সিএনএনকে সাক্ষাৎকার: এটা যদি যুদ্ধাপরাধ না হয়, তবে কী—ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ওলমার্টের প্রশ্ন

ইসরায়েলের বর্তমান রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও দেশটির সামরিক বাহিনীর কর্মকাণ্ড নিয়ে আবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাবেক ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী এহুদ ওলমার্ট। সিএনএনকে তিনি বলেছেন, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তিনি আর খণ্ডন করতে পারছেন না।

ওলমার্ট, বিশেষ করে গাজার ওপর ইসরায়েলি বাহিনীর সর্বশেষ ১১ সপ্তাহের অবরোধ ও সেখানে হামলা জোরালো করা নিয়ে কথা বলেছেন। এ অবরোধের মধ্যে গাজায় কোনো ধরনের ত্রাণ ঢুকতে দেয়নি ইসরায়েল। ফলে সেখানে চরম মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। উপরন্তু, হামলা জোরদার করায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যাও দ্রুত বাড়ছে সেখানে।

সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ওলমার্ট উল্টো প্রশ্ন তোলেন, ‘এটা যদি যুদ্ধাপরাধ না হয়, তবে কী?’

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তাঁর সরকারের চরম ডানপন্থী সদস্যরা যা করছেন, অন্য কোনোভাবে এর ব্যাখ্যা করা যায় না বলেও মন্তব্য করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ওলমার্ট।

গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে জাতিগত হত্যা ও নিধনের যে অভিযোগ উঠেছে, বিদেশিদের কাছে এত দিন তা খণ্ডন করে আসছিলেন ওলমার্ট।

যখন গাজায় নারী ও শিশুদের হত্যার অভিযোগ ওঠে তখন ওলমার্ট কর্মকর্তাদের কাছে ও বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে ইসরায়েলের পক্ষে যুক্তি হিসেবে তাদের বাহিনী ইচ্ছা করে সাধারণ ফিলিস্তিনিদের হামলার লক্ষ্যবস্তু করছে না বলে সাফাই দিয়েছিলেন। ওলমার্ট নিজেই এ কথা জানান।

১৯ মাস ধরে গাজা যুদ্ধ চলছে। ওলমার্ট মনে করেন, এ যুদ্ধ আরও এক বছর আগেই শেষ হওয়া উচিত ছিল। এখন এ যুদ্ধের পক্ষে তিনি আর কোনো যুক্তি তুলে ধরতে পারবেন না বলেও বিশ্বাস তাঁর।

    আমরা এখন গাজায় যা করছি, তা হলো ধ্বংসযজ্ঞের যুদ্ধ। নির্বিচার, সীমাহীন, নিষ্ঠুর ও অপরাধমূলকভাবে নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে।
     -------এহুদ ওলমার্ট, ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী

২০০৬ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ওলমার্ট। ইসরায়েলের পত্রিকা হারেৎজে গত মঙ্গলবার ওলমার্টের একটি মতামত প্রকাশিত হয়। সেখানে তিনি লেখেন, ‘আমরা এখন গাজায় যা করছি, তা হলো ধ্বংসযজ্ঞের যুদ্ধ। নির্বিচার, সীমাহীন, নিষ্ঠুর ও অপরাধমূলকভাবে নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে।’

এই মতামত প্রকাশের পর সিএনএন ওলমার্টের সঙ্গে কথা বলে।

গাজা যুদ্ধে এ পর্যন্ত ৫৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তাঁদের মধ্যে অন্তত ২৮ হাজার জন নারী ও শিশু।

এ বছর জানুয়ারিতে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বলেছিল, যুদ্ধে তারা ২০ হাজারের বেশি হামাস যোদ্ধাকে হত্যা করেছে।

ওলমার্ট বলেন, ‘আমাদের এটা নিশ্চিত করা দরকার যে গাজায় যেসব মানুষ এ সংঘাতে জড়িত নন, তাঁরা যেন এই সামরিক অভিযান সম্প্রসারণের কারণে কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। আমি মনে করি, এ অভিযান পুরোপুরি অযৌক্তিক এবং এ মুহূর্তে এটি ইসরায়েল রাষ্ট্রের কোনো গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ রক্ষায় কাজ করছে না।’

ওলমার্টের সমালোচনার মূল লক্ষ্য নেতানিয়াহু এবং তাঁর দুই কট্টর ডানপন্থী মন্ত্রী ইতামার বেন গভি ও বেজালেল স্মোট্রিচ।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ওলমার্ট সিএনএনকে বলেন, ‘আশা করি, যত দ্রুত সম্ভব এ (নেতানিয়াহু) সরকার চলে যাবে। আমি বিশ্বাস করি, অধিকাংশ ইসরায়েলি এ সরকারের নীতিমালা, বক্তব্য এবং এই সরকারের কারণে ইসরায়েল রাষ্ট্র ও দেশের জনগণের ন্যায়পরায়ণতার যে ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে, তা নিয়ে ক্লান্ত ও বিরক্ত।’

ইসরায়েলে নানা জরিপে বারবার উঠে আসছে, দেশটির অধিকাংশ মানুষ গাজায় একটি বিস্তৃত যুদ্ধবিরতি চান, যার মাধ্যমে গাজায় থাকা বাকি ৫৮ জিম্মিকে মুক্ত করা ও যুদ্ধের অবসান ঘটানো সম্ভব হবে।

    ট্রাম্প একমাত্র ব্যক্তি, যিনি নেতানিয়াহুকে যুদ্ধ বন্ধ করতে বাধ্য করতে পারেন।
    ---------এহুদ ওলমার্ট, ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী

কিন্তু নেতানিয়াহু যুদ্ধ শেষ করার ব্যাপারে কোনো প্রতিশ্রুতি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন ও জোর দিয়ে বলেছেন, গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান হামাস পরাজিত না হওয়া পর্যন্ত চলবে।

জিম্মিদের পরিবারের অনেকের মতো ওলমার্টও নেতানিয়াহুর ওপর থেকে আস্থা হারিয়েছেন এবং গাজা যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দিকে তাকিয়ে আছেন।

ওলমার্ট বলেন, ট্রাম্পই একমাত্র ব্যক্তি যিনি নেতানিয়াহুকে যুদ্ধ বন্ধ করতে বাধ্য করতে পারেন।

ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এহুদ ওলমার্ট
ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এহুদ ওলমার্ট। ফাইল ছবি: রয়টার্স

No comments

Powered by Blogger.