কালের কণ্ঠের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে আইভী-শামীম ভাই ও তৈমূর চাচাকে পাশে চাই by অমিতোষ পাল ও পার্থ প্রতীম ভট্টাচার্য্য

বগঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াত আইভী। দলীয় প্রার্থী এ কে এম শামীম ওসমানকে এক লাখেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে দেশের ইতিহাসে প্রথম নারী মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। তবে দলের সমর্থন না থাকলেও তাঁর সঙ্গে ছিল দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার দোয়া। রবিবার রাত থেকেই মানুষের ভিড় তাঁর দেওভোগের বাসায়। ফুলের তোড়া, মিষ্টিতে ভরে ওঠে তাঁর বাসা, অফিস।পরিচিত মানুষ, কর্মী ও নেতাদের অভিনন্দন, মিডিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎকার_এসবের মধ্য দিয়েই তিনি দিনটি পার করেছেন গতকাল। ক্লান্ত শরীর, কিন্তু ঘুমানোর ফুরসত নেই।


হাসিমুখে সবার সঙ্গে কথা বলছেন।দেওভোগের নিজ বাসভবনে কালের কণ্ঠের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনার ওপর তাঁর আস্থা, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নিয়ে তাঁর ভবিষ্যৎ ভাবনা_ সবই জানিয়েছেন। তাঁর ভাবনাগুলো বিস্তারিত তুলে ধরা হলো।
প্রশ্ন : নির্বাচনে দল আপনাকে সমর্থন দেয়নি, এর পরও আপনি বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন। এখন কেমন লাগছে?
উত্তর : দলীয় সমর্থন না থাকলেও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার দোয়া ছিল আমার প্রতি। তিনি আমাকে অত্যন্ত স্নেহ করেন। গণভবনে দেখা করতে গেলে তিনি বলেছিলেন, আইভী বিজয়ী হয়ে এলে আমি সবচেয়ে বেশি খুশি হব। আল্ল্লাহ তাঁর মুখ উজ্জ্বল করেছেন।
শামীম ওসমানকে দলীয় সমর্থন এবং তাঁর পক্ষে প্রচারণায় অনেক নেতা নামলেও অধিকাংশ সিনিয়র নেতা এবং তাঁদের আশীর্বাদ আমার ওপর ছিল। নির্বাচনের আগে এবং পরে তাঁরা আমাকে ফোন করে যোগাযোগ করে সাহস জুগিয়েছেন।
প্রশ্ন : নেতাদের কে কে আপনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন?
উত্তর : যাঁরা আমার পক্ষে ছিলেন তাঁরা জানিয়েছেন। পাশাপাশি আরো অনেকে আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। কিন্তু নাম বলা যাবে না।
প্রশ্ন : আপনাকে কি দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা অভিনন্দন বার্তা পাঠিয়েছেন?
উত্তর : নেত্রী বিদেশে ছিলেন। মাত্র দেশে ফিরেছেন। নিশ্চয়ই তিনি আমাকে অভিনন্দন জানাবেন। আমার প্রতি তো তাঁর দোয়া ছিলই।
প্রশ্ন : নেত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন না?
উত্তর : আমি দুই-এক দিনের মধ্যেই ঢাকায় যাব। গণভবনে যাব নেত্রীর সঙ্গে দেখা করতে।
প্রশ্ন : দলের সমর্থন পেতে ব্যর্থ হলেন, এখন দল নিয়ে আপনি কী ভাবছেন?
উত্তর : আমি আওয়ামী লীগে ছিলাম, আছি, থাকব। আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক। আমি দলের একজন কর্মী হয়ে কাজ করতে চাই। তবে নেতা হতে চাই না।
প্রশ্ন : নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নিয়ে আপনার ভাবনা কী?
উত্তর : নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনকে আমি সাজাতে চাই। সিটি করপোরেশনের উন্নয়নই আমার মূল ভাবনা। দল-মতের ঊধর্ে্ব উঠে মেয়র হিসেবে আমি কাজ করতে চাই। প্রথমে আমি আমার নির্বাচনী ওয়াদা পূরণ করতে চাই। রাস্তাঘাটের উন্নয়ন এবং ড্রেনেজ সমস্যার সমাধান আমার প্রথম এজেন্ডা।
সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, জমি দখল ও টেন্ডারবাজদের বিরুদ্ধে আমি যুদ্ধ চালিয়ে যাব। আমি মনে করি, নিজে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড না করলে এবং এগুলোকে প্রশ্রয় না দিলে কেউ এসব করতে সাহস পাবে না। যেখানে অপরাধ সেখানেই প্রতিবাদ করা হবে।
প্রশ্ন : নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নে কিংবা সন্ত্রাস, চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে আপনার লড়াইয়ে শামীম ওসমানকে কি পাশে চান?
উত্তর : নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে শামীম ভাইয়ের অবদান অনেক। সেটা অস্বীকার করলে চলবে না। আমি নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নে শামীম ভাই এবং তৈমূর চাচাকে পাশে চাই। সবাই মিলে আমরা নারায়ণগঞ্জকে গড়ে তুলতে চাই।
প্রশ্ন : দেশের প্রথম সিটি করপোরেশনের নারী মেয়র হয়ে ইতিহাস গড়লেন, আপনার অনুভূতি কী?
উত্তর : আমি নিজেকে নারী হিসেবে দেখতে চাই না। প্রথমে আমি একজন মানুষ। তারপর একজন নারী। তবে যেকোনো জয়ই আনন্দের।
প্রশ্ন : আপনার বাবাও ছিলেন প্রথম নির্বাচিত পৌর মেয়র, আপনিও প্রথম নির্বাচিত সিটি করপোরেশনের মেয়র। দুজনই দলের সমর্থন পেতে ব্যর্থ হয়েছিলেন; কিন্তু দুজনই জিতেছেন। কিভাবে দেখছেন এটাকে?
উত্তর : আজকের আইভী তাঁর বাবার জন্য। বাবার জন্যই আজ আমি এত দূর আসতে পেরেছি। বাবা এবং আমার পাশে দলের তৃণমূল নেতা-কর্মীরা সব সময় ছিল। কারণ বাবা এবং আমি দলের দুঃসময়ে পাশে ছিলাম। দলের তৃণমূল নেতা-কর্মীরা কখনোই ভুল করে না। এটা ১৯৭৪ সালে প্রমাণ হয়েছে। এবারও প্রমাণিত হলো। আমার বাবা ও আমার পরিবার কোনোদিন মানুষের ভালোবাসা এবং আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রতারণা করেনি। জনগণ সেই বিশ্বাস ও আস্থায় রায় দিয়েছেন।
প্রশ্ন : দলীয় প্রার্থীকে আপনি হারিয়েছেন। এতে নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগে বিভেদ সৃষ্টি হবে বলে মনে করেন?
উত্তর : এটা স্থানীয় নির্বাচন। এখানে অনেকেই প্রার্থী হতে পারেন। অনেক সময় দলের একাধিক প্রার্থী থাকতে পারে। নির্বাচনে জয়-পরাজয় থাকে। মানুষ আমাকে চেয়েছে। আমি জিতেছি। এতে দলের মধ্যে কোনো বিভেদ সৃষ্টি হবে না। নারায়ণগঞ্জের নেতা-কর্মীদের মধ্যে কোনো বিভেদ নেইও।
প্রশ্ন : এত বড় জয়ে সবচেয়ে বড় অবদান কার?
উত্তর : সবচেয়ে বড় অবদান নারায়ণগঞ্জের মানুষের। মিডিয়াও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। সরকার ও নির্বাচন কমিশন একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিয়েছে। আমি সবার প্রতি কৃতজ্ঞ।
প্রশ্ন : নির্বাচন সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
উত্তর : নির্বাচন খুবই শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এটা গণতন্ত্রের জন্য একটা অগ্রগতি। যে নির্বাচন হয়েছে সেখানে হেরে গেলেও আমি জনরায় মেনে নিতাম।
প্রশ্ন : নির্বাচন কমিশনের বিধান অনুযায়ী নির্বাচনী প্রচারণার ব্যয় যথেষ্ট কি না?
উত্তর : নির্বাচনী ব্যয় আরো কমানো উচিত। নির্বাচনী পোস্টারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা উচিত। এসব পোস্টার পরে ড্রেনেজ সিস্টেমে সমস্যা সৃষ্টি করে। পোলিং এজেন্টের পেছনে যে টাকা ব্যয় করা হয় এর কোনো দরকার নেই। জনগণ ভালোবাসলে তারা খুশি হয়ে এজেন্ট হতে আগ্রহী হয়।
প্রশ্ন : আপনাকে কালের কণ্ঠের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ।
উত্তর : আমার পক্ষ থেকেও কালের কণ্ঠকে ধন্যবাদ। আপনাদেরও ধন্যবাদ। যেসব সাংবাদিক ঢাকা থেকে এসেছেন, এক মাস পর আপনাদের সবাইকে ডাকব। আলাপ করব।

No comments

Powered by Blogger.