সৌদি আরব: হেফাজতে নির্যাতন করা হয়নি বললে তবেই মুক্তি?

সৌদি আরবে কারাবন্দী একজন নারী অধিকার কর্মীর পরিবার অভিযোগ করছে যে, ঐ অধিকার কর্মীকে আটক অবস্থায় নির্যাতন করা হয়নি, এমন বক্তব্য দিলে তাকে মুক্তি দেয়া হবে।
রাষ্ট্র বিরোধী অপশক্তির সাথে তিনি ষড়যন্ত্র করেছেন - এমন অভিযোগে এই বছরের মার্চে কারাবন্দী অ্যাক্টিভিস্ট লুযেইন আল হাথলুলকে আরও নয়জন অধিকার কর্মীসহ গ্রেফতার করা হয়।
সৌদি আরবে নারীদের গাড়ি চালানোর অধিকার আদায়ে লুযেইন আল হাথলুলের সক্রিয় ভূমিকা ছিল।
নির্যাতনের অভিযোগ
ব্রাসেলসে বসবাসকারী তার বোন লীনা আল হাথলুল মঙ্গলবার এক টুইট বার্তায় বলেছেন, "আমি এই বিষয়ে লিখে হয়ত ঝুঁকি নিচ্ছি। হয়ত এতে আমার বোনের ক্ষতি হবে কিন্তু আমার পক্ষে এই ব্যাপারে কিছু না বলে আর থাকা সম্ভব হচ্ছে না। লুযেইনকে একটা প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। তাকে বলা হয়েছে তাকে নির্যাতন করা হয়েছে কিনা, এই বিষয়টি তিনি যদি অস্বীকার করেন তবে তাকে মুক্তি দেয়া হবে।"
নারী অধিকার বিষয়ে সৌদি আরব বিরোধী ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে।
তিনি আরও লিখেছেন, "আবারো বলছি লুযেইনকে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। তাকে শারীরিক ও যৌন নির্যাতন করা হয়েছে।"
তার পরিবার এর আগেও শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছে। যা সৌদি সরকার প্রত্যাখ্যান করে আসছে।
এই অভিযোগের ব্যাপারে বিবিসি সৌদি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছে। দেশটির কর্তৃপক্ষ এই ব্যাপারে এখনো কিছু বলে নি।
কে এই লুযেইন আল হাথলুল
মিজ হাথলুল সৌদি আরবে নারী অধিকার বিষয়ে পরিচিত একটি মুখ। ২০১৪ সালে তিনি প্রথম পরিচিতি পান।
সেসময়ে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সীমান্ত দিয়ে তিনি গাড়ি চালিয়ে ঢোকার চেষ্টা করেছিলেন।
পুরো বিষয়টি তিনি টুইটারে লাইভ করেছিলেন।
অনেক সমালোচনার মুখে এই বছরের জুন মাসে সৌদি আরব গাড়ি চালানোর ব্যাপারে নারীদের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।
লীনা আল হাথলুল এক টুইট বার্তায় তার বোনকে দেয়া সরকারি প্রস্তাব সম্পর্কে তথ্য তুলে ধরেন।
সৌদি নারীদের 'পুরুষ অভিভাবক' সম্পর্কিত একটি আইনও এই মাসে কিছুটা শিথিল করা হয়েছে।
ঐ আইন অনুযায়ী একজন নারীর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে তার কোনো পুরুষ আত্মীয়, অর্থাৎ বাবা, ভাই, স্বামী ও ছেলের অনুমোদন প্রয়োজন হতো।
সম্প্রতি ঐ আইনের একটি ধারা পরিবর্তিত হয়েছে, যেখানে বলা ছিল দেশের বাইরে কোথাও যেতে হলে সাথে করে এদের কাউকে নিয়ে যেতে হবে।
এসব আইনের পরিবর্তন হতে থাকলেও এগুলো পরিবর্তনের জন্য আন্দোলনে যাদের সক্রিয় ভূমিকা ছিল তাদের মধ্যে বেশিভাগ এখনো কারাগারে আটক রয়েছেন।
নির্যাতনের অভিযোগ নতুন নয়
আটকদের মধ্যে এপর্যন্ত চারজন নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছেন।
তাদের বক্তব্য অনুযায়ী কারাগারে তাদের বিদ্যুতের শক, চাবুক দিয়ে পেটানো ও যৌন নির্যাতন করা হয়েছে।
দেশটির কর্তৃপক্ষ অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
সৌদি নারীদের "পুরুষ অভিভাবক" আইনও কিছুটা শিথিল করা হয়েছে।
আটক অ্যাক্টিভিস্টদের মুক্তির দাবি রয়েছে পশ্চিমা দেশগুলোর পক্ষ থেকে।
জাতিসংঘের তরফ থেকেও তাদের মুক্তি দেয়ার আহবান জানানো হয়েছে।
গত বছর তুরস্কে সৌদি দূতাবাসে সাংবাদিক জামাল খাসোগজির হত্যাকাণ্ডের পর থেকে সৌদি আরবকে আরও কঠোরভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য সমালোচনা করা হচ্ছে।
এসব সমালোচনার ব্যাপারে সৌদি আরবের উত্তর হল, "মানবাধিকারের নাম করে তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের চেষ্টা চলছে।"
গত বছরের আগস্ট মাসে সৌদি আরব কানাডার সাথে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করে এবং কানাডার রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করে।
এর কারণ, কানাডার পক্ষ থেকে আটক অ্যাক্টিভিস্টদের মুক্তির দাবি তোলা হয়েছিলো।
সৌদি নারীরা এখন অনেকেই গাড়ি চালানো শিখছেন।

No comments

Powered by Blogger.