন।
চলতি মাসের গোড়ার দিকে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) ইরানের পরমাণু প্রকল্প প্রসঙ্গে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে অভিযোগ করা হয়, পরমাণু অস্ত্র তৈরির ব্যাপারে কাজ করছে ইরান। এ নিয়ে উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার ইরানের ওপর নতুন করে অবরোধ আরোপের ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ব্রিটেন। এ বিষয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় তেহরান। পরদিন বুধবার ব্রিটেনের সঙ্গে কূটনীতিক সম্পর্কের অবনতি ঘটানো সংক্রান্ত বিল পার্লামেন্টে তোলা হয়। গতকাল এর ওপর ভোটাভুটি হয়। ইরানের রাষ্ট্রীয় বেতারের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপি ও বিবিসি গতকাল জানিয়েছে, বিলটির বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন মাত্র চারজন আইপ্রণেতা। ১১ জন ভোটদানে বিরত ছিলেন। বিলের দাবি অনুযায়ী, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ইরানের কূটনীতিক সম্পর্ক রাষ্ট্রদূত থেকে সার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স পর্যায়ে অবনমন করতে হবে। সংবিধান রক্ষাকারী পরিষদ গার্ডিয়ান কাউন্সিল বিলটিতে অনুমোদন দিলে তেহরানে নিযুক্ত ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত ডমিনিক চিলকট বহিষ্কার হতে পারেন। তিনি গত মাসেই দায়িত্ব পেয়ে তেহরানের ব্রিটিশ দূতাবাসে যোগ দিয়েছেন।
পার্লামেন্টের স্পিকার আলি লারিজানি সতর্ক করে বলেন, 'এ বিল পাসের ব্যাপাটির ঘটনার শুরু মাত্র।'
বার্তা সংস্থাগুলো জানায়, পার্লামেন্টে ভোটগ্রহণের সময় কয়েকজন আইনপ্রণেতা 'ব্রিটেন মুর্দাবাদ' বলে স্লোগান দেন। এ সময় 'যেসব দেশ ইরানের সঙ্গে ব্রিটেনের মতো আচরণ করছে তাদের ক্ষেত্রেও একই পদক্ষেপ' নেওয়ার ব্যাপারেও চাপ দেন অনেক আইনপ্রণেতা। গত বুধবার বিলটি পার্লামেন্টে তোলার পরপরই এর প্রতিক্রিয়ায় ব্রিটেন জানিয়েছিল, তেহরান যদি এমন পদক্ষেপ নেয় তবে তা হবে 'দুঃখজনক'। আইএইএর প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকেই পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে ইরানের সম্পর্কের ক্রমশ অবনতি ঘটছে। নতুন করে অবরোধ আরোপের ফলে তা কার্যত তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। আগামী বৃহস্পতিবার ফ্রান্সসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) অন্য দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের অনুষ্ঠেয় বৈঠক থেকেও ইরানের ওপর নতুন অবরোধ আরোপের ঘোষণা আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.