চরাচর-মধুচাষের কথা

বাংলাদেশে চার প্রজাতির মৌমাছি রয়েছে। এগুলো হচ্ছে_এপিস মলিফেরা, এপিস সেরেনা, এপিস ডরসাটা ও এপিস ফ্লোরিয়া। এদের ভেতর এপিস মলিফেরা ও এপিস সেরেনা প্রজাতির মৌমাছি মধু সংগ্রহের উদ্দেশ্যে বাঙ্ েভরে চাষ করা হয়। তবে বাণিজ্যিকভাবে বেশি লাভজনক হচ্ছে এপিস মেলিফেরা চাষ। কারণ, এ প্রজাতির নতুন রানি মৌমাছি সৃষ্টির (কুইন গ্রাফটিং) মাধ্যমে মৌকলোনি বৃদ্ধি করা যায়। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বাঙ্রে ভেতর মৌমাছি


প্রতিপালন করে মধু সংগ্রহ করাকে মৌচাষ বলা হয়। এই বাঙ্ েরানি, পুরুষ ও শ্রমিক মৌমাছি একসঙ্গে বসবাস করে বলে বাঙ্টি মৌকলোনি নামে পরিচিত। একটি কলোনিতে রানি মৌমাছিকে ঘিরে পাঁচ হাজার থেকে ৭৫ হাজার মৌমাছি একসঙ্গে বাস করে। ফেরোমোন নামে এক ধরনের রাসায়নিকের গন্ধে আকৃষ্ট হয়ে রানি মৌমাছি এখানে থাকে। তাই এরা কলোনি ছেড়ে যায় না। রানি মৌমাছির কাজ শুধু ডিম দেওয়া। প্রতিদিন রানি মৌমাছি এক হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার ডিম দিতে পারে। তিন থেকে চার বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে। অন্যান্য মৌমাছি শ্রমিক হিসেবে সারা জীবন শুধু মধু সংগ্রহকারীর কাজ করে। ১৮ থেকে ২০ ফ্রেমের একটি মৌকলোনি থেকে বছরে ৫০ থেকে ৭০ কেজি পর্যন্ত মধু সংগ্রহ করা সম্ভব। মৌচাষিরা বিভিন্ন ঋতুতে তাঁদের মৌ বাঙ্ েনিয়ে গাজীপুর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, শেরপুর, সাভার, দিনাজপুর, রাজশাহী, বরগুনা ও সুন্দরবনের সাতক্ষীরা অঞ্চলে মধু সংগ্রহে চলে যান। একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তাঁরা সেখানে অবস্থান করেন এবং মধু সংগ্রহ করে ফিরে আসেন। সংগ্রহকারীরা কেউ কেউ স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে মধু বিক্রি করেন। বড় খামারিরা মধু নিয়ে এসে সংগৃহীত মধু প্রসেসিং প্লান্টে পরিশোধন করে বাজারজাত করেন। ইদানীং খুলনা, যশোর, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে মৌচাষের পেশা। বাংলাদেশে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মৌচাষ, মধু উৎপাদন এবং এর ব্যবসা শুরু হয় প্রায় দুই যুগ আগে। মৌ বাঙ্ েপরিকল্পিত উপায়ে মৌমাছি পালন, উৎপাদিত মধু চাক না ভেঙে নিষ্কাশনযন্ত্রের সাহায্যে মধু সংগ্রহ এবং সংগৃহীত মধু আধুনিক প্লান্টে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে পরিশোধন করে এখন বাজারজাত করা হচ্ছে। বাংলাদেশে বর্তমানে এক হাজার ২০০ টন মধু উৎপাদিত হচ্ছে বলে বাংলাদেশ এপিকালচারাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএএ) সূত্র জানায়। এর আনুমানিক মূল্য প্রায় ৪০ কোটি টাকা। কিন্তু দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে মধুর চাহিদা রয়েছে প্রায় তিন হাজার টন। দেশে সংগৃহীত মধুর ৬০ শতাংশ সরিষা থেকে, ৩০ শতাংশ লিচু থেকে, অন্যান্য ফুল এবং সুন্দরবন অঞ্চলের বিভিন্ন বৃক্ষের ফুল থেকে সংগৃহীত হয় বাকি ১০ শতাংশ। সরিষা, লিচু, তিল ও কালিজিরার ফুল থেকে সংগৃহীত মধু আলাদাভাবে বাজারজাত করছেন ব্যবসায়ীরা। মধুশিল্পের সঙ্গে প্রায় দুই লাখ লোক জড়িত। যথাযথ সরকারি সহায়তা পেলে বাংলাদেশে ১৮ থেকে ২০ হাজার টন মধু উৎপাদন করা সম্ভব বলে মনে করেন উদ্যোক্তারা।
আজিজুর রহমান

No comments

Powered by Blogger.