লন্ডন হাইকোর্টে স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা দুবাইয়ের শাসকের

পালিয়ে লন্ডনে আত্মগোপনে থাকা স্ত্রী প্রিন্সেস হায়া বিনতে আল হুসেইনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন দুবাইয়ের শাসক শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ মাকতুম। প্রিন্সেস হায়া পালিয়ে যাওয়ার সময় সঙ্গে নিয়ে গিয়েছেন ছেলে জায়েদ (৭) ও মেয়ে আল জলিলাকে (১১)। এই সন্তানদের ফেরত চেয়ে মামলা করেছেন বিন রশিদ। এ নিয়ে শুনানির দিন ধার্য হয়েছে ৩০ শে জুলাই। ওদিকে এরই মধ্যে দুবাইয়ের বিলিয়নিয়ার বিন রশিদের স্ত্রী পালিয়ে দেশ ছাড়া নিয়ে সারাবিশ্বের সংবাদ মাধ্যমে নানা রকম তথ্য প্রকাশ হচ্ছে। গুরুত্ব দিয়ে এ রিপোর্ট প্রকাশ করছে মিডিয়াগুলো।
বৃটেনের একটি ট্যাবলয়েড পত্রিকার অনলাইন সংস্করণ বলছে, অপ্রতাশিতভাবে নিজের সন্তানদের ফেরত চেয়ে আইনি লড়াইয়ে নেমেছেন দুবাইয়ের শাসক। তার পলাতক স্ত্রীর বিরুদ্ধে এ জন্য তিনি লন্ডনের হাইকোর্টের আশ্রয় নিচ্ছেন।
তার এমন উদ্যোগে এটা নিশ্চিত করে যে, এ দম্পতির বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। এ জন্যই হাইকোর্ট শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছে। প্রিন্সেস হায়া বর্তমানে বৃটেনের কেনসিংটনে ৮ কোটি ৫০ লাখ পাউন্ডের একটি বাসায় অবস্থান করছেন। সেই ভবনটির ছবি ও কোন সড়কে তাও প্রকাশ করা হয়েছে। তবে তার হোল্ডিং নম্বর জানানো হয় নি। এটা বলা হয়েছে, বাড়িটি কেনসিংটন রাজপ্রাসাদের কাছেই।
রিপোর্টে বলা হচ্ছে, বিন রশিদ বিলিয়ানিয়ার। তিনি ঘোড়াদৌড়ে ব্যবহৃত ঘোড়ার মালিক। তার স্ত্রী প্রিন্সেস হায়ার বিরুদ্ধে হাইকোর্টের ফ্যামিলি ডিভিশনে আইনগত লড়াই শুরু করেছেন। এ লড়াইয়ে ৬৮ বছর বয়স্ক এই শাসকের আইনজীবী দাবি করেছেন যে, প্রিন্সেস হায়ার সঙ্গে যে দুটি সন্তান রয়েছে, তাদেরকে দুবাইয়ে ফেরত পাঠাতে হবে। আদালতে এই কর্মকান্ড এটা নিশ্চিত করে যে, ৪৫ বছর বয়সী প্রিন্সেস হায়া তার স্বামীকে ফেলে গেছেন। সঙ্গে নিয়ে গিয়েছেন দুই সন্তানকে। কিন্তু এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আইনে আটকে যেতে পারেন হায়া। কারণ, হেগ কনভেনশনের অধীনে বিভিন্ন দেশ এই মর্মে একমত হয়েছে যে, যদি কোনো শিশুকে অপহরণ করা হয়েছে বলে সন্দেহ করা হয় তাহলে তাকে ফেরত পাঠানো হবে। যদি আদালত নিশ্চিত হয় যে, প্রিন্সেস হায়া তার সঙ্গে যে দুটি সন্তানকে নিয়ে গিয়েছেন তাদেরকে ‘অপহরণ’ করা হয়েছে, তাহলে তাদেরকে ফেরত পাঠানো হতে পারে। ওই দুটি সন্তানের বয়স ৭ ও ১১ বছর। তারা আদালতে কি বলে সেটাও দেখার বিষয়।
জায়েদ ও জলিলা নামের এই দুই সন্তানকে ফেরত চেয়ে দুবাইয়ের আদালতে ডকুমেন্ট জমা দেয়া হয়েছে এরই মধ্যে। সেখান থেকে মামলাটি স্থানান্তর করা হয়েছে লন্ডনে হাইকোর্টে। এখন সেই লড়াইয়ে স্বামীর বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে প্রিন্সেস হায়াকে। রিপোর্টে বলা হচ্ছে, নতুন জীবনের সন্ধানে তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে পালানোর সময় সঙ্গে নিয়ে গিয়েছেন ৩ কোটি ১০ লাখ পাউন্ড। কেনসিংটন রাজপ্রাসাদের কাছে ৮ কোটি ৫০ লাখ মূল্যে ২০১৭ সালে ভারতের বিলিয়নিয়ার লক্ষ্মী মিত্তালের কাছ থেকে একটি বাড়ি কিনেছিলেন তিনি। বাড়িটি লন্ডনের অত্যন্ত অভিজাত এলাকায়।  বাড়িটি কেনার পরই তিনি এর নবায়ন করার অনুমতি চান। সেখানে তিনি একটি পাথরের বাজপাখি বসাতে চান। এটি হলো তার মূল দেশ জর্ডানের একটি প্রতীক।
মিডিয়ার রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্রথমে প্রিন্সেস হায়া দুবাই থেকে চলে যান জার্মানিতে। সেখানে তিনি রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন। এরপর গিয়েছেন লন্ডনে। তবে লন্ডনের গার্ডিয়ান বলছে, প্রিন্সেস হায়াও লন্ডনে আইনী লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ওদিকে স্ত্রীর পালিয়ে যাওয়া নিয়ে শেখ মোহাম্মদ বেশ কিছু কবিতা লিখেছেন। একটিতে তিনি লিখেছেন, আমাদের এমন একটি রোগ আছে, যার কোনো প্রতিষেধক নেই। আরেকটিতে লিখেছেন, কোনো বিশেষজ্ঞের কাছে এমন কোনো হার্ব নেই যা এর প্রতিকার করতে পারে। আমি বার বার তোমার সঙ্গে সাক্ষাত করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.