হঠাৎ বদলে গেল দৃশ্যপট

কে জানে, এটা হয়তো কাকতালীয়ই। প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী দু’টি ছাত্র সংগঠন একই সময়ে আলোচনার শীর্ষে। যদিও দিনকাল তাদের একরকম যাচ্ছে না। বাংলাদেশে রাজনীতি এমনিতেই স্থির। বহুদিন হলো এক জায়গায় দাঁড়িয়ে। ছাত্ররাজনীতিও ব্যতিক্রম কিছু নয়। ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের রাজত্ব। একসময়কার প্রবল প্রতাপশালী ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের খোঁজ পাওয়া যায় মাঝে-মধ্যে। বিশেষ করে নিজ দলে বিদ্রোহের ঘটনায়। অথচ একসময় ছাত্রদলকেই বিবেচনা করা হতো বিএনপির রাজনীতির প্রধানতম শক্তি হিসেবে। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা ছিল এ সংগঠনের। পরে অবশ্য নেতিবাচক কারণেই শিরোনাম হয়েছে বেশি বার। ছাত্রদলে বয়সসীমা বেঁধে দেয়া নিয়ে শুরু থেকেই দেখা দেয় বিতর্ক। দলের ভেতরে একটি অংশ তা মেনে নিতে পারেনি। তারা এমনকি দলীয় কার্যালয়েও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটায়। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ বিএনপি’র শীর্ষ নেতৃত্বের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি একসময় শান্ত হয়। কাউন্সিল আর নির্বাচন ঘিরে দীর্ঘদিন পর চাঙ্গা হয়ে ওঠে ছাত্রদল। বিশেষকরে ২৭ বছর পর ভোটের ভিত্তিতে ছাত্রদলের নেতৃত্ব নির্বাচনের বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখছিলেন অনেক বিশ্লেষকও। কিন্তু হঠাৎই আদালতের নিষেধাজ্ঞায় স্থগিত হয়ে গেছে ছাত্রদলের কাউন্সিল। আচমকা হতাশা নেমে এসেছে ছাত্রদলে। সংগঠনটির সাবেক এক নেতার দায়ের করা মামলায় ঢাকার নিম্ন আদালত এ আদেশ দেয়।
ছাত্রলীগের বিষয়টি আরও বহুগুণ নাটকীয়। রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানীর নেতৃত্বে ছাত্রলীগের কমিটি দায়িত্ব পালন করে আসছিল দোর্দণ্ড প্রতাপের সঙ্গে। রাব্বানী ডাকসুতে জয়ী হয়ে জিএস নির্বাচিত হলেও শোভন ভিপি পদে হেরে গিয়েছিলেন কোটা আন্দোলনের নেতা নুরুল হক নুরের কাছে। কিন্তু ছাত্রলীগের দাপট এতে একটুও কমেনি। সভাপতি-সম্পাদকের বিরুদ্ধে সংগঠনের ভেতরে কানাঘুসা ছিল। বিশেষ করে বিভিন্ন শাখা কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে অভিযোগ উঠছিল বিস্তর। প্রকাশ্যে অবশ্য মুখ খুলেছেন কম লোকই। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের নেতৃত্বের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং কমিটি ভেঙে দেয়ার কথা বলেছেন এমন খবর চাউর হওয়ার পর দৃশ্যপট পাল্টাতে থাকে। একের পর এক প্রকাশ হতে থাকে অভিযোগ। জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্প বরাদ্দ ৪-৬ পারসেন্ট চাঁদা তারা দাবি করেছেন এমন খবরও সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। খোদ বিশ্ববিদ্যালয়টির ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম এমন দাবি করেছেন। যদিও গোলাম রাব্বানী সে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এক বিশ্ববিদ্যালয় নেতার অডিও কথোপকথন ভাইরাল হয়েছে। ৪০ লাখে নেতা আর ৬ মাসে দ্বিগুণ আয়ের তত্ত্ব রয়েছে যেখানে। অভিযোগে জেরবার ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতার গণভবনে প্রবেশের স্থায়ী পাস এরইমধ্যে বাতিল হয়েছে। তবুও তারা ক্ষমা চেয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছেন।
ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতা কি ক্ষমা পাবেন? দ্রুতই এ প্রশ্নের জবাব পাওয়া যাবে। ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির পক্ষে আওয়ামী লীগের কিছু নেতার সমর্থন রয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথাই যে শেষ কথা- এ নিয়ে কোনো সংশয় কারোরই নেই। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম এবং নানা গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ছাত্রলীগের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রয়েছে। যদিও ছাত্রদলের মতোই এ সংগঠনও স্বাধীন বাংলাদেশে বারবার নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের কারণে শিরোনাম হয়েছে। সে যাই হোক, হঠাৎ করেই বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতিতে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। তার মীমাংসা কীভাবে হয়- সেটাই এখন দেখার বিষয়।

No comments

Powered by Blogger.