লিবিয়ায় অভিবাসীদের আশ্রয়শিবিরে বিমান হামলায় নিহত কমপক্ষে ৪০

লিবিয়ায় অভিবাসীদের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে বা বন্দিশালায় বিমান হামলা হয়েছে। এতে কমপক্ষে ৪০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৮০ জন। তাদের অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ফলে নিহতের সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা রযেছে। নিহতদের বেশির ভাগই আফ্রিকান অভিবাসী। বাকিরা কোন দেশের তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায় নি। মঙ্গলবার রাজধানী ত্রিপোলির কাছে তাজোরা এলাকায় ওই হামলা চালানো হয়।
এ জন্য স্বঘোষিত লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মিকে (এলএনএ) দায়ী করেছে জাতিসংঘ সমর্থিত গভর্নমেন্ট অব ন্যাশনাল অ্যাকর্ড (জিএনএন)। এ সরকারের নেতৃত্বে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ফায়েজ আল সেরা। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।
এতে বলা হয়, আকাশ পথে চালানো ওই হামলায় আশ্রয়শিবিরে বিস্ফোরণ হয় বিকট শব্দে। সাম্প্রতিক সময়ে অবৈধ পথে ইউরোপ যাওয়ার জন্য অভিবাসীদের কাছে লিবিয়া হযে উঠেছে প্রাণকেন্দ্র। ইউরোপে পাঠানোর কথা বলে অনেক বিদেশীকে নিয়ে লিবিয়ায় অবর্ণনীয় অবস্থায় আটকে রাখে দালালচক্র। তারপর তাদেরকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঠেলে দেয় উত্তাল সমুদ্রে। অনেক বাংলাদেশী সহ অভিবাসীরা এই দেশ থেকে ইউরোপের উদ্দেশ্যে সমুদ্রপথে যাত্রা করে মারা গেছেন। সম্প্রতি এমন দুটি ঘটনা ঘটেছে তিউনিশিয়া উপকূলের কাছে। ২০১১ সালে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে নিহত হন লিবিয়ার দীর্ঘ সময়ের শাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফি। তখন থেকেই এ দেশটিতে সহিংসতা ও বিভক্তি চরম আকার ধারণ করেছে।
মঙ্গলবারের হামলা সম্পর্কে জরুরি সেবা বিষয়ক মুখপাত্র ওসমান আলী বলেছেন, একটি আশ্রয়স্থলে ১২০ জন অভিবাসী অবস্থান করছিলেন। সরাসরি সেখানে ওই হামলা হয়েছে। তার হিসাবে মৃতের সংখ্যা আরো বাড়বে। কারণ, প্রাথমিকভাবে যাদের মারা যাওয়ার কথা বলা হয়েছে, এর বাইরেও থাকতে পারে মৃতদেহ। এক বিবৃতিতে জিএনএ এ হামলাকে পূর্ব পরিকল্পিত বলে আখ্যায়িত করেছে। তারা একে নৃশংস অপরাধ আখ্যায়িত করে এর নিন্দা জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত জিএনএ সরকারের বিরুদ্ধে ওই এলাকায় লড়াই করছে শক্তিধর খলিফা হাফতারের নেতৃত্বাধীন এলএনএ। মঙ্গলবার হামলার আগের দিন তারা ঘোষণা দেয় যে, ত্রিপোলির টার্গেটে তারা বিমান থেকে ভারি হামলা চালাবে। কিন্তু এর এক মুখপাত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সের কাছে ওই আশ্রয়শিবিরে হামলা চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছে। অভিবাসীদের আশ্রয়কেন্দ্রে বিমান হামলার খবরকে চরম উদ্বেগের বলে আখ্যায়িত করেছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক এজেন্সি।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছিলেন ডা. খালিদ বিন আত্তিয়া। তিনি বলেছেন, সর্বত্র মানুষ পড়ে ছিলেন। পুরো আশ্রয়শিবিরটি ধ্বংস হয়ে গেছে। মানুষজন আর্তচিৎকার করছিলেন। মানসিকভাবে এক ভয়াবহ পরিস্থিতিতে তারা আর্তনাদ করছিলেন। সে এক ভয়াবহ দৃশ্য। 
ইউরোপ যাওয়ার জন্য যে হাজার হাজার অভিবাসী লিবিয়া যান তাদেরকে আটক করে সরকার পরিচালিত বন্দিশালায় রাখা হয়। এটিও ছিল তেমন একটি। স্থানটি ছিল যুদ্ধপ্রবণ এলাকায়। এসব বন্দিশিবির বা আশ্রয় শিবিরগুলোর নাজুক অবস্থার সমালোচনা করেছে মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপগুলো।

No comments

Powered by Blogger.