আদালতে ডিআইজি মিজানের এক ঘণ্টা: কারাগারে প্রেরণ

সকাল দশটা। আদালতপাড়ায় কড়া সতর্কতা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অপেক্ষায়। এমন প্রস্তুতিতে কৌতূহলী মানুষের জিজ্ঞাসা কে  আসবেন? আইনজিবীদের কেউ কেউ জিজ্ঞেস করছিলেন আসামি কে? তখন পুলিশ সদস্যরা মুচকি হেসে উত্তর দিচ্ছিলেন, ‘আসামি ডিআইজি স্যার। পুলিশের নিরাপত্তা নিয়ে আদালতে হাজির ডিআইজি মিজান। সাদা একটি জিপ গাড়ি থেকে তিনি নামেন। এর পরপরই নিজের পকেট  থেকে মোবাইল ফোন বের করে আইনজীবীকে ফোন দেন। কিছুক্ষণ পর আবার ফোন বের করে কথা বলেন।
পরে পুলিশের বেস্টনির মধ্য দিয়ে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় হয়, মহানগর  দায়রা জজ আদালতে।
বেলা পৌনে এগারোটার দিকে আদালতের কক্ষে ঢুকেন। আদালত কক্ষের ডান দিকের সারির শেষ বেঞ্চে বসেন তিনি। সেখানে বসেও তিনি এগারোটা ছয় মিনিটে ফোন বের করে কথা বলেন।  তার পেছনে ছিলেন দশজন পুলিশ সদস্য। পুলিশের এমন প্রোটোকল দেখে, আদালতের ভিতরে অনেক আইনজিবীই উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তারা উচ্চস্বরে বলতে থাকেন, আসামিতো আসামিই তাহলে তাকে কেন এতো প্রটোকল দেয়া হবে? এতো প্রটোকল দেয়ার কি আছে? পুলিশের বরখাস্ত হওয়া ডিআইজি মিজান প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা বসা ছিলেন পিছনের ওই  বেঞ্চে। এই ফাঁকে তার সঙ্গে কথা বলছিলেন পরিচিত অনেক আইনজিবী। ঠিক এগারোটা চব্বিশ মিনিটে তাকে তোলা হয় কাঠগড়ায়। এরপর শুরু হয় জামিন শুনানি।  সেখানে প্রায় ৫৪ মিনিট  দাঁড়িয়ে থাকতে হয় তাকে। কাঠগড়ায় দাঁড়ানোর সময়টা তিনি কখনো ছিলেন হাসিমুখে, আবার কখনও নিরব।
জামিন শুনানিতে আসামিপক্ষের আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী বলেন, দুদকের পক্ষ  থেকে  যে অভিযোগ করা হয়েছে তা মামলাটি প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট নয়। মানি লন্ডারিং, ঘুষ  দেয়া ও সম্পদ হিসাব বিবরণী বিষয়ে আসামির প্রতি অভিযোগ সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি। তিনি বলেন, মিজানুর রহমান সম্মানিত ব্যক্তি।  দেশে বিদেশে তার অনেক প্রশংসা রয়েছে। আসামি তার সম্পদের হিসাব বিবরণী দুদকে দাখিল করেছেন। এড়াছাও তিনি বয়স্ক একজন মানুষ, শারীরিক ভাবেও অসুস্থ। তার বিরুদ্ধে  যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা জামিনযোগ্য।
তার জামিনের বিরোধিতা করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল। তিনি বলেন, দুদক যখন  যে এজাহারটি দায়ের করে তা শতভাগ তদন্ত করেই করে। কমিশন অভিযোগের সত্যতা  পেয়েই এ এজাহার দায়ের করেছে। আসামির চাকরি জীবনে কত টাকা আয় করতে পারবেন তা কমিশনের জানা রয়েছে। দুদকের দায়ের করা মামলার সব ক’টি ধারা জামিন অযোগ্য উল্লেখ করে তিনি তার জামিনের বিরোধিতা করেন। পরে শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েস অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের মামলায় জামিন নামঞ্জুর করে ডিআইজি মিজানুর রহমানকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এর  আগে সোমবার হাইকোর্টে আগাম জামিনের জন্য গেলে ডিআইজি মিজানকে পুলিশের হাতে তুলে দেন হাইকোর্টের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এসএম কুদ্দুস জামানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ। গ্রেপ্তারের পর তাকে শাহবাগ থানায় নেয়া হয়।
উল্লেখ্য, ৩ কোটি ৭ লাখ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন এবং ৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মিজানুর রহমানের অবৈধ সম্পদের তদন্ত শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তবে এই তদন্ত করতে গিয়ে দুদকের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন বলে প্রকাশ্যে অভিযোগ করেন ডিআইজি মিজানুর রহমান।
১৯শে জুন আদালত এক আদেশে মিজানুর রহমানের স্থাবর সম্পদ ক্রোক এবং ব্যাংক হিসাবের লেনদেন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন। গত ২৪শে জুন তিন  কোটি ২৮ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।

No comments

Powered by Blogger.