বিচারাধীন মামলা ৩৫ লাখ ৮২ হাজার -আইন মন্ত্রী আনিসুল হক

দেশের বিভিন্ন আদালতে চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৩৫ লাখ ৮২ হাজার ৩৪৭টি। এরমধ্যে নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা এক লাখ সাড়ে ৬৪ হাজার। গত ৩০ জুন সংসদ অধিবেশনে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক এ তথ্য জানান। এ সংক্রান্ত পৃথক দু’টি লিখিত প্রশ্ন উত্থাপন করেন সরকারী দলের সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ ও দিদারুল আলম। আরেক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, দেশে বর্তমানে এক হাজার ১৪৮টি আইন প্রচলিত রয়েছে। লিখিত প্রশ্নোত্তরে মন্ত্রী বিচারাধীন মামলার জেলাওয়ারি তথ্য উপস্থাপন করেন। মন্ত্রীর দেয়া তথ্যানুযায়ী, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে সবচেয়ে বেশি মামলা ঢাকায়। রাজধানীর ৯টি ট্রাইব্যুনালে ১৩ হাজার ৭৭৭টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
এছাড়া নারায়ণগঞ্জে এক হাজার ৬৭৯, গাজীপুরে ৩ হাজার ৭৭৮, মানিকগঞ্জে ২ হাজার ৩২১, মুন্সীগঞ্জে এক হাজার ২১৫, নরসিংদীতে এক হাজার ৯৯২, কিশোরগঞ্জে দুটি ট্রাইব্যুনালে ২ হাজার ২৩৫, টাঙ্গাইলে ৩ হাজার ৬, ফরিদপুরে এক হাজার ৮৭২, রাজবাড়ীতে এক হাজার ১২৬, গোপালগঞ্জে এক হাজার ৭৯২, মাদারীপুরে এক হাজার ৪৮৩, শরীয়তপুরে ৩৫৯টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এছাড়া ময়মনসিংহে এক হাজার ৯৫৬, নেত্রকোনায় ২ হাজার ৬৭৩, জামালপুরে ২ হাজার ১২৮, শেরপুরে এক হাজার ৯০৮, চট্টগ্রামে (৭টি ট্রাইব্যুনাল) ১২ হাজার ৪৭৭, ফেনীতে এক হাজার ৩৯২, নোয়াখালীতে (দুটি ট্রাইব্যুনাল) ৬ হাজার ৬৫৩, লক্ষ্মীপুরে এক হাজার ৭২৮, কক্সবাজারে ৭ হাজার ৯৫৮, কুমিলায় ৪ হাজার ১৬৯, চাঁদপুরে এক হাজার ৩১০, ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় ৪ হাজার ৮৬৯, রাঙ্গামাটিতে ৫২৮, বান্দারবানে ৬২৪, খাগড়াছড়িতে ৩৬২, রাজশাহীতে এক হাজার ৩২০, নওগাঁয় ২ হাজার ৮৮০, জয়পুরহাটে ৬০৭, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৪২৯, বগুড়ায় ২ হাজার ৭২৯, সিরাজগঞ্জে ৪ হাজার ৪০৮, পাবনায় এক হাজার ৭৮১, নাটোরে এক হাজার ৬২৩ এবং খুলনায় ৪ হাজার ৫৩৭টি মামলা আছে। বাগেরহাটে ৩ হাজার ১৭৮, যশোরে এক হাজার ৫৫৫, সাতক্ষীরায় এক হাজার ৬২২, ঝিনাইদহে এক হাজার ৩১৯, চুয়াডাঙ্গায় ৫৩৮, মেহেরপুরে ৬০৩, কুষ্টিয়ায় ৪১০, মাগুরায় এক হাজার ৩২, নড়াইলে ৪৭৪, বরিশালে এক হাজার ৯৮০, ঝালকাঠিতে ৪৫৪, পিরোজপুরে ৭১৯, পটুয়াখালীতে এক হাজার ৮০২, ভোলায় ৫ হাজার ৩, বরগুনায় ২ হাজার ৬২৩, সিলেটে ২ হাজার ৫৫, মৌলভীবাজারে ২ হাজার ৬৪১, সুনামগঞ্জে এক হাজার ৬৫২, হবিগঞ্জে ৫ হাজার ৬৬৯, রংপুরে ৬ হাজার ৮০, দিনাজপুরে ২ হাজার ৯৩৬, লালমনিরহাটে এক হাজার ৩৯৪, নীলফামারীতে ৩ হাজার ৭৯৭, পঞ্চগড়ে ৪৭৪, ঠাকুরগাঁওয়ে এক হাজার ৫৮৮, গাইবান্ধায় ৩ হাজার ২৩৪, কুড়িগ্রামে এক হাজার ৯৩৫টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। প্রশ্নোত্তর পর্বে মামলার জট নিরসনে গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে লিখিত প্রশ্ন করেন সরকার দলীয় সদস্য আবুল কালাম আজাদ, শফিকুল ইসলাম শিমুল, নজরুল ইসলাম বাবু, আনোয়ারুল আবেদীন খান, আদিবা আনজুম মিতা, নূর মোহাম্মদ ও নাজমা আক্তার। জবাবে মন্ত্রী জানান, মানুষের হয়রানি এড়াতে ও মামলার জট কমাতে ইতিমধ্যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। নতুন মামলার পাশাপাশি পুরানো মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির কাজ শুরু হয়েছে। এমনকি দেওয়ানী মামলাগুলো নিষ্পত্তির জন্যও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পুরানো মামলাগুলো আগে নিষ্পত্তির জন্য বলা হয়েছে। এজন্য আদালতের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। আইন মন্ত্রী মামলা জটের কারণ তুলে ধরে জানান, মামলা দ্রুত বিচার ও নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে অন্যতম একটি প্রতিবন্ধকতা হলো এজলাস সংকট। এজলাস স্বল্পতা দূর করে সর্বোচ্চ কর্মঘন্টা ব্যবহার করে বিচারকাজে গতিশীলতা আনতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে ৩৮টি জেলায় নতুন ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। এরমধ্যে ২৪টি জেলায় নির্মাণ কাজ শেষে নতুন ভবনে বিচারকাজ শুরু হয়েছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে জেলা জজ আদালতের এজলাস সংকট নিরসনের জন্য ‘২৮টি জেলায় আনুষঙ্গিক সুবিধাদিসহ জেলা জজ আদালত ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সমপ্রসারণ’ শীর্ষক প্রকল্প ইতিমধ্যে ২৭টি জেলায় বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তিনি জানান, সরকার নারী ও শিশু নির্যাতন অপরাধ দমন সংক্রান্ত মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য সারা দেশে আরো ৪১টি ট্রাইব্যুনাল ও ৭টি সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল সৃজন করেছে। এছাড়া আদালত সমূহে সহায়ক কর্মচারী নিয়োগের প্রক্রিয়াও চলমান রয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের শাস্তি: সরকারি দলের সদস্য আবুল কালাম আজাদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পলাতক বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এ বিষয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটিতে আইন বিচার ও সংসদ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্মিলিতভাবে কাজ করছে। তিনি জানান, পলাতক খুনি নুর চৌধুরী কীভাবে কানাডায় বসবাস করছেন (লিগ্যাল স্ট্যাটাস) এ সম্পর্কে তথ্য দিতে কানাডা সরকারকে বাধ্য করতে ফেডারেল কোর্ট অব জাস্টিস এর আদালতে আবেদন করা হয়েছে। পলাতক আসামি রাশেদ চৌধুরীকে আমেরিকা থেকে ফিরিয়ে আনতে কূটনৈতিক ও আইনি কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। আইনগত বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সেখানে আইনজীবী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। অন্যান্য পলাতক আসামিদের ফিরিয়ে আনতে টাক্সফোর্স কাজ করছে। পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড এলার্ট জারি করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.