মিয়ানমারে যেভাবে বদলে যাচ্ছে মিডিয়া by কিম স্যাঙমিন

‘মিয়ানমার মিডিয়া ইন ট্রান্সিশন: লিগাসিস, চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড চেঞ্জ’ নামের একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে দুই যৌথ সম্পাদক লিসা ব্রুটেন ও গায়ত্রী ভেনকিটেশরন বইটি, সাংবাদিকতা ও মিয়ানমারে মতপ্রকাশ সম্পর্কে কিছু কথা বললেন।
সম্পাদকেরা মিয়ানমারের মিডিয়া ও সংস্কৃতি অধ্যায়নের মানচিত্র প্রণয়ন করতে চাওয়ার কারণেই বইটি প্রকাশিত হয়েছে। দুই দশক ধরে মিয়ানমারের মিডিয়া নিয়ে লিখছেন ব্রুটেন। তিনি দেখেছেন, মিয়ানমারের সাংবাদিকতার বর্তমান ধারা নিয়ে অনেক বই থাকলেও সেগুলো পুরো অবস্থা পুরোপুরি বোঝার মতো নয়।
ব্রুটেন বলেন, ২০১০ সালে যা কিছু ঘটেছে, সব নিয়েই লোকজন লিখেছে। সাংবাদিকতার কোনো ইতিহাস নেই, নাগরিক আন্দোলনের কোনো ইতিহাস নেই। ফলে প্রেক্ষাপট সম্পর্কে কোনো ধারণা না নিয়েই অনেক নবাগত আসছে। তথ্য সংগ্রহের জন্য তাদের কিছু বই দরকার। কেবল ইতিহাসের ভিত্তির সংস্থানই নয়, ইতিহাস কিভাবে আজকের সংবাদিকতার রূপান্তর ঘটিয়েছে, তার ব্যবস্থা করাও প্রয়োজন।
বইটির জন্য বর্মি চিন্তাভাবনা সংগ্রহের জন্য সম্পাদকেরা অনেক সময় ব্যয় করেছেন। আবার শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, মিডিয়া উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ, নাগরিক সমাজের অ্যাক্টিভিস্ট, প্রশিক্ষক প্রভৃতি পেশার অনেকে এতে অবদান রেছেন, তারা তাদের অভিজ্ঞতা এখানে প্রকাশ করেছেন।
অপর যৌথ-সম্পাদক ভেনকিটেশরন বলেন, মিয়ানমারের মিডিয়াকে প্রামাণ্যভাবে তুলে ধরার জন্য আমরা নানা মত ও পথ, অভিজ্ঞতা এতে অন্তর্ভুক্ত করেছি। এই প্রকল্পে তাদের সম্পৃক্ত করতে পারাটা বিরাট ব্যাপার ছিল। আমরা এ জন্য গর্বিত।
দুই যৌথ-সম্পাদক: লিসা ব্রুটেন (বাঁয়ে) ও গায়ত্রী ভেনকিটেশরন
বইটি প্রকাশের জন্য তাদের অনেক সমস্যায় পড়তে হয়েছে। একটি বড় ধরনের সমস্যা ছিল মিয়ানমারের মিডিয়া নিয়ে একাডেমিক বিশ্লেষণ পাওয়া।
ব্রুটেন বলেন, খুব কম মিডিয়া স্কলারই মিয়ানমারকে ফোকাস করেন। সামরিক শাসনের সময় খুবই কম স্কলারকে দেশের মিডিয়া খাত নিয়ে কাজ করতে, লিখতে দেয়া হতো। ফলে একাডেমিক সাহিত্য বিরল হয়ে পড়েছিল।
ভেনকিটেশরনও উল্লেখ করেন, স্বাধীন মতপ্রকাশের ওপর বিধিনিষেধ ছিল আরেকটি চ্যালেঞ্জ।
তিনি বলেন, লোকজন অতীত নিয়ে কথা বলতে পারত বেশি। আবার অনেকে ভয়ে সাক্ষাতকার দিতে রাজি হতো না।
এই বইয়ে কয়েকটি অধ্যায় রয়েছে। এতে আইনি সংস্কার, কথা বলা ইত্যাদি নানা বিষয় স্থান পেয়েছে। সম্পাদকেরা বলেছেন, সব কিছুই পরস্পরের সাথে সম্পর্কিত। বইটির প্রতিটি অধ্যায় সামগ্রিক সত্তার একটি অংশবিশেষ।
ব্রুটেন বলেন, বিষয়টা শুধু স্বাধীনভাবে কথা বলার সাথেই সম্পৃক্ত নয়। এটা অনেক কিছুর সাথেই সম্পৃক্ত। আমরা বলতে পারি, সংস্কৃতিতে পরিবর্তন লোকজনকে আরো বেশি উন্মুক্ত হতে সহায়তা করে।
তিনি বলেন, তাদের বইটি সমাজের নানা শ্রেণির লোকজন পাঠ করবে। তারা মিয়ানমারের সাংবাদিকতা সম্পর্কে অনেক ধারণা লাভ করতে পারবে।
ভেনকিটেশরন বলেন, বইটির মাধ্যমে মিয়ানমারের সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জ ও সুযোগগুলো সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে।

স্থানীয় কন্ট্রিবিউটর ইন্ত থিরি থু বলেন, তিনিও এতে কিছু তথ্য দিয়েছেন। অন্ধকার থেকে আলোতে পরিক্রমণের চিত্র এতে তুলে ধরা হয়েছে।
কেন তিনি বইটির সাথে যুক্ত হলেন সে ব্যাখ্যাও তিনি দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ২০১৬ সালে আমি রাখাইন রাজ্যে গবেষণার সাথে যুক্ত ছিলাম। আমি তখনই এই বইটির সাথে জড়িয়ে পড়ি।
তিনি মিয়ানমারের সাংবাদিকতার অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, প্রায় প্রতি সপ্তাহেই আমার কোনো না কোনো বন্ধু আটক হয় সামাজিক মাধ্যমে তাদের ভূমিকার কারণে। আমার সমাজে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অবস্থা ভালো নয়।
তিনি মতপ্রকাশের স্বাধীনতার গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমি জন্মগ্রহণ করেছি ১৯৯০-এর দশকে। তখন ছিল সেন্সরশিপের সময়। ফলে আমরা বেড়ে ওঠার সময় আমাদের দেশে কী ঘটছে, সে সম্পর্কে তেমন কোনো তথ্য পেতাম না। আর তথ্যের অভাবে আমরা উদ্বেগে থাকতাম, ধর্ম, সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন কিছু নিয়ে ভুল বুঝতাম। আমি মনে করি, এ কারণে বর্তমানে মিয়ানমারে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ এটি মানুষের অধিকারের বিষয়। এই মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখার জন্য আমি আমি যা চিন্তা করি, যা অনুভব করি, তা বলে যাব।

No comments

Powered by Blogger.